রাজশাহীর তানোরে তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার চৌবাড়িয়া মালশিরা সিএনজি স্ট্যান্ডে ও শুক্রবার বিকেলে চৌবাড়িয়া হাটে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। সংঘর্ষে ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও তানোর পৌরসভার ছাত্র দলের নেতা শুভ আহত হন। সাইফুল কে গুরুতর অবস্থায় রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ইউপি বিএনপির সহসভাপতি মোজাম। এঘটনায় চৌবাড়িয়া হাটে গরু ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিক বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন ক্রেতা বিক্রেতারা। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। উভয় গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইউপি বিএনপির সহসভাপতি মোজাম জানান, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে। কারন তার বিল্ডিংয়ের ঢালায় শেষ হয়েছে। মিজানুর এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী তারেকের অনুসারী। দাওয়াতে উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আতিক, গাফফার সহ নেতাকর্মীরা খাওয়ার জন্য চৌবাড়িয়া মালশিরা মিশুক স্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়। এসময় ওয়ার্ড বিএনপির অঘোষিত নেতা সুলতান মদ পান করে দাওয়াত খেতে আসা নেতাকর্মীদের বলে তানোরে লোকজন এখানে কেন, তারা কি ঘোড়ার মাংস খেতে এসেছে। সুলতান মেজর জেনারেল (অব) শরীফ উদ্দিনের অনুসারী। সুলতানের এমন কথার প্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে মারপিট শুরু হয়। মারপিটে তানোর পৌর ছাত্র দলের নেতা সোহানুর রহমান শুভর মাথা ফেটে যায়। ১২ টার মত সেলাই লাগে । এঘটনার জেরে শুক্রবার বিকেল ৫ টার দিকে চৌবাড়িয়া হাটে গরু বিক্রি করা অবস্থায় ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে হাতুড়ি লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে টাকা মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তিনি আরো জানান, সাইফুল ৬ টা গরু বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যায়। ৫ টা গরু বিক্রি করা হয়েছে। এসময় শরিফ অনুসারী সুলতান ও মান্নান এবং পিন্টুর নেতৃত্বে সাইফুল কে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা টেনে হিচড়ে নেংটা করে নলপুকুরিয়া নামক জায়গায় নিয়ে আসে। তখনও সাইফুলের জ্ঞান ছিল। নলপুকুরিয়া নামক জায়গায় এনে বাশের লাঠি কিল ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে অজ্ঞান করে ফেলে। সংবাদ পেয়ে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
তবে সাবেক মেম্বার বিএনপি নেতা মান্নানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শুক্রবারের মারামারিতে আমি ছিলাম না। বৃহস্পতিবারে রাতে মারপিটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাত ১২ টার দিকে ফোন করে আমাকে জানায়।
তবে শরিফ অনুসারীদের দাবি, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়ার মাংসের পিকনিকের কথার জেরে সুলতানকে পিটিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সুলতানের লোকজন সংবাদ পেয়ে তাদের মারপিট করে।
সাইফুলের ভাগ্নে এনামুল জানান, ৬ টা গরুর মধ্যে ৫ টা গরু বিক্রি হয়েছিল। টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেই। একটা গরু নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।
সাইফুলের ছেলে সজিব জানান, সংবাদ পেয়ে তানোর মেডিকেলে এসে শুনি অবস্থা বেগতিক খারাপ এজন্য রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেছে।থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আফজাল হোসেন জানান, মারপিটের সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত আছে। এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত,, গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিল কে কেন্দ্র করে পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির মমিন ও মজিবুর গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মমিনের ভাই গানিউল চিকিৎসা ধীন অবস্থায় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় মারা যান। রমজান মাসের শেষের দিকে চান্দুড়িয়া ইউপিতে ইফতার পরে মফিজ ও আজাদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষক দলের ওয়ার্ড নেতা নেকচার আলী মারা যান। দুই হত্যার পর তানোরে বিএনপির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।