Dhaka ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরের নারীদের হাতে তৈরি পাটের ব্যাগ যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

নারীরা নিজেরাই তৈরি করছেন চটের আকর্ষণীয় ব্যাগ। স্ত্রিন প্রিন্ট থেকে প্যাকেজিং সবকিছুই করছেন নারীরা। নারীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এসব ব্যাগ যাচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। নারী কারিগররা বছর শেষে লাভ্যাংশ পাচ্ছেন।  যা দিয়ে পরিবার কে স্বাবলম্বী করছেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে গড়ে উঠা ৬তলা এই ভবনটি অসহায় ও দুস্থ নারীদের জমাকৃত অর্থে গড়ে উঠে এটি। এই প্রতিষ্ঠানের  সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। তাঁরা এখানে কাজ করেন এবং বাড়িতে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যাগ তৈরির উপকরণ। প্রতিটি ব্যাগ তৈরি করে নারীরা পায় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিল্পী রানী ও ফাতেমা বেগম আসেন শহরের নতুন বাবুপাড়া থেকে। এখানে কাজ করে সংসার ভালই চলছে তাদের। বছর শেষে মোটামুটি লাভ্যাংশ পাওয়ায় জমি-জায়গা কেনা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারছেন। পরিবারে স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে তাদের।  এখানে কাজ করায় এনজিও’র ঋনও নিতে হচ্ছে না।তারা নিজেরাই মালিক ও কর্মচারী এই প্রতিষ্ঠানের
প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার আরমান আলী জানান, এখানে বাজার ব্যাগ, লন্ড্রি ব্যাগ, ডল ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, কসমেটিক ব্যাগসহ পুরাতন শাড়ি কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করে থাকেন নারীরা। ব্যাগগুলো মজবুত, টেকসই ও উন্নতমানের হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে উন্নতমানের পাটের চট সংগ্রহ করে এসব ব্যাগ তৈরি করা হয়। অর্ডার অনুযায়ী ব্যাগগুলো আমেরিকা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, জাপান, কুরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (হিসাব) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নারীদের তৈরি ব্যাগ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে ।২০১৯ সালে করোনার কারণে বাজার কিছুটা খারাপ গেছে। এবারে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি তলায় কাজ করেন নারীরা। কাটিং, সেলাই, স্ক্রীন প্রিন্ট, বোতাম লাগানো নারীরা সুক্ষ হাতে করে থাকেন।  এসব নারীরা পিস হিসাবে মজুরী ও বছর শেষে লাভ্যাংশ পেয়ে থাকেন।
এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা মুলত কম্পিউটারে ডিজাইন দেখাই কিংবা তাঁদের চাহিদা ও ডিজাইন অনুযায়ী ব্যাগ সরবরাহ করে থাকি। আমাদের তৈরি ব্যাগগুলো মুলত পানি জাহাজে পাঠিয়ে থাকি। আগে ৩৫ দিন লাগলেও এখন সময় লাগছে ৭০ থেকে ৭৫ দিন। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং বায়ারদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে।
সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেসের জেনারেল ম্যানেজার মাসুম ইবনুল খান সবদিকে নজর রাখেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি মুলত সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের। অসহায়, দুস্থ নারীরা কাজ করেন। পাটশিল্পের ব্যাগ তৈরি করে সমাজে অবদান রাখছেন। তাঁরা কাজে খুবই আন্তরিক। ফলে প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে।  এই প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৯০ ভাগ নারী ও ১০ ভাগ পুরুষ অফিসের কাজ করেন।  ৬০ বছর বয়স হলে তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন করে বাছাই করে নারীদের নিয়োগ করা হয়।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

সৈয়দপুরের নারীদের হাতে তৈরি পাটের ব্যাগ যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

Update Time : ০১:২৫:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
নারীরা নিজেরাই তৈরি করছেন চটের আকর্ষণীয় ব্যাগ। স্ত্রিন প্রিন্ট থেকে প্যাকেজিং সবকিছুই করছেন নারীরা। নারীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এসব ব্যাগ যাচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। নারী কারিগররা বছর শেষে লাভ্যাংশ পাচ্ছেন।  যা দিয়ে পরিবার কে স্বাবলম্বী করছেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে গড়ে উঠা ৬তলা এই ভবনটি অসহায় ও দুস্থ নারীদের জমাকৃত অর্থে গড়ে উঠে এটি। এই প্রতিষ্ঠানের  সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। তাঁরা এখানে কাজ করেন এবং বাড়িতে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যাগ তৈরির উপকরণ। প্রতিটি ব্যাগ তৈরি করে নারীরা পায় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিল্পী রানী ও ফাতেমা বেগম আসেন শহরের নতুন বাবুপাড়া থেকে। এখানে কাজ করে সংসার ভালই চলছে তাদের। বছর শেষে মোটামুটি লাভ্যাংশ পাওয়ায় জমি-জায়গা কেনা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারছেন। পরিবারে স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে তাদের।  এখানে কাজ করায় এনজিও’র ঋনও নিতে হচ্ছে না।তারা নিজেরাই মালিক ও কর্মচারী এই প্রতিষ্ঠানের
প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার আরমান আলী জানান, এখানে বাজার ব্যাগ, লন্ড্রি ব্যাগ, ডল ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, কসমেটিক ব্যাগসহ পুরাতন শাড়ি কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করে থাকেন নারীরা। ব্যাগগুলো মজবুত, টেকসই ও উন্নতমানের হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে উন্নতমানের পাটের চট সংগ্রহ করে এসব ব্যাগ তৈরি করা হয়। অর্ডার অনুযায়ী ব্যাগগুলো আমেরিকা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, জাপান, কুরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (হিসাব) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নারীদের তৈরি ব্যাগ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে ।২০১৯ সালে করোনার কারণে বাজার কিছুটা খারাপ গেছে। এবারে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি তলায় কাজ করেন নারীরা। কাটিং, সেলাই, স্ক্রীন প্রিন্ট, বোতাম লাগানো নারীরা সুক্ষ হাতে করে থাকেন।  এসব নারীরা পিস হিসাবে মজুরী ও বছর শেষে লাভ্যাংশ পেয়ে থাকেন।
এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা মুলত কম্পিউটারে ডিজাইন দেখাই কিংবা তাঁদের চাহিদা ও ডিজাইন অনুযায়ী ব্যাগ সরবরাহ করে থাকি। আমাদের তৈরি ব্যাগগুলো মুলত পানি জাহাজে পাঠিয়ে থাকি। আগে ৩৫ দিন লাগলেও এখন সময় লাগছে ৭০ থেকে ৭৫ দিন। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং বায়ারদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে।
সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেসের জেনারেল ম্যানেজার মাসুম ইবনুল খান সবদিকে নজর রাখেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি মুলত সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের। অসহায়, দুস্থ নারীরা কাজ করেন। পাটশিল্পের ব্যাগ তৈরি করে সমাজে অবদান রাখছেন। তাঁরা কাজে খুবই আন্তরিক। ফলে প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে।  এই প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৯০ ভাগ নারী ও ১০ ভাগ পুরুষ অফিসের কাজ করেন।  ৬০ বছর বয়স হলে তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন করে বাছাই করে নারীদের নিয়োগ করা হয়।