Dhaka ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন : মইনউদ্দীন

  • ডেক্স নিউজ:
  • Update Time : ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ৮৮ Time View

২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ঢাকা: গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ mসহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) শেখ মইনউদ্দীন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ভবনে নারীর জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত গণপরিবহন নিশ্চিত করতে “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।

সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমঅধিকারের বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি আমরা সফল হবো। কিন্তু সেক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি রোধ করার দায়িত্ব সবার। অনেকসময় হয়রানি দেখলেও আমরা চুপ করে যাই, কিন্তু চুপ করে গেলে তো প্রতিকার হলো না। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। পুরুষদের বুঝতে হবে নারীদের সমাজে সমান অধিকার ও সম্মান প্রাপ্য।’ নারীর জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত গণপরিবহন নিশ্চিত করতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও সুইডেন দূতাবাসের সহায়তায় “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইন প্রতিটি যাত্রী, চালক, কন্ডাক্টর এবং নীতিনির্ধারকের প্রতি একটি আহ্বান। এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান, যেখানে হয়রানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এবং যেখানে নারী ও কন্যা শুধু চলাচলের যেকোনো গণপরিবহনে চলাচলের জন্য নিরাপদ ও স্বাগত বোধ করবে।’

ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী সত্যক জড়িত। নারী ও কন্যা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় স্বাধীনভাবে, নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলাচলের অধিকার রাখে। সেটা ঢাকার মেট্রোরেল হোক, বাস হোক বা দেশের অন্য যেকোনো গণপরিবহনে। আমদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন, এই ক্যাম্পেইন শুধু দৃশ্যমান নয়, বাস্তব কার্যক্রম, প্রতিরোধ এবং সুরক্ষার মধ্য দিয়ে যেন অনুভূত হয়।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক নিলিমা আখতার। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি যাতে এই ক্যাম্পেইনটি দৃশ্যমান এবং কার্যকরী হয়, যাতে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের বার্তাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, বিআরটিসি, ঢাকা চাকা এবং নগর পরিবহনের কর্মীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, নারীবান্ধব গণপরিবহন তৈরিতে এখনো কিছু জরুরি সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে যেমন নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং এমন একটি ব্যবস্থা যা নিশ্চিত করবে যেকোনো ধরনের হয়রানি ঘটলেই দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়। এছাড়া, বাসস্টপগুলোতে আলোর ব্যবস্থা বৃদ্ধি এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও এ ধরনের ক্যাম্পেইন আয়োজন করা প্রয়োজনীয়।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকার এসেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেই অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা। আজকে যদি নারীরা অনিরাপদ বোধ করে গণপরিবহনে, সেটাও তার প্রতি বৈষম্যমূলক। কারণ নিরাপদে সে তার গন্তব্যে যেতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘নারীরা যে পেশায় থাকুক, যে পোশাকই পরুক না কেন- তার প্রতি অশালীন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীদের প্রতি হয়রানির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।’

এর আগে “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” ক্যাম্পেইনের আওতায় গত ১৬ থেকে ২০ মার্চ গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে বাসচালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঢাকা চাকা, নগর পরিবহন, বিআরটিসি ও হানিফ পরিবহনের ১৬০ জনেরও বেশি পরিবহনকর্মী নারীবান্ধব গণপরিবহন গড়তে প্রশিক্ষণ পায়। বৃহস্পতিবার তাদের কাছে সনদ হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দীন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন : মইনউদ্দীন

Update Time : ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ঢাকা: গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ mসহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) শেখ মইনউদ্দীন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ভবনে নারীর জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত গণপরিবহন নিশ্চিত করতে “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।

সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমঅধিকারের বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি আমরা সফল হবো। কিন্তু সেক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি রোধ করার দায়িত্ব সবার। অনেকসময় হয়রানি দেখলেও আমরা চুপ করে যাই, কিন্তু চুপ করে গেলে তো প্রতিকার হলো না। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। পুরুষদের বুঝতে হবে নারীদের সমাজে সমান অধিকার ও সম্মান প্রাপ্য।’ নারীর জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত গণপরিবহন নিশ্চিত করতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও সুইডেন দূতাবাসের সহায়তায় “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইন প্রতিটি যাত্রী, চালক, কন্ডাক্টর এবং নীতিনির্ধারকের প্রতি একটি আহ্বান। এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান, যেখানে হয়রানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এবং যেখানে নারী ও কন্যা শুধু চলাচলের যেকোনো গণপরিবহনে চলাচলের জন্য নিরাপদ ও স্বাগত বোধ করবে।’

ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী সত্যক জড়িত। নারী ও কন্যা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় স্বাধীনভাবে, নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলাচলের অধিকার রাখে। সেটা ঢাকার মেট্রোরেল হোক, বাস হোক বা দেশের অন্য যেকোনো গণপরিবহনে। আমদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন, এই ক্যাম্পেইন শুধু দৃশ্যমান নয়, বাস্তব কার্যক্রম, প্রতিরোধ এবং সুরক্ষার মধ্য দিয়ে যেন অনুভূত হয়।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক নিলিমা আখতার। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি যাতে এই ক্যাম্পেইনটি দৃশ্যমান এবং কার্যকরী হয়, যাতে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের বার্তাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, বিআরটিসি, ঢাকা চাকা এবং নগর পরিবহনের কর্মীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, নারীবান্ধব গণপরিবহন তৈরিতে এখনো কিছু জরুরি সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে যেমন নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং এমন একটি ব্যবস্থা যা নিশ্চিত করবে যেকোনো ধরনের হয়রানি ঘটলেই দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়। এছাড়া, বাসস্টপগুলোতে আলোর ব্যবস্থা বৃদ্ধি এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও এ ধরনের ক্যাম্পেইন আয়োজন করা প্রয়োজনীয়।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকার এসেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেই অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা। আজকে যদি নারীরা অনিরাপদ বোধ করে গণপরিবহনে, সেটাও তার প্রতি বৈষম্যমূলক। কারণ নিরাপদে সে তার গন্তব্যে যেতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘নারীরা যে পেশায় থাকুক, যে পোশাকই পরুক না কেন- তার প্রতি অশালীন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীদের প্রতি হয়রানির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।’

এর আগে “হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস” ক্যাম্পেইনের আওতায় গত ১৬ থেকে ২০ মার্চ গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে বাসচালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঢাকা চাকা, নগর পরিবহন, বিআরটিসি ও হানিফ পরিবহনের ১৬০ জনেরও বেশি পরিবহনকর্মী নারীবান্ধব গণপরিবহন গড়তে প্রশিক্ষণ পায়। বৃহস্পতিবার তাদের কাছে সনদ হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দীন।