গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের মানসিক নির্যাতন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েই এক পোশাক শ্রমিকের আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পোশাক শ্রমিকের নাম ইদ্রিস আলী (২৩)। তার বাড়ি নীলফামারী জেলায়।
এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইদ্রিস আলী দীর্ঘদিন আগে জীবিকার খোঁজে নীলফামারী জেলা থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসেন। পরে তিনি উপজেলার মৌচাক নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে স্থানীয় মন্ডল গ্রুপের মন্ট্রিমস কারখানার কার্টুন সেকশনে কাজ করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি ওই কর্তৃপক্ষের মানসিক নির্যাতন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল খেয়ে ফেলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে সফিপুর তানহা হাসপাতালে নেওয়া হলেও আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার পর থেকে কারখানার ছুটি ঘোষণা করা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক একটি ফেসবুকে স্টাটাসে তিনি লেখেন, মন্ডল গ্রুপ মন্টিন্স লিমিটেড এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান করে। আমাকে করেনা কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।
নিহতের স্বজন ও কারখানা শ্রমিকদের অভিযোগ, ইদ্রিস এক বছর হল ডেইলি বেসিকে কাজ করতেন। অনেককে পার্মানেন্ট করা হলেও তাকে করা হয়নি। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ তাকে বকাঝকা করেছেন। পরে তিনি কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার মুঠোফোনে জানান, আমার স্বামী মারা গেছেন। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবেন না তিনি। নিহতের বোন জামাই বাবু জানান, ইদ্রিস অনেকদিন হলো ওই কারখানায় কাজ করে। ওর সাথের সহকর্মীদের চাকরিতে পার্মানেন্ট করা হলেও কর্তৃপক্ষ ওকে পার্মানেন্ট করেনি। অসুস্থ থাকার কারণে ৬ টায় কারখানায় হতে বের হয়। এজন্য পরের দিন ম্যানেজমেন্ট হারুন ও কামরুল তাকে রুমে বকাঝকা করে। পরে দুঃখ যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কারখানার এডমিন ম্যানেজার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আব্দুল সেলিম জানান, কারখানা থেকে ফোন দিয়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি জানানো হয়েছে। খবর পেয়ে ওই কারখানাটি পরিদর্শনে করেছি। তবে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।