উত্তরের জনপদ নীলফামারীর সৈয়দপুর । পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় বর্তমানে কৃষি শ্রমিকের হাতে কাজ নেই। সৈয়দপুর সহ নীলফামারী জেলার ধান কাটতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। তাই তাঁরা দলবেঁধে বাইরের জেলায় যাচ্ছেন ধান কাটতে। ট্রেন, বাস,ও ট্রাকের উপরে বসে ছুটে চলেছেন গন্তব্যে। বাড়িতে পরিবার ও একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে ধানকাটা শ্রমিকদের এই পথচলা।
আগাম জাতের বোরো ধান পেকে যায় দক্ষিণের জেলাগুলোতে। এসময় প্রতিবছরই ওইসব জেলায় ধানকাটা শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দেয়। বিশেষ করে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় থাকে শ্রমিক সংকট। তাই উত্তরের হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক কাজের সন্ধানে ট্রেনে, বাসে ও খোলা পিকআপে চড়ে ওইসব এলাকায় ছুটছেন।
প্রতিদিন সকালে নীলফামারীসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুরেরা ভিড় করছেন উত্তরের রেলস্টেশনগুলোতে। বিশেষ করে চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে কৃষি শ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
এসব এলাকায় যে সব কৃষি শ্রমিক প্রতিবছর ধান কাটার জন্য যান, তাঁদের কাছে মোবাইল আসে দল নিয়ে যেতে হবে। নীলফামারীর সৈয়দপুরের খাতামধূপুর এলাকার দলনেতা আজগার আলী (৫৩) ও তাঁর ১২ জনের দল সৈয়দপুর স্টেশনে এসেছেন সকালের ট্রেন ধরতে। তিনি বলেন আক্কেলপুর এলাকায় আগাম জাতের ধান কাটতে যাই। সে এলাকার লোকজন আমাদের থাকা-খাওয়া ও ভালো মজুরী দিয়ে থাকেন। সেই টাকা এনে সংসারের খরচ ও ঋনের কিস্তি দিয়ে থাকি।
কৃষি শ্রমিক দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি এলাকার জামশেদ আলম (৪৫) জানান, পরিবারে সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর দাদন ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করার জন্য গ্রামের অন্য কৃষিশ্রমিকদের সাথে নাটোর জেলায় ধান কাটতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, গত বছর নওগাঁর আত্রাইয়ে ধান কাটতে গিয়েছিলাম। চুক্তিভিত্তিক ধান কাটতে গিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরি পেয়েছি। জমির মালিকরা রাতে থাকা ও তিনবেলা খাবার বহন করায় ভালো উপার্জন হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, কয়েকদিন ধরে খুলনা ও রাজশাহীগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো উত্তরের জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা ছুটছেন দক্ষিণাঞ্চলে। তিনি বলেন, আসনের কয়েক গুণ বেশি আসন ছাড়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, ধানকাটা শ্রমিকের কয়েকটি দলকে অর্ধেক ভাড়ায় বগুড়া, শাহজাদপুর, জয়পুরহাটে পাঠানো হয়েছে। যে সব শ্রমিক সুবিধার জন্য আসছেন, আমরা চেষ্টা করছি কৃষিশ্রমিকদের গন্তব্যে পাঠাতে। কেউ কেউ নিজেরা পিকআপ ভাড়া করে ও ট্রাকে চেপে কাজের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন জেলা উপজেলায়।