Dhaka ১০:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ বন্ধ, আইসিইউ বন্ধ হওয়ার পথে 

চরম অর্থ সংকট ও টানাপোড়নে অবশেষে কক্সবাজার জেলার প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগ সিসিইউ বন্ধ হয়ে গেছে। টানা ৯ মাস ৩০ চিকিৎসক সহ ১৩০ জন কর্মচারি বিনা বেতনে সেবা প্রদান করে চালু রেখেছিল এই বিভাগটি। কিন্তু তা আর সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সিসিইউ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও বিষয়টি ৫মে উধ্বর্তন মহলকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবাধয়ক ডাক্তার মং টিং ঞো।বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প(এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের (এইচজিএস) অধীনে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে আন্তর্জাতিক ও দেশি বিভিন্ন এনজিও জেলাব্যাপী হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে ২০১৯ সালের শুরু থেকে। এতে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে  ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন করা হয়েছিল।
যার অধিনে হাসপাতালটিতে চালু করা হয়েছিল আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা কার্যক্রম। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম সহ নানাভাবে সংবাদ প্রকাশের পর সরকারি প্রচেষ্টায় প্রকল্পের মেয়াদ ৩ মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে।কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অপারেটিং (আইএসও) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নতুন একটি প্রকল্পের অনুমোদন হওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারিদের সাথে আলোচনা করে আইসিইউ, সিসিইউ সহ বিশেষায়িত বিভাগ সমুহ চালু করা হয়।
যেখানে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১ শত কর্মচারি ছিল। যারা গত ৯ মাস ধরে বিনা বেতনে সেবা প্রদান করে আসছিলেন এবং বিভাগ সমুহ চালু ছিল।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মুলত বিশেষায়িত বিভাগ সমুহ এনজিও’র উপর নির্ভরশীল। আইসিইউ ও সিসিইউ সহ কয়েকটি বিভাগ সরকারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের অধিনে না। গত জুন মাসে এসে এনজিও প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনমাস বাড়ানো হলেও পরে সেপ্টেম্বর এ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিনা বেতনে অনেকেই চালিয়ে গেছে প্রকল্প আসবে এই আশায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক   জটিলতার কারণে এখনো প্রকল্প আটকে আছে।
এর মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। এজন্য সিসিইউ বিভাগ বৃহস্পতিবার ডাক্তার এর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আইসিইউ এখনো চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বেতনে। তাও বন্ধ হতে পারে যে কোন মূহুর্তে।চিকিৎসকরা জানান, কক্সবাজার জেলার ২৫ লাখ মানুষের সঙ্গে ২০১৭ সালে যোগ হয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। আর প্রতিবছর কক্সবাজারে বেড়াতে আসে কয়েক লাখ পর্যটক। বিপুল জনগোষ্ঠীর উন্নত সেবার আধুনিক সেবা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে সরকারি মঞ্জুরি হওয়া ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি শূন্য রয়েছে। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী সেবার জন্য আসে। মাত্র তিনজন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ন্যূনতম সেবা চালু রাখতে হলে জরুরি বিভাগে অন্তত ১২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া ২৫০ শয্যার হলেও হাসপাতালে ইন্ডোরে গড় হিসাবে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী ভর্তি থাকে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কুড়িগ্রামের রৌমারী দুর্ধর্ষ ডাকাতি, পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ বন্ধ, আইসিইউ বন্ধ হওয়ার পথে 

Update Time : ০৩:৫০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
চরম অর্থ সংকট ও টানাপোড়নে অবশেষে কক্সবাজার জেলার প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগ সিসিইউ বন্ধ হয়ে গেছে। টানা ৯ মাস ৩০ চিকিৎসক সহ ১৩০ জন কর্মচারি বিনা বেতনে সেবা প্রদান করে চালু রেখেছিল এই বিভাগটি। কিন্তু তা আর সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সিসিইউ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও বিষয়টি ৫মে উধ্বর্তন মহলকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবাধয়ক ডাক্তার মং টিং ঞো।বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প(এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের (এইচজিএস) অধীনে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে আন্তর্জাতিক ও দেশি বিভিন্ন এনজিও জেলাব্যাপী হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে ২০১৯ সালের শুরু থেকে। এতে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে  ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন করা হয়েছিল।
যার অধিনে হাসপাতালটিতে চালু করা হয়েছিল আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা কার্যক্রম। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম সহ নানাভাবে সংবাদ প্রকাশের পর সরকারি প্রচেষ্টায় প্রকল্পের মেয়াদ ৩ মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে।কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অপারেটিং (আইএসও) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নতুন একটি প্রকল্পের অনুমোদন হওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারিদের সাথে আলোচনা করে আইসিইউ, সিসিইউ সহ বিশেষায়িত বিভাগ সমুহ চালু করা হয়।
যেখানে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১ শত কর্মচারি ছিল। যারা গত ৯ মাস ধরে বিনা বেতনে সেবা প্রদান করে আসছিলেন এবং বিভাগ সমুহ চালু ছিল।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মুলত বিশেষায়িত বিভাগ সমুহ এনজিও’র উপর নির্ভরশীল। আইসিইউ ও সিসিইউ সহ কয়েকটি বিভাগ সরকারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের অধিনে না। গত জুন মাসে এসে এনজিও প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনমাস বাড়ানো হলেও পরে সেপ্টেম্বর এ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিনা বেতনে অনেকেই চালিয়ে গেছে প্রকল্প আসবে এই আশায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক   জটিলতার কারণে এখনো প্রকল্প আটকে আছে।
এর মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। এজন্য সিসিইউ বিভাগ বৃহস্পতিবার ডাক্তার এর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আইসিইউ এখনো চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বেতনে। তাও বন্ধ হতে পারে যে কোন মূহুর্তে।চিকিৎসকরা জানান, কক্সবাজার জেলার ২৫ লাখ মানুষের সঙ্গে ২০১৭ সালে যোগ হয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। আর প্রতিবছর কক্সবাজারে বেড়াতে আসে কয়েক লাখ পর্যটক। বিপুল জনগোষ্ঠীর উন্নত সেবার আধুনিক সেবা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে সরকারি মঞ্জুরি হওয়া ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি শূন্য রয়েছে। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী সেবার জন্য আসে। মাত্র তিনজন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ন্যূনতম সেবা চালু রাখতে হলে জরুরি বিভাগে অন্তত ১২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া ২৫০ শয্যার হলেও হাসপাতালে ইন্ডোরে গড় হিসাবে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী ভর্তি থাকে।