দীর্ঘ প্রায় দশ মাস থেকে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে গভীর নলকূপ। নষ্টের কারনে খাবার পানির সাপ্লাই বন্ধ। যার কারনে তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছেন ১৫০/২০০ পরিবার। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামে ঘটে রয়েছে এমন ঘটনা। দীর্ঘ দিন ধরে বিএমডিএর কর্তৃপক্ষ কে অবহিত করলেও কোন গুরুত্ব নেই সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমানের। উল্টো বিএনপি নেতা বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা বানিজ্যের কারনে কোনকিছুই করতে পারছেন বিএমডিএ এমন অভিযোগ কর্তৃপক্ষের । ফলে এমন কর্তা থাকার চেয়ে না থাকায় শ্রেয় বলে মনে করেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। এসবের কোন প্রতিকার পাচ্ছে না জনসাধারণ। দীর্ঘ দিন ধরে খাবার পানির সাপ্লাই না থাকার কারনে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গৃহিণীরা। রিবোরিং না করার কারনে বোরো রোপনও করতে পারেনি কৃষকরা।
এতে করে কপালে চরম ভাঁজ পড়েছে স্কীম ভুক্ত কৃষক দের। দ্রুত খাবার পানির সাপ্লাই লাইন চালুর দাবিতে গত মার্চ মাসের ১৩ তারিখে পাঁচন্দর গ্রামের হারুন অর রশিদ শতাধিক লোকের সাক্ষর সংবলিত লিখিত অভিযোগ দেন বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী বরাবর। কিন্তু অভিযোগের পর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান। উল্টো তিনি নেতাদের উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারনে গভীর নলকূপ মেরামত করা যাচ্ছে না। কোন রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বের কারণে কাজ করতে পারছেন না জানতে চাইলে তিনি জানান সেটা তো বলা যাবে না। চাষাবাদ হয়নি, দীর্ঘ প্রায় দশ মাস ধরে খাবার পানি পাচ্ছে না জনসাধারণ প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, বোরো চাষ না করার জন্য আমরা কৃষক দের বলছি। কারন উপজেলায় ভূগর্ভের পানির লেয়ার হুমকিতে আছে। একারণে অন্য চাষাবাদ করতে বলা হচ্ছে। বোরো চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন পড়ে। অল্প পানিতে যে সব চাষাবাদ হয় সেগুলো চাষ করার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মিটে গেলে মেরামত করা হবে বলে দায় সারেন তিনি।
নাজির জানান, সরকার পতনের পর ডিপ নষ্ট হয়েছে। কিন্তু মেরামত হয়নি। গভীর নলকূপের সাপ্লাই পানি না থাকার কারনে চরম কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
আজাদ নামের আরেক ব্যক্তি জানান, মনে হয় গভীর নলকূপ দেখভালের কেউ নেই। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও খাবার পানির সাপ্লাই না থাকার কারনে কষ্টের শেষ নেই। যাদের সাব মার্সেবুল পাম্প আছে তাদের তেমন একটা সমস্যা নেই। সময় মত তারা খাবার পানি ব্যবহার করতে পারছে। কিন্তু যাদের বাড়িতে মটার নেই তারা পড়েছেন বেকায়দায়। জাহানারা নামের এক গৃহিণী জানান, খাবার পানির সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার পর থেকে চরম সমস্যায় পড়েছি। অন্যের বাড়ি থেকে খাবার পানি নেয়া গেলেও গৃহস্থ কাজের জন্য পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আরেক গৃহিণী ফরিদা, সাহেলা, তোহুরা জানান, একটা সংসারে পানির কত প্রয়োজন। সাপ্লাই পানি দিয়ে যাবতীয় কাজ করা হত। কিন্তু বিকল হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সমস্যাই পড়েছি। জানিনা কবে নলকূপ চালু হবে।
খালেদ, মেহেদী সহ অনেকে জানান, গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ২০০ বিঘা জমি আছে। কেউ চাষাবাদ করতে পারেনি। বোরো ধান চাষের উপর অনেকে নির্ভর শীল। কিন্তু এক বিঘা বোরো রোপন করতে পারা যায় নি। শুধু মাত্র গভীর নলকূপ অকেজো হওয়ার কারনে এমন সমস্যা। কিন্তু মেরামতের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিএমডিএ। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারনে নাকি মেরামত হচ্ছে না। তাহলে বিএমডিএ আছে কেন। তারাও রাজনীতি শুরু করে দিক। রাজনৈতিক নেতাদের কথায় যদি গভীর নলকূপ চলে তাহলে বিএমডিএ থাকার প্রয়োজনই বা কি বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
অভিযোগ উল্লেখ, তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভাধীন ১ নম্বর ওয়ার্ড পাঁচন্দর মৌলভী পাড়া গ্রামের আমরা স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রামে প্রায় ১৫০ টি পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে ৭০ নম্বর পাঁচন্দর মৌজায় অবস্থিত আরএস ১৮১০ নম্বর দাগে গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি খেয়ে বা ব্যবহার করে আসছি। গত প্রায় দশ মাস ধরে গভীর নলকূপ টি অকেজো হওয়ার কারনে খাবার পানির সাপ্লাই বন্ধ আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নলকূপ টি মেরামত বা রিবোরিং করে খাবার পানির সাপ্লাই লাইন চালু করা হোক।
অভিযোগ কারী হারুন অর রশিদ জানান, এখানে নাকি দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারনে নষ্ট গভীর নলকূপে রিবোরিং করতে পারছেনা। দেশে তো কোন রাজনৈতিক সরকার নেই, তাহলে কেন এসব হচ্ছে। রিবোরিং না করার কারনে খাবার পানি তো দূরে বোরো আবাদও করা যায়নি। মার্চ মাসে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই গ্রামের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, তানোর বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) জামিনুর রহমানের বাড়ি উপজেলার যোগিশো গ্রামে। চলতি বছরে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ উঠে। একারনে উপজেলা বিএনপি প্রতিবাদ মিছিল ও সভা করে অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি দীর্ঘ প্রায় এক সপ্তাহ অফিসে আসেন নি। অপারেটর নিয়োগের পর থেকে একের পর এক অভিযোগ হলেও কোন প্রতিকার করতে পারেননি তিনি। কারন তার বাড়ি এউপজেলায়। মুলত একারণে কোন কাজ করতে চায় না। তাহলে এমন কর্মকর্তা কে দ্রুত বদলি করে নতুন কর্মকর্তা দেয়া সময়ের দাবি। তাছাড়া গভীর নলকূপ নিয়ে অরাজকতা বন্ধ হবে না। প্রায় দশ মাস ধরে গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে থাকলেও রাজনীতির দোহায় দিয়ে কোন সমাধান করছেনা।
অপারেটর মাসুদ রানা বলেন, নিয়োগ পাওয়ার পর দীর্ঘ কয়েক মাস পরে জামানতের টাকা জমা নেয়। তার পর নিয়োগ পত্র দেয়া হয়। রিবোরিং করার জন্য একাধিক বার বলেছি। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। রিবোরিং না করার কারনে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয়নি, পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
বিএমডিএর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের অফিসের টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে কেউ রিসিভ করেননি।নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত) তরিকুল ইসলামের অফিসের টেলিফোনে ফোনে কল করা হলে কেউ রিসিভ করেননি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) শামসুল হোদার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান ভালো বলতে পারবেন। তিনি তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে, থানায় যাচ্ছি, কয়েক ঘন্টা পর কথা বলতে পারব।