Dhaka ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রমজানের আগে কেন নির্বাচন চান, ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন আগামী রমজান মাসের আগে নির্বাচন হওয়ার দরকার বলে।

সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় শেষে আজ বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জামায়াত আমির।

রমজানের আগে নির্বাচন চাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনটা “পিআর” ভিত্তিতে করতে চাই। কেন চাই সেটাও আমরা বলেছি। তারা জানতে চেয়েছে যে, আমরা কখন এই নির্বাচনটা অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, আমাদের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি এই বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। আমরা তার কমিটমেন্ট ঠিক আছে কি না দেখতে চাই। আর আমাদের মত হলো, এটা রমজানের আগেই শেষ হওয়া দরকার। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, ঝড়-ঝপটা-বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার নির্বাচন অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সেই আশঙ্কা আসার আগেই নির্বাচন হওয়া দরকার।

মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এটা তাদের (সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দল) দ্বিতীয় মিটিং। এর আগে তারা বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বসেছিলেন। পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে বসেন। তাদের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা কথা হয়েছে।

তিনি বলেন,তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা জানতে চেয়েছে। তারা আগামী নির্বাচন কখন কীভাবে হবে এটা জানতে চেয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে যে, সবগুলো দল কি চাচ্ছে, আমরা কী চাচ্ছি। আমরা আগামীতে যদি দায়িত্ব পাই, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক এবং পররাষ্ট্রনীতি কী হবে। তারা আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে এবং সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা এ সমস্ত বিষয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি।

জামায়াত আমির বলেন,তারা নারী অধিকার ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা সব বিষয়ে মতবিনিময় করেছি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যে, আমাদের দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, এ সময় আমেরিকার পক্ষ থেকে ৩৭ শতাংশ যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এটা যেন তারা পুনর্বিবেচনা করে। আমাদের এই অনুরোধ পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেছি। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে একই অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি যে, এইটুকু উপলব্ধি করে তারা এতটুকু সহযোগিতা করবে। আমরা কথা দিয়েছি যে, আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি প্রতিশ্রতিবদ্ধ। আমরা দলের ভিতরে গণতন্ত্র চর্চা করি এবং আমরা দেশে একই গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। এজন্য আমাদের যা করণীয় তা করব।

জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন,উদাহরণ হিসেবে আমরা বলেছি যে, প্রত্যেকটি গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি এবং কম হোক বেশি হোক প্রত্যেক সংসদে আমাদের সদস্য ছিল। এমনকি এরশাদের সময় যখন নির্বাচন মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল, তখন অধ্যাপক গোলাম আযম তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রস্তাবের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো- আওয়ামী লীগ এসে দলীয় স্বার্থে এটাকে সংবিধান থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। এখন সারা জাতি এটা চাচ্ছে, এবং আশাকরি এটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন,আমরা বলেছি, এখনো অনেকে হাসপাতালে পড়ে আছে। এখনো শহিদের মায়েরা, সন্তানেরা কান্নাকাটি করে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিচার অবশ্যই হতে হবে, তবে আমরা চাচ্ছি বিচারটা ন্যায়বিচার হোক।

আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

উলিপুরে গভীর রাতে রড ছাড়াই আরসিসি রাস্তা ঢালাই জনরোষে ঠিকাদার ও লেবাররা পালিয়ে যায়

রমজানের আগে কেন নির্বাচন চান, ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াত আমির

জন দেখেছেন : ০৭:১৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন আগামী রমজান মাসের আগে নির্বাচন হওয়ার দরকার বলে।

সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় শেষে আজ বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জামায়াত আমির।

রমজানের আগে নির্বাচন চাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনটা “পিআর” ভিত্তিতে করতে চাই। কেন চাই সেটাও আমরা বলেছি। তারা জানতে চেয়েছে যে, আমরা কখন এই নির্বাচনটা অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, আমাদের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি এই বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। আমরা তার কমিটমেন্ট ঠিক আছে কি না দেখতে চাই। আর আমাদের মত হলো, এটা রমজানের আগেই শেষ হওয়া দরকার। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, ঝড়-ঝপটা-বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার নির্বাচন অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সেই আশঙ্কা আসার আগেই নির্বাচন হওয়া দরকার।

মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এটা তাদের (সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দল) দ্বিতীয় মিটিং। এর আগে তারা বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বসেছিলেন। পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে বসেন। তাদের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা কথা হয়েছে।

তিনি বলেন,তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা জানতে চেয়েছে। তারা আগামী নির্বাচন কখন কীভাবে হবে এটা জানতে চেয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে যে, সবগুলো দল কি চাচ্ছে, আমরা কী চাচ্ছি। আমরা আগামীতে যদি দায়িত্ব পাই, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক এবং পররাষ্ট্রনীতি কী হবে। তারা আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে এবং সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা এ সমস্ত বিষয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি।

জামায়াত আমির বলেন,তারা নারী অধিকার ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা সব বিষয়ে মতবিনিময় করেছি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যে, আমাদের দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, এ সময় আমেরিকার পক্ষ থেকে ৩৭ শতাংশ যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এটা যেন তারা পুনর্বিবেচনা করে। আমাদের এই অনুরোধ পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেছি। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে একই অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি যে, এইটুকু উপলব্ধি করে তারা এতটুকু সহযোগিতা করবে। আমরা কথা দিয়েছি যে, আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি প্রতিশ্রতিবদ্ধ। আমরা দলের ভিতরে গণতন্ত্র চর্চা করি এবং আমরা দেশে একই গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। এজন্য আমাদের যা করণীয় তা করব।

জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন,উদাহরণ হিসেবে আমরা বলেছি যে, প্রত্যেকটি গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি এবং কম হোক বেশি হোক প্রত্যেক সংসদে আমাদের সদস্য ছিল। এমনকি এরশাদের সময় যখন নির্বাচন মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল, তখন অধ্যাপক গোলাম আযম তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রস্তাবের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো- আওয়ামী লীগ এসে দলীয় স্বার্থে এটাকে সংবিধান থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। এখন সারা জাতি এটা চাচ্ছে, এবং আশাকরি এটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন,আমরা বলেছি, এখনো অনেকে হাসপাতালে পড়ে আছে। এখনো শহিদের মায়েরা, সন্তানেরা কান্নাকাটি করে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিচার অবশ্যই হতে হবে, তবে আমরা চাচ্ছি বিচারটা ন্যায়বিচার হোক।

আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।