Dhaka ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বড়াইবাড়ি দিবসকে জাতীয় স্বীকৃতির দাবী এলাকাবাসির ও সাবেক সেনাদের

‘ওয়াহিদ, কাদের, মাহফুজ শহীদদের-আমরা তোমায় ভুলি নাই’ এই শ্লোগানের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ এপ্রিল শুক্রবার যথাযথ মর্যাদায় বড়াইবাড়ী দিবস পালিত হয়। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে সংঘর্ষেও বর্ষপূর্তি আজ ২৫ বছর। গতকাল  (১৮ এপ্রিল) শুক্রবার এলাকা বাসির উদ্দোগে সকাল ১০টায় বড়াইবাড়ী সীমান্তে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, র‌্যালি, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন। এসময় বক্তব্য রাখেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতিক (অব:) কর্ণেল মো. জয়নাল আবেদীন (অব:), কর্ণেল মো. জাকারিয়া হোসেন (অব:), লে: লেখক সাংবাদিক আবু রুশদ (অব:), মেজর মো. জামাল হায়দার (অব:), মেজর মো.আব্দুর রব (অব:), বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.তসলিম উদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ¦ মো. আজিজুর রহমান, রাজিবপুর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মো. মোখলেছুর রহমান, প্রধান শিক্ষক মো.আহসান হাবিব সাদা, মো. রেজাউল ইসলাম রিজু, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, সেনাবাহিনী ও বিডিআর এর ৪০ জন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাগণ, সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও অত্র এলাকার সহ¯্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি কর্ণেল মো.জয়নাল আবেদীন (অব:) বলেন, দেশপ্রমিক বিজিবির ৮ জন সদস্য এলাকাবাসির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পরাজয়বরণ  করতে  বাধ্য করেছিল। সেই সাহসিক ভমিকা ও ঐক্যবদ্ধতা ধরে রেখে সীমান্তে নজর রাখতে হবে। যাতে কেউ অন্যায় ভাবে চোখ তুলে তাকাতে না পারে।

লে: লেখক সাংবাদিক আবু রুশদ (অব:) বলেন, ষোল বছর একটা সরকার ছিলো তখন সেনাবাহিনীদের মূল্যায়ন করতো না এবং আমার অফিসারদের কোন দিবস তেমন ভাবে পালন করতে দিতো না। তারা ভারত কর্তৃক নতোজানু ছিলো। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাদিয়ে আমাদের চাপ দিতো তাই এই বড়াইবাড়ি দিবসটিতে আসতে পারি নাই। এখন সেই পরিবেশ নেই তাই আমরা অংশ গ্রহন করেছি। ভবিষ্যতে এই দিবসটিকে আমরা জাকজমক ভাবে পালন করবো।

এসময় বক্তারা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলেন, বড়াইবাড়ি দিবসকে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি, আহত ও নিহত পরিবারদের বীরের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।

প্রঙ্গগত ২০০১ সালে ১৮ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামে প্রবেশ করে নরকীয় তান্ডব চালায়। এতে অকুতোভয় নিয়ে বাংলাদেশ  বিডিআর ও গ্রামবাসীরা একত্র মিলিত হয়ে বিএসএফদের প্রতিরোধের এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এতে নিহত হয় বাংলাদেশের তিন বীর বিডিআর জোয়ান। এ সময় ভারতীয় পক্ষে নিহত হয় ১৬ বিএসএফ সদস্য। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটিকে পালন করা হয় ‘বড়াইবাড়ী দিবস’ হিসেবে। এই দিবসটি সরকারি ভাবে স্বকৃতি না দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসির মধ্যে। তবে বক্তারা দ্রুত দিবসটিকে জাতীয় স্কৃতি দেওয়ার আশ^াস দেন।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোররাতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী সীমান্তে অনধিকার প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল বিডিআর-জনতা। আর সেই প্রতিরোধে বিএসএফ এর ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা। শহীদ হয়েছিল ৩৩ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের সিপাহী আঃ কাদের। এছাড়া আহত হয় বিডিআর এর হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ন্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদুর নবী । বিডিআর গ্রামবাসীর পাল্টা আক্রমনে বিএসএফ’র ১৬ জোয়ান নিহত হয়। বিএসএফ এর তান্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯ টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমান ছিল ৭২ লাখ টাকা। কাটেনি সীমান্তের আতংক। গ্রামের মানুষ এখনও দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আতকে উঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়াইবাড়ি দিবসকে জাতীয় স্বীকৃতির দাবী এলাকাবাসির ও সাবেক সেনাদের

Update Time : ০৯:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

‘ওয়াহিদ, কাদের, মাহফুজ শহীদদের-আমরা তোমায় ভুলি নাই’ এই শ্লোগানের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ এপ্রিল শুক্রবার যথাযথ মর্যাদায় বড়াইবাড়ী দিবস পালিত হয়। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে সংঘর্ষেও বর্ষপূর্তি আজ ২৫ বছর। গতকাল  (১৮ এপ্রিল) শুক্রবার এলাকা বাসির উদ্দোগে সকাল ১০টায় বড়াইবাড়ী সীমান্তে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, র‌্যালি, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন। এসময় বক্তব্য রাখেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতিক (অব:) কর্ণেল মো. জয়নাল আবেদীন (অব:), কর্ণেল মো. জাকারিয়া হোসেন (অব:), লে: লেখক সাংবাদিক আবু রুশদ (অব:), মেজর মো. জামাল হায়দার (অব:), মেজর মো.আব্দুর রব (অব:), বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.তসলিম উদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ¦ মো. আজিজুর রহমান, রাজিবপুর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মো. মোখলেছুর রহমান, প্রধান শিক্ষক মো.আহসান হাবিব সাদা, মো. রেজাউল ইসলাম রিজু, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, সেনাবাহিনী ও বিডিআর এর ৪০ জন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাগণ, সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও অত্র এলাকার সহ¯্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি কর্ণেল মো.জয়নাল আবেদীন (অব:) বলেন, দেশপ্রমিক বিজিবির ৮ জন সদস্য এলাকাবাসির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পরাজয়বরণ  করতে  বাধ্য করেছিল। সেই সাহসিক ভমিকা ও ঐক্যবদ্ধতা ধরে রেখে সীমান্তে নজর রাখতে হবে। যাতে কেউ অন্যায় ভাবে চোখ তুলে তাকাতে না পারে।

লে: লেখক সাংবাদিক আবু রুশদ (অব:) বলেন, ষোল বছর একটা সরকার ছিলো তখন সেনাবাহিনীদের মূল্যায়ন করতো না এবং আমার অফিসারদের কোন দিবস তেমন ভাবে পালন করতে দিতো না। তারা ভারত কর্তৃক নতোজানু ছিলো। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাদিয়ে আমাদের চাপ দিতো তাই এই বড়াইবাড়ি দিবসটিতে আসতে পারি নাই। এখন সেই পরিবেশ নেই তাই আমরা অংশ গ্রহন করেছি। ভবিষ্যতে এই দিবসটিকে আমরা জাকজমক ভাবে পালন করবো।

এসময় বক্তারা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলেন, বড়াইবাড়ি দিবসকে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি, আহত ও নিহত পরিবারদের বীরের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।

প্রঙ্গগত ২০০১ সালে ১৮ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামে প্রবেশ করে নরকীয় তান্ডব চালায়। এতে অকুতোভয় নিয়ে বাংলাদেশ  বিডিআর ও গ্রামবাসীরা একত্র মিলিত হয়ে বিএসএফদের প্রতিরোধের এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এতে নিহত হয় বাংলাদেশের তিন বীর বিডিআর জোয়ান। এ সময় ভারতীয় পক্ষে নিহত হয় ১৬ বিএসএফ সদস্য। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটিকে পালন করা হয় ‘বড়াইবাড়ী দিবস’ হিসেবে। এই দিবসটি সরকারি ভাবে স্বকৃতি না দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসির মধ্যে। তবে বক্তারা দ্রুত দিবসটিকে জাতীয় স্কৃতি দেওয়ার আশ^াস দেন।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোররাতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী সীমান্তে অনধিকার প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল বিডিআর-জনতা। আর সেই প্রতিরোধে বিএসএফ এর ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা। শহীদ হয়েছিল ৩৩ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের সিপাহী আঃ কাদের। এছাড়া আহত হয় বিডিআর এর হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ন্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদুর নবী । বিডিআর গ্রামবাসীর পাল্টা আক্রমনে বিএসএফ’র ১৬ জোয়ান নিহত হয়। বিএসএফ এর তান্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯ টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমান ছিল ৭২ লাখ টাকা। কাটেনি সীমান্তের আতংক। গ্রামের মানুষ এখনও দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আতকে উঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন।