Dhaka ০৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসের শেষ প্রান্তে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা

oplus_2

১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে উঠে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। গতদিনে এই কারখানায় ট্রেনের ইঞ্জিন ছাড়া ট্রেনের সব কিছুই তৈরি হলেও বর্তমানে রয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফ্যাসিষ্ট সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলেই ধ্বংস হয় এই কারখানাটি। অথচ এই কারখানার কারনেই রয়েছে সৈয়দপুরের সাথে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্হা। আর তাই রেলওয়ের পরিবহন খাতকে টিকিয়ে রাখতে কারখানার উন্নয়ন জরুরী।

রেলওয়ে বিভাগ জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কারণেই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবলের সংকট সৃষ্টি হয়। মাত্র ২২ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চলছে সবধরনের কার্যক্রম। সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় চাহিদা মোতাবেক মালামাল উৎপাদন  সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারখানায় পর্যাপ্ত দক্ষতা সম্পন্ন কারিগর ও উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারখানার অধিকাংশ শপ অচল হয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার ২৬টি (শপে) উপকারখানার সিংহভাগ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন।

দেশের বৃহৎ একারখানার মেশিন টুলস শপে সব যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবস্থা থাকলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা পার্সেন্টেজ চুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বাইরের ঠিকাদারের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগে সরবরাহের সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আর আমদানিকৃত মালামাল গুলো বিদেশ থেকে আমদানির কথা থাকলেও সেগুলো তৈরি করা হচ্ছে সৈয়দপুরের লেদ মেশিন দ্বারা।  এতে বাংলাদেশ রেলওয়ে যেমন নিম্নমানের মালামাল পেয়ে প্রতিবছর রেলওয়ের কোচ তৈরিতে দুর্নাম কুরাচ্ছে, তেমনি কারখানার দক্ষ কারিগররা কাজ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। এদিকে কারখানার কয়েকটি শপ ও ব্রীজসপটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মুল্যবান মেশিন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখিয়ে অনেক ভালো ভালো মেশিনকে অকেজোর নামে বিদেশ থেকে নতুন মেশিন ক্রয় করায় বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, আমদানিকৃত মেশিনগুলো, দক্ষ জনবলের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। এতে রেলওয়ের বিশাল অঙ্কের অর্থ অপচয় হয়েছে এবং হচ্ছে। একইভাবে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য করার মাধ্যমে দলীয় নেতারা উপকৃত হলেও নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দক্ষ না হওয়ায় কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা ব্যর্থ হয়েছে। আর অভিজ্ঞ লোকজন অবসরে যাওয়ার অজুহাতে শপগুলোর উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধু মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি ভিত্তিতে কয়েকটি কোম্পানিকে চুক্তি করে মেরামতের কাজ দেয়া হয়েছে। এসব কোম্পানির সিংহভাগ আওয়ামী ঘরানার। স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগ মোখছেদুল মোমিনের সঙ্গে ওইসব কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যোগসাজশে নামকাওয়াস্তে কাজ করে বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। একই অবস্থা রেলওয়ে সেতু কারখানারও। কারখানাটি প্রায় দুই যুগ ধরে সম্পুর্ন বন্ধ। দামি দামি মেশিনগুলো আগাছায় ছেয়ে গিয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। অথচ এই কারখানাতেই তৈরি হতো রেলপথের অতি জরুরি যন্ত্রাংশ পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ক্যাশভোল্ট, পানির ট্যাংক, ব্রিজ গার্ডার, রিপিটিং বোল্ডসহ নানা যন্ত্রপাতি। এখানে বেশ কয়েকটি মেশিন রয়েছে যা সামান্য মেরামত করা হলে পরিপূর্ণ কার্যক্ষম চলবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারখানাটির সব মালামাল ও মেশিনগুলো নষ্ট এবং অকার্যকর দেখিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।

এছাড়া সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের আওতায় ৭৯৯ একর জমিসহ বাংলো-কোয়াটার অধিকাংশই বেদখলে চলে গেছে। ১১০ একর জায়গায় কারখানার অবস্থান এবং ২৫ দশমিক ৭৫ একর জায়গা সৈয়দপুর পৌরসভার অধীনে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বাকি জায়গা বহিরাগত অবৈধ দখলাদারদের দখলে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এখানে রেলওয়ের কোনো আয় নেই, বরং হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে।
কারখানার শ্রমিক নেতা সাইফুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ২ হাজার ৪৮০টি ইউনিটের আবাসিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বাংলো, ২৬টি সাব-বাংলো এবং বাকিগুলো সিঙ্গেল ও ডাবল কোয়ার্টার। এসবের মধ্যে ৯০২টি ইউনিটে বৈধ রেলওয়ে চাকরিজীবীরা বসবাস করায় সেগুলো থেকে রাজস্ব আয় হলেও বাকি সব বহিরাগতদের দখলে। দলীয় প্রভাবে কোয়ার্টার, জায়গা দখল ও কেনাবেচা করে নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করছেন কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আইওডাব্লু, এইএন ও ডিএস।

রেলওয়ে কারখানার একটি সুত্র জানায়, যেহেতু কারখানায় দক্ষ কারিগর রয়েছে সেহেতু  কারখানার উন্নয়নের জন্য বাহিরের ঠিকাদারের মাধ্যমে যন্ত্রাংশ ক্রয় না করে কারখানাতেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হয়, তাহলে যেমন রাজস্ব সাশ্রয় হবে তেমনি শ্রমিক কর্মচারীরা উপকৃত হবেন। সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গফুর সরকার বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের সময় শ্রমিক নেতা ও কর্মকর্তারা মিলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তারা রেলওয়ের উন্নয়ন না করে নিজেদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ের স্থায়ী কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন সাধিত হবে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুদৃষ্টি দেবে বলে আমি আশা করছি। সুত্রটি আরো জানায়, রেলওয়ের এই কারখানায় কঠোর কোন কর্মকর্তা না থাকায়, কারখানার প্রধান ফটক সংলগ্ন  এরশাদ, গেটবাজার সংলগ্ন জাবেদ, ও গোলাহাট কবরস্থান দিয়ে আফতাব ও মকবুল নামের ব্যাক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই কারখানার দামি দামি যন্ত্রাংশ চুরি করছে। আর এসব ক্রয়ের পর বিক্রি করে  কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোজাম্মেলের জামাতা সোহেল নামের এক যুবক। সারা দেশে আওয়ামী নেতা ও দোষররা  গ্রেফতার আতংকে গা ঢাকা দিলেও আওয়ামী নেতা মোজাম্মেলের জামাতা বুক ফুলিয়ে কারখানার চোরাই কৃত লোহা ক্রয় করে চলেছে।

সৈয়দপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার আরো বলেন, শ্রমিক ও কাঁচামাল দিয়ে কারখানাকে সচল করতে হবে। বিগত সরকারের সময় কারখানাটিকে লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। গতদিনে টেন্ডার দিয়ে সাবেক ডিএস এবং ডাব্লুএম যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। যার কারণে বর্তমানে কারখানায় অচলাবস্থা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাজেট প্রদানের মাধ্যমে চাহিদা মতো মালামাল সরবরাহ করা এবং জনবল নিয়োগ দিয়ে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা হবে।সেই সাথে কারখানার লোহা চোররা সৈয়দপুর ছাড়া হয় সেজন্য কঠোর ব্যাবস্হাও নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ধ্বংসের শেষ প্রান্তে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা

Update Time : ০৬:১৮:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে উঠে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। গতদিনে এই কারখানায় ট্রেনের ইঞ্জিন ছাড়া ট্রেনের সব কিছুই তৈরি হলেও বর্তমানে রয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফ্যাসিষ্ট সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলেই ধ্বংস হয় এই কারখানাটি। অথচ এই কারখানার কারনেই রয়েছে সৈয়দপুরের সাথে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্হা। আর তাই রেলওয়ের পরিবহন খাতকে টিকিয়ে রাখতে কারখানার উন্নয়ন জরুরী।

রেলওয়ে বিভাগ জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কারণেই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবলের সংকট সৃষ্টি হয়। মাত্র ২২ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চলছে সবধরনের কার্যক্রম। সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় চাহিদা মোতাবেক মালামাল উৎপাদন  সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারখানায় পর্যাপ্ত দক্ষতা সম্পন্ন কারিগর ও উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারখানার অধিকাংশ শপ অচল হয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার ২৬টি (শপে) উপকারখানার সিংহভাগ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন।

দেশের বৃহৎ একারখানার মেশিন টুলস শপে সব যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবস্থা থাকলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা পার্সেন্টেজ চুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বাইরের ঠিকাদারের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগে সরবরাহের সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আর আমদানিকৃত মালামাল গুলো বিদেশ থেকে আমদানির কথা থাকলেও সেগুলো তৈরি করা হচ্ছে সৈয়দপুরের লেদ মেশিন দ্বারা।  এতে বাংলাদেশ রেলওয়ে যেমন নিম্নমানের মালামাল পেয়ে প্রতিবছর রেলওয়ের কোচ তৈরিতে দুর্নাম কুরাচ্ছে, তেমনি কারখানার দক্ষ কারিগররা কাজ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। এদিকে কারখানার কয়েকটি শপ ও ব্রীজসপটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মুল্যবান মেশিন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখিয়ে অনেক ভালো ভালো মেশিনকে অকেজোর নামে বিদেশ থেকে নতুন মেশিন ক্রয় করায় বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, আমদানিকৃত মেশিনগুলো, দক্ষ জনবলের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। এতে রেলওয়ের বিশাল অঙ্কের অর্থ অপচয় হয়েছে এবং হচ্ছে। একইভাবে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য করার মাধ্যমে দলীয় নেতারা উপকৃত হলেও নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দক্ষ না হওয়ায় কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা ব্যর্থ হয়েছে। আর অভিজ্ঞ লোকজন অবসরে যাওয়ার অজুহাতে শপগুলোর উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধু মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি ভিত্তিতে কয়েকটি কোম্পানিকে চুক্তি করে মেরামতের কাজ দেয়া হয়েছে। এসব কোম্পানির সিংহভাগ আওয়ামী ঘরানার। স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগ মোখছেদুল মোমিনের সঙ্গে ওইসব কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যোগসাজশে নামকাওয়াস্তে কাজ করে বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। একই অবস্থা রেলওয়ে সেতু কারখানারও। কারখানাটি প্রায় দুই যুগ ধরে সম্পুর্ন বন্ধ। দামি দামি মেশিনগুলো আগাছায় ছেয়ে গিয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। অথচ এই কারখানাতেই তৈরি হতো রেলপথের অতি জরুরি যন্ত্রাংশ পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ক্যাশভোল্ট, পানির ট্যাংক, ব্রিজ গার্ডার, রিপিটিং বোল্ডসহ নানা যন্ত্রপাতি। এখানে বেশ কয়েকটি মেশিন রয়েছে যা সামান্য মেরামত করা হলে পরিপূর্ণ কার্যক্ষম চলবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারখানাটির সব মালামাল ও মেশিনগুলো নষ্ট এবং অকার্যকর দেখিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।

এছাড়া সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের আওতায় ৭৯৯ একর জমিসহ বাংলো-কোয়াটার অধিকাংশই বেদখলে চলে গেছে। ১১০ একর জায়গায় কারখানার অবস্থান এবং ২৫ দশমিক ৭৫ একর জায়গা সৈয়দপুর পৌরসভার অধীনে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বাকি জায়গা বহিরাগত অবৈধ দখলাদারদের দখলে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এখানে রেলওয়ের কোনো আয় নেই, বরং হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে।
কারখানার শ্রমিক নেতা সাইফুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ২ হাজার ৪৮০টি ইউনিটের আবাসিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বাংলো, ২৬টি সাব-বাংলো এবং বাকিগুলো সিঙ্গেল ও ডাবল কোয়ার্টার। এসবের মধ্যে ৯০২টি ইউনিটে বৈধ রেলওয়ে চাকরিজীবীরা বসবাস করায় সেগুলো থেকে রাজস্ব আয় হলেও বাকি সব বহিরাগতদের দখলে। দলীয় প্রভাবে কোয়ার্টার, জায়গা দখল ও কেনাবেচা করে নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করছেন কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আইওডাব্লু, এইএন ও ডিএস।

রেলওয়ে কারখানার একটি সুত্র জানায়, যেহেতু কারখানায় দক্ষ কারিগর রয়েছে সেহেতু  কারখানার উন্নয়নের জন্য বাহিরের ঠিকাদারের মাধ্যমে যন্ত্রাংশ ক্রয় না করে কারখানাতেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হয়, তাহলে যেমন রাজস্ব সাশ্রয় হবে তেমনি শ্রমিক কর্মচারীরা উপকৃত হবেন। সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গফুর সরকার বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের সময় শ্রমিক নেতা ও কর্মকর্তারা মিলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তারা রেলওয়ের উন্নয়ন না করে নিজেদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ের স্থায়ী কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন সাধিত হবে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুদৃষ্টি দেবে বলে আমি আশা করছি। সুত্রটি আরো জানায়, রেলওয়ের এই কারখানায় কঠোর কোন কর্মকর্তা না থাকায়, কারখানার প্রধান ফটক সংলগ্ন  এরশাদ, গেটবাজার সংলগ্ন জাবেদ, ও গোলাহাট কবরস্থান দিয়ে আফতাব ও মকবুল নামের ব্যাক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই কারখানার দামি দামি যন্ত্রাংশ চুরি করছে। আর এসব ক্রয়ের পর বিক্রি করে  কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোজাম্মেলের জামাতা সোহেল নামের এক যুবক। সারা দেশে আওয়ামী নেতা ও দোষররা  গ্রেফতার আতংকে গা ঢাকা দিলেও আওয়ামী নেতা মোজাম্মেলের জামাতা বুক ফুলিয়ে কারখানার চোরাই কৃত লোহা ক্রয় করে চলেছে।

সৈয়দপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার আরো বলেন, শ্রমিক ও কাঁচামাল দিয়ে কারখানাকে সচল করতে হবে। বিগত সরকারের সময় কারখানাটিকে লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। গতদিনে টেন্ডার দিয়ে সাবেক ডিএস এবং ডাব্লুএম যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। যার কারণে বর্তমানে কারখানায় অচলাবস্থা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাজেট প্রদানের মাধ্যমে চাহিদা মতো মালামাল সরবরাহ করা এবং জনবল নিয়োগ দিয়ে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা হবে।সেই সাথে কারখানার লোহা চোররা সৈয়দপুর ছাড়া হয় সেজন্য কঠোর ব্যাবস্হাও নেয়া হবে বলে জানান তিনি।