কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনায় চারজন আটক হয়েছে। আটকৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলার তদন্তকারী এস আই সাইমুম প্রতিনিধি’কে বলেন, ১৫ মে ২০২৫ ইং বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে আটককৃতদের আদালতে রিমান্ড শুনানি শেষে এজাহার নামীয় আসামী রিপনকে জেলগেটে ১ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেন। উল্লেখ্য আসামী রিপনের কাছ থেকে চিকিৎসকের লুট হওয়া মালামালের মধ্যে নগদ ৪০০ হাজার টাকা, ২ টি মোবাইল ও ১ টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয় ।
তিনি আরও বলেন , মামলাটির আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন তদন্তশেষে । হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন ক্লু উদ্ধার না হলেও যেকোনো সময় নাটকীয় মোড় নিতে পারে। কুষ্টিয়াতে অবৈধ ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে মাদক, নারী এবং দালাল চক্রের কমিশন বানিজ্য থেকে ক্ষুব্ধ একটি চক্র হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে যায়, গত ৫ মে ২০২৪ ইং সোমবার দুপুরে শহরের কোর্টপাড়া এলাকার লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের সামনে একদল নারী ল্যাব কেয়ার ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক শারমিন সুলতানার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে মারধর করা সহ টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এ সময় হামলাকারীরা জানান, উক্ত চিকিৎসক তাদের কাছ থেকে চাকুরী, ভাতা ও জমি দেওয়ার নাম করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়েছেন। এখন সাত মাস ধরে কোন যোগাযোগ রাখতে চাচ্ছেন না। তারা টাকা আদায় করার জন্য ডাক্তার সাহেব কে ধরে নিয়ে যেতে এসেছেন। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হামলায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নারীসহ চিকিৎসক শারমিন সুলতানা কে হেফাজতে নেয়। ওই রাতেই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান উভয়পক্ষ। পরদিন তিনজন হামলাকারী নারীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী ডাক্তার মাসুদ রানা। শহরের কোটপাড়া অর্জুনদাস আগরওয়ালা সড়কে অবস্থিত লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের মালিক মোঃ শামীম প্রতিনিধি’কে বলেন, গত তিন বছর ধরে ডাক্তার শারমিন সুলতানা আমার ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন। দুই বছর আগে ডাক্তার শারমিন সুলতানা নিজেই একটি ক্লিনিক দেন। আমরা কল দিলেই তিনি এখানে এসে রোগী দেখেন। সেদিন সুমি নামের একজন রোগী সিরিয়াল দিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসায় আমরা ডাক্তার শারমিন সুলতানা কে কল দিই।তিনি আমার ক্লিনিকে আসার পর সুমির নেতৃত্বে একদল সঙ্ঘবদ্ধ মহিলারা ডাক্তারের উপর হামলা চালায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিক ব্যবসার সাথে জড়িত একজন জানান, ডাক্তার শারমিন সুলতানা ল্যাব কেয়ার ক্লিনিক তৈরী করার সময় মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মিলন নামের একজনকে পাটনার হিসেবে নিয়েছিলেন। কিছু দিন পর মিলন ক্লিনিকে নারীঘঠিত অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। একটি টিভি চ্যানেলে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মিলনের পার্টনারশিপ কিনে নিয়ে বিদায় দেন ডাক্তার শারমিন সুলতানা। এছাড়া ৫ মে হামলার পর অভিযুক্ত আটক সুমি কুষ্টিয়া মডেল থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর ডকুমেন্ট দেখান। সেখানে “শারমিন সুলতানা পুষ্প’ নামে একজনের নাম উল্লেখ আছে বলে জানান উপস্থিত সাংবাদিকরা। ক্লিনিক ব্যবসা,রোগী কমিশন বানিজ্য, প্রতারণা মূলক আর্থিক লেনদেন এই তিন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এক্ষেত্রে সুমির মতো হতদরিদ্র নারীদের ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা লুটছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য ঘটনার ২ দিন পর কুষ্টিয়ার ডাক্তারগণ এই ঘটনার তীব্রনিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধন করেন । কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোশাররফ হোসেন প্রতিনিধি’কে জানান, পুলিশ মামলাটি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে সত্য উৎঘাটনের চেষ্টা করছে। আশাকরি প্রকৃত অপরাধী যেই হোক সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।