টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ভুট্টা চাষে ঘটেছে এক নীরব বিপ্লব। অনাবাদি কিংবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি, যেখানে অন্য কোনো ফসল ভালো হতো না, সেসব জমিতে এখন সোনালী সম্ভাবনার ফসল হিসেবে গৃহীত হয়েছে ভুট্টা। দিনদিন এর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন নতুন কৃষকরাও। লাভজনক উৎপাদন, পশুখাদ্য হিসেবে বহুমুখী ব্যবহার এবং বিকল্প জ্বালানির উৎস হওয়ায় ভুট্টা চাষে এসেছে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর এই উপজেলায় প্রায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ হেক্টরে। কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী বছর এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সরকারি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ বছর উপজেলার ১০০ জন দরিদ্র কৃষককে ২২ কেজি করে উন্নত জাতের ভুট্টা বীজ, রাসায়নিক সার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছেন।
ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার কৃষকদের মাঝে এই ফসলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। সবুজ পাতাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, শুকনো কান্ড ও দানা ছাড়ানো মোচা ব্যবহার হচ্ছে জ্বালানির বিকল্প হিসেবে, যা কৃষকের খরচ কমাচ্ছে এবং পরিবেশবান্ধবও বটে।
তবে বারবার একই জমিতে ভুট্টা চাষ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন। তিনি বলেন, “ভুট্টার শিকড় মাটির অনেক গভীরে চলে যায় এবং সেখানকার পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। একই জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা চাষ করলে উপরিভাগের উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকে, যা ভবিষ্যতে ফলন হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা এড়াতে ঘূর্ণায়মান চাষপদ্ধতি বা ফসল পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক মৌসুম ভুট্টা চাষের পর অন্য মৌসুমে ডাল বা সবজি জাতীয় ফসল চাষ করলে মাটির পুষ্টি ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।”
ভুট্টা চাষি মজনু মিয়া বলেন, “আগে যে জমিতে অন্য কোন ফসলই ভালো হতো না। এখন সেই জমিতে ভুট্টা চাষ করে শুধু আর্থিক লাভই করছি না, গরুর খাবারও পাচ্ছি। রান্না করার জ্বালানিও পাচ্ছি।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভুট্টা চাষের এই প্রসারকে টেকসই করতে হলে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে জমির ব্যবস্থাপনা ও ফসল পরিবর্তন অপরিহার্য। তা না হলে সাময়িক লাভের পেছনে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
ভুট্টা চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে মির্জাপুরে, তবে এই সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ।