Dhaka ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুর রেলওয়ে কোয়ার্টারের জমি দখল বিক্রয়,ঘরবাড়ি নির্মাণ অব্যাহত

oppo_2

সৈয়দপুর শহরের দারুলউলুম রুহুল ইসলাম মাদরাসা মোড় সংলগ্ন ৫৫৫ নং রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারে বসবাসকারী, রেলওয়ে পাওয়ার হাউজের অবসরপ্রাপ্ত সুইচবোর্ড এ্যাটেন্ডেন্স মাহমুদ আলী নামের এক ব্যাক্তি সহ তার ৪ ভাই মিলে কোয়ার্টারের প্রায় ২ কোটি টাকা মুল্যের জমিতে অবৈধ ভাবে একাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছেন। রেলকর্তৃপক্ষ এসব বিষয় অবগত থাকলেও কেন যেন নিরব ভূমিকা পালন করছেন।

চলতি বছরের ৫ আগষ্টের পর দারুলউলুম মাদ্রাসা মোড় সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারি অব্যাহত থাকলেও এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

স্হানীয়রা বলেন, ৫ আগষ্টের পর  আওয়ামী দখলবাজ নেতা কর্মীরা গ্রেফতার আতংকে গা ঢাকা দিলেও মাহমুদ আলী নামের ওই শ্রমিকলীগ নেতা দাপটের সাথেই রেলওয়ে থেকে অবসর নেওয়ার পরও অফিসার্স কলোনির ৫৫৫ নং কোয়ার্টারটি দখলে আছেন এবং ওই কোয়ার্টার সংলগ্ন প্রায় ২ কোটি টাকা মুল্যের জমিতে অবৈধ ভাবে একাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পাওয়ার হাউজ সুইচবোর্ড এ্যাটেন্ডেন্স মাহমুদ আলী বলেন, আমরা প্রায় ৩ যুগ থেকে এই কোয়ার্টারে বসবাস করে আসছি। এতটা বছরে রেলকে যত টাকা আমরা দিয়েছি, সে তুলনায় কোয়ার্টারের জমির মুল্য অনেক কম। তাছাড়া রেল কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে রেলওয়ের জমিতে সবাই ঘরবাড়ি ও মার্কেট নির্মান করছেন বলে আমিও করেছি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সুত্রে জানা যায় , ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ওই সময় রেলবিভাগের জমির পরিমাণ ছিল ৭৯৮ দশমিক ৯ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ২০০ একর জমিতে দ্বিতল ভবন এবং পাকা-আধপাকা কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ৩১টি বাংলো, ১৩৯টি সাব-বাংলো নির্মাণ করা হয়। তা ছাড়া দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাসা ৭১১টি ও এক কক্ষ বিশিষ্ট বাসা নির্মাণ করা হয় ১ হাজার ৬০৭টি।

ওই সুত্র থেকে আরো জানা যায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের প্রায় সম্পত্তি ছিল রেলওয়ের নিজ দখলে। কিন্তু এরপর থেকে,রেলওয়ের জনবল সংকটের পাশাপাশি রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে অনেক জমি ও কোয়ার্টার বেদখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি জমি দখল এবং কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০২০ সালের পর থেকে।

সুত্রটি জানান, বিধি অনুযায়ী, রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণ করার সময় নির্মাণকারিদের বিরুদ্ধে প্রথমে বাধা দিতে হবে, পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন উপসহকারী প্রকৌশলী। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের প্রায় কয়েক শতাধিক কোয়ার্টার ভেঙে ভবন ও পাকা-আধপাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ হলেও কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।ফলে রেলওয়ের জমিতে একাধিক দ্বিতল ভবন সংলগ্ন গোডাউন ঘর ও পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।একইভাবে দারুলউলুম মাদ্রাসা মোড়ের ৫৫৫ নং অফিসার কোয়ার্টারের পতিত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে ঘরবাড়ি।  পাশাপাশি ৫৫৬ নং কোয়ার্টার সংলগ্ন নির্মাণ হয়েছে ঘরবাড়ি ও একাধিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।। এ জন্য রেলওয়ের অসাধু কর্মচারী,সবার কাছে থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে বলে একাধিক জনের অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,চলতি বছরের ৫ আগষ্টের আগেও দখলদাররা রেলওয়ে জমি দখল করতে কিছুটা হলেও ভয় পেতো কিন্তু ৫ আগষ্টের পর দখলদাররা দাপটের সাথেই রেলওয়ের জমিতে ঘরবাড়ি ও মার্কেট নির্মান করে চলেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে অনেকে বলেন, রেলওয়ের ছোট্ট একটি জমিতে দুই রুম বানাতে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই বাধা দিতে আসে, ওইসময় মিষ্টি খেতে কিছু না দিলে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও করা হয়। অন্যান্য দখলকারিরা বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামকে মোটা অংকের অর্থ না দিয়ে কেউই রেলের জমিতে ঘরবাড়ি বা কোয়ার্টার ভেঙে ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না।

রেলওয়ের জমি দখল ও অর্থ লেনদেন নিয়ে কথা বলতে গেলে উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান।

তবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ,সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, ২০২০ সালের পর রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণকারি ও ৫ আগষ্টের পর যেসব রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবৈধ ভাবে রেলওয়ের জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অল্প দিনের মধ্যেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

আত্রাইয়ে ইউপি মেম্বারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

সৈয়দপুর রেলওয়ে কোয়ার্টারের জমি দখল বিক্রয়,ঘরবাড়ি নির্মাণ অব্যাহত

Update Time : ০১:২৩:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

সৈয়দপুর শহরের দারুলউলুম রুহুল ইসলাম মাদরাসা মোড় সংলগ্ন ৫৫৫ নং রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারে বসবাসকারী, রেলওয়ে পাওয়ার হাউজের অবসরপ্রাপ্ত সুইচবোর্ড এ্যাটেন্ডেন্স মাহমুদ আলী নামের এক ব্যাক্তি সহ তার ৪ ভাই মিলে কোয়ার্টারের প্রায় ২ কোটি টাকা মুল্যের জমিতে অবৈধ ভাবে একাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছেন। রেলকর্তৃপক্ষ এসব বিষয় অবগত থাকলেও কেন যেন নিরব ভূমিকা পালন করছেন।

চলতি বছরের ৫ আগষ্টের পর দারুলউলুম মাদ্রাসা মোড় সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারি অব্যাহত থাকলেও এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

স্হানীয়রা বলেন, ৫ আগষ্টের পর  আওয়ামী দখলবাজ নেতা কর্মীরা গ্রেফতার আতংকে গা ঢাকা দিলেও মাহমুদ আলী নামের ওই শ্রমিকলীগ নেতা দাপটের সাথেই রেলওয়ে থেকে অবসর নেওয়ার পরও অফিসার্স কলোনির ৫৫৫ নং কোয়ার্টারটি দখলে আছেন এবং ওই কোয়ার্টার সংলগ্ন প্রায় ২ কোটি টাকা মুল্যের জমিতে অবৈধ ভাবে একাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পাওয়ার হাউজ সুইচবোর্ড এ্যাটেন্ডেন্স মাহমুদ আলী বলেন, আমরা প্রায় ৩ যুগ থেকে এই কোয়ার্টারে বসবাস করে আসছি। এতটা বছরে রেলকে যত টাকা আমরা দিয়েছি, সে তুলনায় কোয়ার্টারের জমির মুল্য অনেক কম। তাছাড়া রেল কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে রেলওয়ের জমিতে সবাই ঘরবাড়ি ও মার্কেট নির্মান করছেন বলে আমিও করেছি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সুত্রে জানা যায় , ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ওই সময় রেলবিভাগের জমির পরিমাণ ছিল ৭৯৮ দশমিক ৯ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ২০০ একর জমিতে দ্বিতল ভবন এবং পাকা-আধপাকা কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ৩১টি বাংলো, ১৩৯টি সাব-বাংলো নির্মাণ করা হয়। তা ছাড়া দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাসা ৭১১টি ও এক কক্ষ বিশিষ্ট বাসা নির্মাণ করা হয় ১ হাজার ৬০৭টি।

ওই সুত্র থেকে আরো জানা যায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের প্রায় সম্পত্তি ছিল রেলওয়ের নিজ দখলে। কিন্তু এরপর থেকে,রেলওয়ের জনবল সংকটের পাশাপাশি রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে অনেক জমি ও কোয়ার্টার বেদখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি জমি দখল এবং কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০২০ সালের পর থেকে।

সুত্রটি জানান, বিধি অনুযায়ী, রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণ করার সময় নির্মাণকারিদের বিরুদ্ধে প্রথমে বাধা দিতে হবে, পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন উপসহকারী প্রকৌশলী। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের প্রায় কয়েক শতাধিক কোয়ার্টার ভেঙে ভবন ও পাকা-আধপাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ হলেও কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।ফলে রেলওয়ের জমিতে একাধিক দ্বিতল ভবন সংলগ্ন গোডাউন ঘর ও পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।একইভাবে দারুলউলুম মাদ্রাসা মোড়ের ৫৫৫ নং অফিসার কোয়ার্টারের পতিত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে ঘরবাড়ি।  পাশাপাশি ৫৫৬ নং কোয়ার্টার সংলগ্ন নির্মাণ হয়েছে ঘরবাড়ি ও একাধিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।। এ জন্য রেলওয়ের অসাধু কর্মচারী,সবার কাছে থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে বলে একাধিক জনের অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,চলতি বছরের ৫ আগষ্টের আগেও দখলদাররা রেলওয়ে জমি দখল করতে কিছুটা হলেও ভয় পেতো কিন্তু ৫ আগষ্টের পর দখলদাররা দাপটের সাথেই রেলওয়ের জমিতে ঘরবাড়ি ও মার্কেট নির্মান করে চলেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে অনেকে বলেন, রেলওয়ের ছোট্ট একটি জমিতে দুই রুম বানাতে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই বাধা দিতে আসে, ওইসময় মিষ্টি খেতে কিছু না দিলে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও করা হয়। অন্যান্য দখলকারিরা বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামকে মোটা অংকের অর্থ না দিয়ে কেউই রেলের জমিতে ঘরবাড়ি বা কোয়ার্টার ভেঙে ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না।

রেলওয়ের জমি দখল ও অর্থ লেনদেন নিয়ে কথা বলতে গেলে উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান।

তবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ,সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, ২০২০ সালের পর রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণকারি ও ৫ আগষ্টের পর যেসব রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবৈধ ভাবে রেলওয়ের জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অল্প দিনের মধ্যেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।