সৈয়দপুরে ধলাগাছ মতির মোড় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাসস্হান গুলো জরাজীর্ণ না হলেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। নানাভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দাদের ভাগ্যের চাকা যেন কোন ভাবেই ঘুরছে না। ২০১৮ সালে তত্কালীন বাংলাদেশ সরকার সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীর সৈয়দপুরেও সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও ভুমিহীন পরিবারদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মতির মোড় সংলগ্ন নিচু জমিতে আবাসন প্রকল্পের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে।
একারনে ওই আবাসনে ১৫০ অসহায় পরিবারদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়। ওই বছরে মাত্র ৩ মাস অসহায় পরিবাররা ভালো ভাবে বসবাস করতে পারলেও বর্ষাকালে ওই আবাসন প্রকল্পের ঘরবাড়ির মেঝে পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। খরার সময় পানি শুকিয়ে গেলেও ড্রেন না থাকায় নোংরা পানি রাস্তায় জমে থাকছে সবসময়। এনিয়ে গতদিনে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একাধিক বার আবেদন করেও আবাসন বাসীদের সমস্যার সমাধান করা হয় নি।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করলেও সৈয়দপুরের ধলাগাছ মতির মোড় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের উন্নয়নের কোন ছোঁয়াই লাগেনি। যার কারনে এই আবাসনের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে অনত্র চলে গেছে। এবিষয়ে তদন্ত করলেই সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে।
স্হানীয়রা বলেন, প্রকল্পটি নির্মাণ করার সময় উপজেলা প্রসাশন ও ঠিকাদার পরিকল্পিত ভাবে আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণ না করার ফলে ওই আবাসনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা এলেই বৃষ্টির পনিতে রাস্তা ঘাট ও ঘরের মেঝে পর্যন্ত তলিয়ে যাচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্হা না থাকায় টয়লেট ও বাথরুমের নোংরা পানি ও সয়লাব হয়ে যাচ্ছে চলাচলের রাস্তায়। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবসহ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন না থাকায় যেখানে-সেখানে, ঝোপ-ঝাড়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে তাদের।
ওই আবাসনে বসবাসকারী জাবেদ আলীর স্ত্রী মিষ্টি( ৩৫) জানান, সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাওয়া তো দূরের কথা কোনোদিনও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান- মেম্বররাও খোঁজ-খবর নেন না। কিন্তু ভোটের সময় আসলে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আদর করে আদরের বোন, ভাবি ও খালা বলে ভোট নিতে আসেন। আর তারা নির্বাচিত হলেই সব ভুলে যান। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গরীব অসহায় পরিবারদের ঘরবাড়ি দিয়ে ভুলে যান আবাসন বাসিন্দারা কেমন আছেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আমরা আবাসন বাসীরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউই খোঁজ খবর রাখছেন না।
২০২৫ সালে চলমান এসএসসি পরিক্ষার্থী মেঘলা খাতুন (১৬) বলেন, গরীব ঘরে জন্ম নিয়েছি। একারনে আবাসনের নোংরা পরিবেশেই লেখাপড়া করে বড় হচ্ছি। আমরা গরীব হলেও যে আমাদের ভালো পরিবেশ দরকার তা কেউই মনে করেন না। গরীব হয়ে জন্ম নেয়াটা যে অভিশাপের তা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। তিনি আরো বলেন, জানতে পেরেছি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিক একজন ভালো মানুষ। গরীব অসহায়ের খেয়াল রাখেন তিনি। কিন্তু আমার জানাটা ভুল প্রমানীত হয়েছে। এই আবাসনের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করলেও একটি বারের জন্য ও দেখতে আসেননি। উন্নয়ন করা অনেক দুরের কথা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিক জানান, আবাসন প্রকল্পের সংস্কার বা উন্নয়নের জন্য বর্তমানে সরকারি কোন বরাদ্দ নেই। তাছাড়া আমি ২০২৪ সালে আমি সৈয়দপুর উপজেলায় দায়িত্ব পেয়েছি। এ উপজেলায় যোগদানের পর কেউই ওই আবাসন বাসিন্দাদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা বলে নি। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন যদি সরকারি বরাদ্দ হয়, তাহলে অবশ্যই আবাসনের পরিকল্পিত ভাবে উন্নত পরিবেশ তৈরি করা হবে।