পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। ভিটেমাটি নিয়ে গেছে রাক্ষুসী মেঘনা। শরীরের শক্তি বল সবই শেষ। রোগাক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী মা সামছুন নাহার ও মেয়ে মসুরা ও আফরোজা। এর মধ্য মসুরার বিয়ে হলেও টিকেনি আর আফরোজার বিয়েই হয়নি। ভিটেমাটি, স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব সামছুন নাহার ২ মেয়েকে নিয়ে মানুষের বাসা-বাড়ীতে কাজ করে চললেও অসুস্থ্যতায় ২ মেয়ে হাঁটা-চলা করতে পারে না। মা নিজেও বয়স ও অসুস্থ্যতার ভাড়ে ভারাক্রান্ত। আগে যেটুকু কাজকর্ম করতেন, অসুস্থ্যতার কারণে এখন সেটুকুও করতে পারছেন না। তাই কাজকর্ম করার ক্ষমতা না থাকায় কেউ এখন তাদের খবর রাখে না। এ বাড়ী ও বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়ার পর অসুস্থ্য থাকায় কেউ স্থায়ী আবাসস্থল দিয়ে সহযোগিতা না করায় অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছোট একটি দ্বো-চালা টিনের ঘর উঠিয়ে থাকার স্থান করে দিয়েছেন। রবিবার ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ২নং ওয়ার্ডের কালালি বাড়ীর পূর্ব পাশে একটি পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
জানা যায়, গাজীপুরা এলাকার মৃত আসমত আলীর স্ত্রী নদী ভাঙ্গনের পর পূর্ব ইলিশা ২নং ওয়ার্ডে বসবাস করছেন। একমাত্র সন্তান তাও মানসিক ভারসাম্যহীন। মা-বোনের খবর রাখার হিতাহিতজ্ঞানশূন্য। সৌদি আরব প্রবাসী আলহাজ্ব আবুল কাশেম মিয়ার দেওয়া অনুদান দিতে গিয়ে দেখা যায় তাদের করুন চিত্র। কে মা, আর কে মেয়ে চেনা মুসকিল। রোগাক্রান্ত হয়ে সবার বয়সই একই দেখা যাচ্ছে। ছোট্ট একটি বাসা ঘরের মত কুটিরে থাকেন ৩ মা-মেয়ে। প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় ২ মেয়ে। বৃদ্ধা মা কোন রকম মানুষের দেওয়া দান-ছদকায় দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন অসুস্থ্য সন্তানদের।
মা সামছুন নাহার বলেন, কি কইতাম বাবা, আল্লাহ ছাড়া আমাগো কেউ নাই। ঝড়-ঝঞ্ঝা আসলে উইড়া যাইবো ঘর, হেই ডরে থাকি। হেডে (পেটে) নাই ভাত, একটু ওষুধ খাইতেও হারি না। পাশেই অসুস্থ্য মসুরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আল্লাহ এত মানুষেরে মউত দেয়, আরে (আমারে) নিতে চোহে (চোখে) দেহে না।
প্রতিবেশী আব্বাস উদ্দিন বলেন, এদের আপন বলতে কেউ নেই। তাই আপনারা পারলে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিন, তবুও ভাল থাকতে পারবে। এখন যে ঘরে আছে ঝড়-ঝঞ্ঝা আসলে কোন বিপদ হয়, আল্লাহই ভাল জানেন। সমাজের হৃদয়বান ও উচ্চবিত্ত মানুষেরা এ অসহায় পরিবারের দিকে সহায়তার হাত বাড়ালে হয়তো তারা একটু ভালভাবে দিনাতিপাত করতে পারবে। তাদের সাথে ০১৬১১-৪৭৫৫০২ নাম্বারের মাধ্যমে যোগাযোগ কিংবা সহযোগিতা করা যেতে পারে।