Dhaka ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রৌমারীতে স্বাস্থ্য সহকারীর অবহেলায় শিশুদের টিকা না পাওয়ার অভিযোগ

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের এক এলাকায় স্বাস্থ্য সহকারীর অবহেলায় শিশুদের টিকা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মো. আবু তাহের নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ২ নং ওয়ার্ডে ৮টি কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত তারিখে টিকা ও সরঞ্জাম গেলেও প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না স্বাস্থ্য সহকারী। এতে শিশুদের টিকা দেওয়া হয়নি। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে।  ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) মো. আবু তাহের।

বুধবার (৭ মে) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শৌলমারী ইউনিয়নের চেংষ্টাপাড়া গ্রামের মো. জহুরুল ইসলাম এর বাড়িতে টিকাদান কেন্দ্র। দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারি আবু তাহের ওই টিকাদান কেন্দ্রে ছিলেন না। তাই অভিভাবকরা টিকা না পেয়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে ফিরে যান। ওই সময়ে জহুরুলের বাড়ি টিকাদান কেন্দ্রের জন্য টিকা ও সরঞ্জাম এর বক্স ব্যক্তি বিহীন মাঠের ভিটা নামক স্থানে একটি বন্ধ দোকানের সামনে প্রখররোদে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তৎক্ষণাত বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে এই প্রতিবেদককে জনান।

গত কয়েক বছর থেকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারীর দায়িত্ব পালন করছেন মো. আবু তাহের। চলতি বছরের রবিবার ২৪ এপ্রিল তিনি টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়ার কথা থাকলেও কর্মস্থলে যাননি তিনি। একটি বিশ^স্ত সূত্র জানায় সেদিন তিনি কুড়িগ্রামে ছিলেন। ফলে হাসপাতাল থেকে পাঠানো টিকাসহ সরঞ্জাম হাসপাতালেই ফেরত যায়। যার কারণে সময় মতো টিকা পায়নি ওই এলাকার শিশুরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে শৌলমারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালমারী গ্রামের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, রোববার আমার ৩ মাসের শিশু সন্তানকে টিকা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। তবে টিকা প্রদানকারীরা এই কার্যক্রম না করায়  টিকা দেওয়া হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকা কবে দেওয়া হয় এটাও আমাদের জানানো হয় না। আগে মাইকিং করে জানালেও এখন আর এভাবে জানানো হয় না। যে কারণে অনেকেই তার শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা দিতে পারছেন না।  একই অভিযোগ তুলেছেন একই গ্রামের অনেকেই। অপরদিকে প্রায় গত সাত বছর থেকে হাসপাতাল কোয়াটাওে থাকছেন ওই স্বাস্থ্য সহকারি আবু তাহের। সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকতা কোয়াটার ছাড়ার জন্য অফিস আদেশ দিলেও এখন পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

কর্মস্থলে না গিয়ে দায়িত্বের অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সহকারী মো.আবু তাহের মুঠোফোনে বলেন, ওইদিন সেখানে আমাকে টিকা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা জানা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শক (ইনচার্জ) (এইচআই) মো. শাহজাহান আলী বলেন, ওই কেন্দ্রগুলোর জন্য নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ভ্যাকসিন টিকা ও সরঞ্জাম পাঠানো হয়। বুধবার সেখানে ভ্যাকসিন (টিকা) পাঠানো হলেও স্বাস্থ্য সহকারি কেনো যায়নি,সেটা আমি জানি না। বিষয়টি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহোদয়কে অবহিত করবো ।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ জানান, টিকা প্রদানে ওই স্বাস্থ্য সহকারী যায়নি এটাও শুনিনি। বিষয়টি খোঁজ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন স্বপন কুমার বিশ^াস এর সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্টাফদের মাঝে কিছু ঝামেলা রয়েছে। তাছাড়া টিকাদান বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সহকারিদের জন্য কোন কোয়াটার বরাদ্দ নেই, যদি কেউ কোয়াটারে থাকে সেটা অনিময়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

আত্রাইয়ে ইউপি মেম্বারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

রৌমারীতে স্বাস্থ্য সহকারীর অবহেলায় শিশুদের টিকা না পাওয়ার অভিযোগ

Update Time : ০৭:৫১:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের এক এলাকায় স্বাস্থ্য সহকারীর অবহেলায় শিশুদের টিকা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মো. আবু তাহের নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ২ নং ওয়ার্ডে ৮টি কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত তারিখে টিকা ও সরঞ্জাম গেলেও প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না স্বাস্থ্য সহকারী। এতে শিশুদের টিকা দেওয়া হয়নি। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে।  ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) মো. আবু তাহের।

বুধবার (৭ মে) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শৌলমারী ইউনিয়নের চেংষ্টাপাড়া গ্রামের মো. জহুরুল ইসলাম এর বাড়িতে টিকাদান কেন্দ্র। দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারি আবু তাহের ওই টিকাদান কেন্দ্রে ছিলেন না। তাই অভিভাবকরা টিকা না পেয়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে ফিরে যান। ওই সময়ে জহুরুলের বাড়ি টিকাদান কেন্দ্রের জন্য টিকা ও সরঞ্জাম এর বক্স ব্যক্তি বিহীন মাঠের ভিটা নামক স্থানে একটি বন্ধ দোকানের সামনে প্রখররোদে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তৎক্ষণাত বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে এই প্রতিবেদককে জনান।

গত কয়েক বছর থেকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারীর দায়িত্ব পালন করছেন মো. আবু তাহের। চলতি বছরের রবিবার ২৪ এপ্রিল তিনি টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়ার কথা থাকলেও কর্মস্থলে যাননি তিনি। একটি বিশ^স্ত সূত্র জানায় সেদিন তিনি কুড়িগ্রামে ছিলেন। ফলে হাসপাতাল থেকে পাঠানো টিকাসহ সরঞ্জাম হাসপাতালেই ফেরত যায়। যার কারণে সময় মতো টিকা পায়নি ওই এলাকার শিশুরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে শৌলমারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালমারী গ্রামের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, রোববার আমার ৩ মাসের শিশু সন্তানকে টিকা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। তবে টিকা প্রদানকারীরা এই কার্যক্রম না করায়  টিকা দেওয়া হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকা কবে দেওয়া হয় এটাও আমাদের জানানো হয় না। আগে মাইকিং করে জানালেও এখন আর এভাবে জানানো হয় না। যে কারণে অনেকেই তার শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা দিতে পারছেন না।  একই অভিযোগ তুলেছেন একই গ্রামের অনেকেই। অপরদিকে প্রায় গত সাত বছর থেকে হাসপাতাল কোয়াটাওে থাকছেন ওই স্বাস্থ্য সহকারি আবু তাহের। সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকতা কোয়াটার ছাড়ার জন্য অফিস আদেশ দিলেও এখন পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

কর্মস্থলে না গিয়ে দায়িত্বের অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সহকারী মো.আবু তাহের মুঠোফোনে বলেন, ওইদিন সেখানে আমাকে টিকা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা জানা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শক (ইনচার্জ) (এইচআই) মো. শাহজাহান আলী বলেন, ওই কেন্দ্রগুলোর জন্য নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ভ্যাকসিন টিকা ও সরঞ্জাম পাঠানো হয়। বুধবার সেখানে ভ্যাকসিন (টিকা) পাঠানো হলেও স্বাস্থ্য সহকারি কেনো যায়নি,সেটা আমি জানি না। বিষয়টি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহোদয়কে অবহিত করবো ।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ জানান, টিকা প্রদানে ওই স্বাস্থ্য সহকারী যায়নি এটাও শুনিনি। বিষয়টি খোঁজ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন স্বপন কুমার বিশ^াস এর সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্টাফদের মাঝে কিছু ঝামেলা রয়েছে। তাছাড়া টিকাদান বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সহকারিদের জন্য কোন কোয়াটার বরাদ্দ নেই, যদি কেউ কোয়াটারে থাকে সেটা অনিময়।