Dhaka ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ভাইরাল সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবশেষে ধর্ষণের মামলা

নওগাঁর মান্দায় ছাত্রীকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে অবশেষে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। বুধবার মান্দা থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা। মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডল উপজেলার হাজীগোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের আফসার মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অপর অভিযুক্ত তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুন।

এর আগে এ ঘটনায় শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্থানীয়দের করা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার শাকিল আহমেদ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা রানী পাল, চককামদেব বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ মৃধা ও অভিভাবক সদস্য সাবেদ আলী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির লোক। তার পূর্বের ২টি স্ত্রী আছে। শিক্ষার্থী দোলা স্কুলে অবস্থানকালে সে তাকে তার কক্ষে ডাকিয়া নিয়া বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিত। সে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানোসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকী দিত। এ গুলো ঘটনা পরিবারকে জানালে তার বাবা স্থানীয় লোকজনসহ তাকে একাধিকবার নিষেধ করেছে। কিন্তু সে নিষেধ না মেনে ওই ছাত্রীকে আরো বেশি উত্যক্ত করতে থাকে।

এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে দোলা স্কুলের ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। স্কুলে অবস্থানকালে সকাল অনুমান ১০ টার দিকে সে দোলাকে বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেদিন থেকে তাকে তার বাড়ীতে রেখে তাকে বিয়ের প্রলোভনে জোর করে ধর্ষণ করে। পরে তাকে বিয়ের জন্য অনুরোধ করলে সে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়া তার বাড়ীতে রেখে বার বার ধর্ষন করে। পরে তার বাড়ীতে দোলা থাকার সময় ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যা অনুমান সোয়া ৬ টার দিকে বিয়ের জন্য বললে সে বিয়ে করতে পারবে না বলে অস্বীকার করিয়া বাড়ী থেকে বের করে দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিস্টারি করে আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলে সেখানে আমি স্বাক্ষর দিই। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি। এরমধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য গতকাল আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে। আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। তাই আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মুনসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সহযোগী আসামি করা হয়েছে তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকে। মামলার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে। তাদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলবে

নওগাঁয় ভাইরাল সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবশেষে ধর্ষণের মামলা

জন দেখেছেন : ১১:১৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

নওগাঁর মান্দায় ছাত্রীকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে অবশেষে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। বুধবার মান্দা থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা। মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডল উপজেলার হাজীগোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের আফসার মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অপর অভিযুক্ত তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুন।

এর আগে এ ঘটনায় শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্থানীয়দের করা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার শাকিল আহমেদ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা রানী পাল, চককামদেব বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ মৃধা ও অভিভাবক সদস্য সাবেদ আলী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির লোক। তার পূর্বের ২টি স্ত্রী আছে। শিক্ষার্থী দোলা স্কুলে অবস্থানকালে সে তাকে তার কক্ষে ডাকিয়া নিয়া বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিত। সে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানোসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকী দিত। এ গুলো ঘটনা পরিবারকে জানালে তার বাবা স্থানীয় লোকজনসহ তাকে একাধিকবার নিষেধ করেছে। কিন্তু সে নিষেধ না মেনে ওই ছাত্রীকে আরো বেশি উত্যক্ত করতে থাকে।

এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে দোলা স্কুলের ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। স্কুলে অবস্থানকালে সকাল অনুমান ১০ টার দিকে সে দোলাকে বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেদিন থেকে তাকে তার বাড়ীতে রেখে তাকে বিয়ের প্রলোভনে জোর করে ধর্ষণ করে। পরে তাকে বিয়ের জন্য অনুরোধ করলে সে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়া তার বাড়ীতে রেখে বার বার ধর্ষন করে। পরে তার বাড়ীতে দোলা থাকার সময় ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যা অনুমান সোয়া ৬ টার দিকে বিয়ের জন্য বললে সে বিয়ে করতে পারবে না বলে অস্বীকার করিয়া বাড়ী থেকে বের করে দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিস্টারি করে আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলে সেখানে আমি স্বাক্ষর দিই। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি। এরমধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য গতকাল আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে। আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। তাই আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মুনসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সহযোগী আসামি করা হয়েছে তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকে। মামলার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে। তাদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।