Dhaka ১০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশের গাফলতিতে বাড়িওয়ালার ঘরে যুবকের মৃত্যু,এ দায় নিবে কে?

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অটোরিকশা ছিনতাইকারী সন্দেহে যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলেন এলাকাবাসী। আর অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চিকিৎসার নামে তাদের হাতে ওই যুবকে তুলে দিলেন পুলিশ। পরের দিন গত শনিবার দুপুরে পুলিশ ওই বাড়িওয়ালার ঘরের ভেতর থেকে রহশ্যজনক তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের গাফলতিতে এমন মৃত্যুর দায় নিবে কে? এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চলছে নানা সমালোচনাও। নিহত হলেন, গাইবান্ধার সদর উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে নূর ইসলাম (৩৫)। তিনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই মিলগেইট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।

এলাকাবাসী, পুলিশ, অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নুর ইসলামসহ চারজন যাত্রী ভেসে ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার চন্দ্রা এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া নেন। পরে ওই অটোরিকশা চালক রনিকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ক্যাডেট কলেজ এলাকায় মেলায় যেতে বলেন তারা। সেখানে যাওয়ার পর আবার চন্দ্রার দিকে যাওয়ার কথা বলে কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন ওই ছিনতাইকারীরা। কিছুক্ষণ পর তারা যাত্রী ভেসে আবারও ওই অটোরিকশায় উঠেন।

কিছুদুর আসার পর ছিনতাইকারীরা কৌশলে সহজ রাস্তার কথা বলে দেওয়াবাজার-মহরাবহ-চন্দ্রা সড়ক দিয়ে দ্রুত যেতে বলে। সে পথ ধরে আসার সময় মহরাবহ বাজারের আগে একটি নির্জন স্থানে অটোরিকশা চালককে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা। এসময় কসটেপ পেছিয়ে তার পুরো মুখমন্ডল ও হাত-পা আটকে তাকে সড়কের পাশে ডোবায় ফেলে দেয়। পরে ওই ডোবার কাঁদায় তাকে গেড়ে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এসময় হামাগুড়ি দিয়ে ওই সড়কে আড়াআড়ি শুয়ে পড়ে একটি সিএনজির গতিরোধ করেন এবং বিস্তারিত ঘটনারবিবরন দেন অটোরিকশা চালক। পরে ওই সিএনজি চালক ও অটোরিকশা চালক ধাওয়া দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে আটক করে। এসময় তার অন্য

সহযোগীরা পালাতে সক্ষম হলে আটককৃত নুর ইসলামকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও অটোরিকশার মালিক তার বাড়িওয়ালাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং অটোরিকশাটি উদ্ধার করেন। পরে আহত ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এলাকাবাসী। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে যান অটোরিকশা মালিক কবির সিকদার ও তার বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের। কিন্তু থানা পুলিশ উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে আহত যুবককে চিকিৎসা দিতে বলা হয়।

পরে পুলিশের কথা মতো তাকে আবার ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি দেখে কতব্যরত চিকিৎসক গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু গভীর রাত হওয়ায় হাসপাতালে নয়, নিজেদের বাড়ি ভাতাড়িয়া এলাকায় নিয়ে যান অটোরিকশা মালিক ও বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের। সেখানে নিয়ে তারা তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।

পরের দিন শনিবার সকালে বাথরোমে যাওয়ার কথা বলে আব্দুল কাদেরের ভাড়াটে অটোরিকশার মালিক কবিরের টয়লেটে যান নুর ইসলাম। পরে তিনি ওই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে ওইদিন দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে পুলিশ ও বাড়িওয়ালার গাফলতিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এমন মৃত্যুর দায় কার? এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠছে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা? এসব নিয়ে পুলিশে বিরুদ্ধে জনমনে চলছে নানা সমালোচনাও।

অটোরিকশার মালিক কবির হোসেন জানান, ওই ছিনতাইকারীকে নিয়ে থানায় গেলে তাকে না রেখে তার চিকিৎসা করাতে বলে পুলিশ। পুলিশের কথায় তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসার এক পর্যায় রাত ৩টার দিকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে আমরা তাকে নিয়ে আসি। আর পরের দিন সকালে ওই ছিনতাইকারী বাথরোমের যাওয়ার কথা বলে আমার ভাড়া কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের জানান, ওই ছিনতাইকারীকে থানায় নিলে উল্টো আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার চিকিৎসা করাতে বলে পুলিশ। কিন্তু চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে গভীর রাতে তাকে রেফার্ড করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে তাকে এলাকায় নিয়ে এলে ওই ছিনতাইকারী আমাদের বাড়িতে গলায় রশি পেছিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কালিয়াকৈরে থানার উপ-পুলিশ (এসআই) হাবিবুর রহমান জানান, নিহতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর তার মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে পুলিশের গাফলতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর উত্তর ওসি স্যার দিবেন বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, একটু পর এসপি স্যার থানা পরিদর্শনে আসবেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের পরে থানায় যেতে বলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

খুলনার আড়ংঘাটায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক জন আহত হয়েছেন

পুলিশের গাফলতিতে বাড়িওয়ালার ঘরে যুবকের মৃত্যু,এ দায় নিবে কে?

Update Time : ০৫:২৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অটোরিকশা ছিনতাইকারী সন্দেহে যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলেন এলাকাবাসী। আর অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চিকিৎসার নামে তাদের হাতে ওই যুবকে তুলে দিলেন পুলিশ। পরের দিন গত শনিবার দুপুরে পুলিশ ওই বাড়িওয়ালার ঘরের ভেতর থেকে রহশ্যজনক তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের গাফলতিতে এমন মৃত্যুর দায় নিবে কে? এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চলছে নানা সমালোচনাও। নিহত হলেন, গাইবান্ধার সদর উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে নূর ইসলাম (৩৫)। তিনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই মিলগেইট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।

এলাকাবাসী, পুলিশ, অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নুর ইসলামসহ চারজন যাত্রী ভেসে ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার চন্দ্রা এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া নেন। পরে ওই অটোরিকশা চালক রনিকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ক্যাডেট কলেজ এলাকায় মেলায় যেতে বলেন তারা। সেখানে যাওয়ার পর আবার চন্দ্রার দিকে যাওয়ার কথা বলে কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন ওই ছিনতাইকারীরা। কিছুক্ষণ পর তারা যাত্রী ভেসে আবারও ওই অটোরিকশায় উঠেন।

কিছুদুর আসার পর ছিনতাইকারীরা কৌশলে সহজ রাস্তার কথা বলে দেওয়াবাজার-মহরাবহ-চন্দ্রা সড়ক দিয়ে দ্রুত যেতে বলে। সে পথ ধরে আসার সময় মহরাবহ বাজারের আগে একটি নির্জন স্থানে অটোরিকশা চালককে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা। এসময় কসটেপ পেছিয়ে তার পুরো মুখমন্ডল ও হাত-পা আটকে তাকে সড়কের পাশে ডোবায় ফেলে দেয়। পরে ওই ডোবার কাঁদায় তাকে গেড়ে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এসময় হামাগুড়ি দিয়ে ওই সড়কে আড়াআড়ি শুয়ে পড়ে একটি সিএনজির গতিরোধ করেন এবং বিস্তারিত ঘটনারবিবরন দেন অটোরিকশা চালক। পরে ওই সিএনজি চালক ও অটোরিকশা চালক ধাওয়া দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে আটক করে। এসময় তার অন্য

সহযোগীরা পালাতে সক্ষম হলে আটককৃত নুর ইসলামকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও অটোরিকশার মালিক তার বাড়িওয়ালাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং অটোরিকশাটি উদ্ধার করেন। পরে আহত ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এলাকাবাসী। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে যান অটোরিকশা মালিক কবির সিকদার ও তার বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের। কিন্তু থানা পুলিশ উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে আহত যুবককে চিকিৎসা দিতে বলা হয়।

পরে পুলিশের কথা মতো তাকে আবার ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি দেখে কতব্যরত চিকিৎসক গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু গভীর রাত হওয়ায় হাসপাতালে নয়, নিজেদের বাড়ি ভাতাড়িয়া এলাকায় নিয়ে যান অটোরিকশা মালিক ও বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের। সেখানে নিয়ে তারা তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।

পরের দিন শনিবার সকালে বাথরোমে যাওয়ার কথা বলে আব্দুল কাদেরের ভাড়াটে অটোরিকশার মালিক কবিরের টয়লেটে যান নুর ইসলাম। পরে তিনি ওই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে ওইদিন দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে পুলিশ ও বাড়িওয়ালার গাফলতিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এমন মৃত্যুর দায় কার? এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠছে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা? এসব নিয়ে পুলিশে বিরুদ্ধে জনমনে চলছে নানা সমালোচনাও।

অটোরিকশার মালিক কবির হোসেন জানান, ওই ছিনতাইকারীকে নিয়ে থানায় গেলে তাকে না রেখে তার চিকিৎসা করাতে বলে পুলিশ। পুলিশের কথায় তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসার এক পর্যায় রাত ৩টার দিকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে আমরা তাকে নিয়ে আসি। আর পরের দিন সকালে ওই ছিনতাইকারী বাথরোমের যাওয়ার কথা বলে আমার ভাড়া কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের জানান, ওই ছিনতাইকারীকে থানায় নিলে উল্টো আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার চিকিৎসা করাতে বলে পুলিশ। কিন্তু চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে গভীর রাতে তাকে রেফার্ড করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে তাকে এলাকায় নিয়ে এলে ওই ছিনতাইকারী আমাদের বাড়িতে গলায় রশি পেছিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কালিয়াকৈরে থানার উপ-পুলিশ (এসআই) হাবিবুর রহমান জানান, নিহতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর তার মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে পুলিশের গাফলতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর উত্তর ওসি স্যার দিবেন বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, একটু পর এসপি স্যার থানা পরিদর্শনে আসবেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের পরে থানায় যেতে বলেন।