Dhaka ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৩ মে’র আগে স্বস্তি নেই, টাঙ্গাইলে তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চলমান তাপদাহে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে দিনের তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষ ও শিশু-বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মাসের গত তিনদিনে টাঙ্গাইলে সর্বো”চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না থাকায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপদাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আগামি ১৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস না থাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ফলে চলমান গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উ”চ রক্তচাপজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ কার্যালয়ে দিনে দুইবার অর্থাৎ সকাল ৬টা ও বিকাল ৩টায় আবহাওয়ার পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়। রোববার(১১ মে) বিকাল ৩টায় দিনের সর্বো”চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে ১০ মে(শনিবার) তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৯ মে (শুক্রবার) টাঙ্গাইলে সর্বো”চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদদের মতে, এটা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহেরই প্রভাব। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে এখন একটি গ্রীষ্মকালীন উ”চচাপ বলয় কাজ করছে- ফলে দিনের বেলায় সূর্যের তীব্রতা বাড়ছে এবং তাপমাত্রাও উঠা-নামা করছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না থাকায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপদাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আগামি ১৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস না থাকায় দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরম ও শুষ্ক বায়ু বইছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামি কয়েকদিন টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ১৩ মে বা তার পর কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে- যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল শহর এবং আশপাশের উপজেলাগুলোতে রোববার গরমে জনজীবনে ¯’বিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম ছিল। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই মাথায় কাপড় বা ছাতা ব্যবহার করছেন। প্রচন্ড গরমে রিকশাচালক, দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষজন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দিনমজুর আরিফুল ইসলাম, রাশিদুল হাসান, রিকশা চালক রহিম মিয়া, সারফুল ইসলাম, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক নুরুজ্জামান, খায়রুল আলম, বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়ার কৃষি শ্রমিক জামিল, আজগর আলী, নাজমুল আলম সহ অনেকেই জানান, গত তিন দিন ধরে প্রচুর গরম পড়ছে- গরমের প্রচন্ড তায় দুপুরের পর তারা আর কাজ করতে পারেন না। শরীর ঝিম ঝিম করে- ঘামে কাপড় ভিজে যায়। কিছু না খাটলে তো পরিবারের মুখে আহার তুলে দেওয়া হবেনা। তাই কষ্ট হলেও পরিশ্রম করছেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খায়রুল হাসান জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে তাপজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উ”চ রক্তচাপজনিত রোগী রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে বর্তমানে সমস্যা প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। প্রচন্ড তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিনি জানান, গরম থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সরাসরি রোদে না যাওয়া, হালকা ও সুতির কাপড় পরিধান করা এবং শিশু ও বয়ষ্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উ”চ পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আগামি ২৪-৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামি ১৩ মে’র আগে টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা উঠা-নামার মধ্যে অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কুড়িগ্রামের রৌমারী দুর্ধর্ষ ডাকাতি, পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট

১৩ মে’র আগে স্বস্তি নেই, টাঙ্গাইলে তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

Update Time : ০৫:৫৬:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চলমান তাপদাহে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে দিনের তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষ ও শিশু-বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মাসের গত তিনদিনে টাঙ্গাইলে সর্বো”চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না থাকায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপদাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আগামি ১৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস না থাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ফলে চলমান গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উ”চ রক্তচাপজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ কার্যালয়ে দিনে দুইবার অর্থাৎ সকাল ৬টা ও বিকাল ৩টায় আবহাওয়ার পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়। রোববার(১১ মে) বিকাল ৩টায় দিনের সর্বো”চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে ১০ মে(শনিবার) তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৯ মে (শুক্রবার) টাঙ্গাইলে সর্বো”চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদদের মতে, এটা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহেরই প্রভাব। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে এখন একটি গ্রীষ্মকালীন উ”চচাপ বলয় কাজ করছে- ফলে দিনের বেলায় সূর্যের তীব্রতা বাড়ছে এবং তাপমাত্রাও উঠা-নামা করছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না থাকায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপদাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আগামি ১৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস না থাকায় দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরম ও শুষ্ক বায়ু বইছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামি কয়েকদিন টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ১৩ মে বা তার পর কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে- যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল শহর এবং আশপাশের উপজেলাগুলোতে রোববার গরমে জনজীবনে ¯’বিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম ছিল। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই মাথায় কাপড় বা ছাতা ব্যবহার করছেন। প্রচন্ড গরমে রিকশাচালক, দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষজন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দিনমজুর আরিফুল ইসলাম, রাশিদুল হাসান, রিকশা চালক রহিম মিয়া, সারফুল ইসলাম, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক নুরুজ্জামান, খায়রুল আলম, বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়ার কৃষি শ্রমিক জামিল, আজগর আলী, নাজমুল আলম সহ অনেকেই জানান, গত তিন দিন ধরে প্রচুর গরম পড়ছে- গরমের প্রচন্ড তায় দুপুরের পর তারা আর কাজ করতে পারেন না। শরীর ঝিম ঝিম করে- ঘামে কাপড় ভিজে যায়। কিছু না খাটলে তো পরিবারের মুখে আহার তুলে দেওয়া হবেনা। তাই কষ্ট হলেও পরিশ্রম করছেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খায়রুল হাসান জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে তাপজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উ”চ রক্তচাপজনিত রোগী রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে বর্তমানে সমস্যা প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। প্রচন্ড তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিনি জানান, গরম থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সরাসরি রোদে না যাওয়া, হালকা ও সুতির কাপড় পরিধান করা এবং শিশু ও বয়ষ্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উ”চ পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আগামি ২৪-৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামি ১৩ মে’র আগে টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা উঠা-নামার মধ্যে অপরিবর্তিত থাকতে পারে।