Dhaka ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থানায় কাঁদছিলেন অসহায় বৃদ্ধা স্বজনদের খুজে পাচ্ছে না পুলিশ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে থানার ভেতরে একদিন ধরে স্বজনদের খোঁজে
কাঁদছিলেন অসহায় এক বৃদ্ধ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তার স্বজন খুজে পায়নি
কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। তার নাম পরিচয় পেলেও পাওয়া যাচ্ছে না স্বজনদের।
এতে বিড়ম্বনায় পড়লেও তার স্বজনদের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে চায়
পুলিশ।

ওই বৃদ্ধ হলেন, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার চাখার শরিয়াবাগপুর এলাকার
মৃত শমসের আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার (৭০)। তিনি কিছুটা মানসিক
ভারসম্যহীন অবস্থায় আছেন।

এলাকাবাসী, উপজেলা সমাজসেবা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অসহায় ওই
বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার গত কয়েক দিন ধরে কালিয়াকৈর উপজেলার হরতকিতলা
এলাকায় ঘুরাঘুরি করছিলেন। খেয়ে না খেয়ে ঘুরাঘুরি করার কারণে
শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়েছে পড়েছেন ওই বৃদ্ধ। দীর্ঘদিন গোসল-আছল না
করায় তার পরো শরীর জুড়ে আছে দুর্গন্ধও। এ অবস্থায় গত সোমবার বিকেলে
ভবঘুরে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন ওই এলাকার তাইজুল ইসলাম নামে মানবিক এক
ব্যক্তি। এসময় তিনি তাকে তার স্বজনদের কাছে পাঠানোর জন্য আকুতি-
মিনতি করে।

পরে কোনো উপায় না পেয়ে তাকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে
যান এলাকাবাসী। এসময় থানার ডিউটি অফিসার এসআই নিহারিকা ওই
বৃদ্ধকে নিয়ে থানার ভেতরে শিশু ও নারী ডেস্কে রাখেন। এসময় পুলিশের কাছে
তার নাম ও পরিচয় জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। এছাড়াও তার তিন ছেলের মধ্যে এক
ছেলের নাম হানিফ বলেও পুলিশকে জানান তিনি। কিন্তু তার নাম ও পরিচয়
পেয়ে ওই ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ খোঁজ-খবর নিলেও পাওয়া যাচ্ছে না
স্বজনদের। প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যান ওই বৃদ্ধসহ
তার স্বজনরা।

এতে ওই বৃদ্ধকে নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ে পুলিশ। এদিকে
একদিন ধরে থানার ভেতরে স্বজনদের খোঁজে কাঁদছেন অসহায় ওই বৃদ্ধ। তার
পুরো শরীরের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে থানার একটি কক্ষ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে।
এমন নানা বিড়ম্বনায় পড়লেও তার স্বজনদের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে চায়
পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তার স্বজনকে খোঁজে না পেয়ে পুলিশ উপজেলা
সমাজসেবা দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করে। খবর পেয়ে সমাজসেবা দপ্তরের
মাধ্যমে তাকে থানা থেকে নিয়ে বিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহের
আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

স্থানীয় হরতকিতলা জামে মসজিদের ইমাম রহুল আমিন জানান, গত সোমবার
বিকেলে তিনি আমাদের মসজিদের এখানে আসেন। এসময় তিনি তার নাম
পরিচয় ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। কিন্তু তিনি বার বার তার স্বজনদের
কাছে পৌছে দিতে অনুরোধ করছিলেন। এজন্য তাইজুল ইসলাম ভাইয়ের
মাধ্যমে আমরা তাকে থানায় দিয়ে আসি।

এব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ওই বৃদ্ধ
লোকের বিষয়ে থানা থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। এমন ভবঘুরে লোকদের
আমরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহের আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে থাকি। একটা
অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ওই আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
কালিয়াকৈর থানার তদন্ত ওসি জাফর আলী খান জানান, ওই বৃদ্ধ একজন ভবঘুরে।
তাকে উদ্ধার করে থানা দিয়ে যান এলাকাবাসী।

ওই বৃদ্ধকে স্বজনদের কাছে
ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তার দেওয়া নাম-ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ-খবর নিয়েও
সেখানে স্বজনদের পাওয়া যায়নি। তিনি ৩০-৩৫ বছর আগে তার স্বজনসহ
অন্যত্র চলে যান। সে ঠিকানা কেউ বলতে পারছেন না। পরে বাধ্য হয়েই তাকে
আমরা উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

খুলনার রূপসায় “৮ বছরের শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার অভিযোগে রজব গ্রেফতার

থানায় কাঁদছিলেন অসহায় বৃদ্ধা স্বজনদের খুজে পাচ্ছে না পুলিশ

Update Time : ০৫:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে থানার ভেতরে একদিন ধরে স্বজনদের খোঁজে
কাঁদছিলেন অসহায় এক বৃদ্ধ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তার স্বজন খুজে পায়নি
কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। তার নাম পরিচয় পেলেও পাওয়া যাচ্ছে না স্বজনদের।
এতে বিড়ম্বনায় পড়লেও তার স্বজনদের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে চায়
পুলিশ।

ওই বৃদ্ধ হলেন, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার চাখার শরিয়াবাগপুর এলাকার
মৃত শমসের আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার (৭০)। তিনি কিছুটা মানসিক
ভারসম্যহীন অবস্থায় আছেন।

এলাকাবাসী, উপজেলা সমাজসেবা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অসহায় ওই
বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার গত কয়েক দিন ধরে কালিয়াকৈর উপজেলার হরতকিতলা
এলাকায় ঘুরাঘুরি করছিলেন। খেয়ে না খেয়ে ঘুরাঘুরি করার কারণে
শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়েছে পড়েছেন ওই বৃদ্ধ। দীর্ঘদিন গোসল-আছল না
করায় তার পরো শরীর জুড়ে আছে দুর্গন্ধও। এ অবস্থায় গত সোমবার বিকেলে
ভবঘুরে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন ওই এলাকার তাইজুল ইসলাম নামে মানবিক এক
ব্যক্তি। এসময় তিনি তাকে তার স্বজনদের কাছে পাঠানোর জন্য আকুতি-
মিনতি করে।

পরে কোনো উপায় না পেয়ে তাকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে
যান এলাকাবাসী। এসময় থানার ডিউটি অফিসার এসআই নিহারিকা ওই
বৃদ্ধকে নিয়ে থানার ভেতরে শিশু ও নারী ডেস্কে রাখেন। এসময় পুলিশের কাছে
তার নাম ও পরিচয় জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। এছাড়াও তার তিন ছেলের মধ্যে এক
ছেলের নাম হানিফ বলেও পুলিশকে জানান তিনি। কিন্তু তার নাম ও পরিচয়
পেয়ে ওই ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ খোঁজ-খবর নিলেও পাওয়া যাচ্ছে না
স্বজনদের। প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যান ওই বৃদ্ধসহ
তার স্বজনরা।

এতে ওই বৃদ্ধকে নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ে পুলিশ। এদিকে
একদিন ধরে থানার ভেতরে স্বজনদের খোঁজে কাঁদছেন অসহায় ওই বৃদ্ধ। তার
পুরো শরীরের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে থানার একটি কক্ষ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে।
এমন নানা বিড়ম্বনায় পড়লেও তার স্বজনদের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে চায়
পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তার স্বজনকে খোঁজে না পেয়ে পুলিশ উপজেলা
সমাজসেবা দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করে। খবর পেয়ে সমাজসেবা দপ্তরের
মাধ্যমে তাকে থানা থেকে নিয়ে বিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহের
আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

স্থানীয় হরতকিতলা জামে মসজিদের ইমাম রহুল আমিন জানান, গত সোমবার
বিকেলে তিনি আমাদের মসজিদের এখানে আসেন। এসময় তিনি তার নাম
পরিচয় ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। কিন্তু তিনি বার বার তার স্বজনদের
কাছে পৌছে দিতে অনুরোধ করছিলেন। এজন্য তাইজুল ইসলাম ভাইয়ের
মাধ্যমে আমরা তাকে থানায় দিয়ে আসি।

এব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ওই বৃদ্ধ
লোকের বিষয়ে থানা থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। এমন ভবঘুরে লোকদের
আমরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহের আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে থাকি। একটা
অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ওই আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
কালিয়াকৈর থানার তদন্ত ওসি জাফর আলী খান জানান, ওই বৃদ্ধ একজন ভবঘুরে।
তাকে উদ্ধার করে থানা দিয়ে যান এলাকাবাসী।

ওই বৃদ্ধকে স্বজনদের কাছে
ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তার দেওয়া নাম-ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ-খবর নিয়েও
সেখানে স্বজনদের পাওয়া যায়নি। তিনি ৩০-৩৫ বছর আগে তার স্বজনসহ
অন্যত্র চলে যান। সে ঠিকানা কেউ বলতে পারছেন না। পরে বাধ্য হয়েই তাকে
আমরা উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।