ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ কয়েকটি সড়কে ব্যাপকভাবে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে মাইকিং ও নোটিশ দিয়েছে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওই মাইকিং ও নোটিশের পর অদৃশ্য ক্ষমতায় অবশেষে আটকেই গেল উচ্ছেদ অভিযানটি। এতে জনমনে নানা সমালোচনার ঝড় উঠলেও সরকারী সম্পদ দখল করে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে ফুরফুরে আছে অবৈধ দখলদাররা। তবে সরকারী সম্পদ রক্ষায় অতিদ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার আমলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি জবর-দখলের মাধ্যমে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আওয়ামী দোসরসহ অনেকেই। স্বৈরাচারী সরকার আমলে কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় বড়সর উচ্ছেদ অভিযান চালায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওই অভিযানে কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির প্রধান কার্যালয়সহ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বিএনপি কার্যালয়ের পাশে আওয়ামীলীগের দোসর আজিবর রহমানের বহুতল ভবন দৃশ্যমান রেখেই উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত করে সড়ক বিভাগ। বৈষম্যের ওই অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী।
অপর দিকে ব্যাপক সমালোচিত হন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পালা বদলে যেন জবর-দখল বাণিজ্যের শুধু হাত বদল ঘটে। বিএনপির কিছু নেতাকর্মী লাগামহীনভাবে জোরেসোড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি জবর-দখল শুরু করে। সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে প্রকাশ্যে সড়ক বিভাগের জমি জবর-দখলে নিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই মসজিদের পাশেই নিরীহ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের সরিয়ে টিনসেডের বিশাল অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বেশকিছু দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন গাজীপুর জেলা ট্রাক ও মিনি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জলিল উদ্দিন।
তার বিরুদ্ধে বরাদ্দ দিয়ে দোকান প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তার কথা বলে দোকান প্রতি মাসিক ভাড়া ৩ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। তবে এসব কথা অস্বীকার করেছেন জলিল উদ্দিন। এদিকে এসব জবর-দখল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একটি নোটিশ দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত ২৪ এপ্রিল গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার শরিফুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, কালিয়াকৈর বাজার রোড, কালিয়াকৈর বাস টার্মিনালসহ আশেপাশের এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্পত্তিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় ৩০এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে মাইকিংও করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এরপর অবৈধ দখলদাররা সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়টি জানালেও অদৃশ্য ক্ষমতায় অবশেষে আটকেই গেল সড়ক বিভাগের অভিযানটি। নির্ধারিত তারিখে অভিযান না হলে জনমনে নানা সমালোচনার ঝঁড় উঠে। আর সরকারী সম্পদ দখল করে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে ফুরফুরে হয়ে উঠেন অবৈধ দখলদাররা। তবে সরকারী সম্পদ রক্ষায় অতিদ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চান এলাকাবাসী।
উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের পিয়ন আমিনুল ইসলাম জানান, চোঁখের নিমিশেই আমাদের পার্টি অফিস গুড়িয়ে দেয় ফ্যাসিবাদী সরকার পন্থী সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন। অথচ আশে-পাশে আওয়ামী দোসরদের সরকারী জমিতে গড়ে উঠা অবৈধ বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙ্গেনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে টুটুল, শাজাহান মিয়া, আজাহারুল ইসলাম, শরীফ হোসেন, মজিবুর রহমান, মকবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে কাঁচামালের ব্যবসা করে আসছি। অথচ জলিল সাহেব টিনসেট ঘর করে আমাদের দোকান না দিয়ে বেশি টাকায় নতুন ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার শরিফুল আলমের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তার অফিসের জনৈক এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই স্যার কোন সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেন না। তবে ওই বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, উচ্ছেদ অভিযান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট পাইনি। যার কারণে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও দখলদাররাই বলেছেন ৩/৪ দিনের মধ্যে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিবে। যার কারণে গত বুধবারের অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।