টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ১৪ টি দাখিল মাদ্রাসায় গোপনে চালু হয়েছে একটি বেসরকারি গাইড বই কোম্পানির বই পাঠ্য হিসেবে পড়ানোর প্রক্রিয়া। অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি ও আল-ফাতাহ পাবলিকেশন্স নামক একটি প্রকাশনীর মধ্যে গোপন চুক্তির মাধ্যমে এই গাইড বই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে।
সরজমিনে কয়েকটি মাদ্রাসায় দেখা গেছে, শিক্ষকরা ক্লাসে গাইড বই নিয়ে পাঠদান করছেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের আল-ফাতাহ গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন। এরই মধ্যে সকল মাদ্রাসায় আল-ফাতাহ পাবলিকেশন্স এর পক্ষ থেকে বুক লিস্ট এবং সিলেবাস বিতরণ করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ঐ বই থেকে করা হবে বলে জানা গেছে।
একজন মাদ্রাসার সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিবছর মাদ্রাসা শিক্ষকদের শিক্ষা সফরের খরচ প্রকাশনী বহন করে, আর এজন্যই শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গাইড বই ব্যবহারের চাপ আসে। বিষয়টি অনুচিত হলেও তারা বাধ্য হোন বলেও জানান।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, স্যার বলেছেন- এই গাইড বই না কিনলে পরীক্ষায় ফেল করব। তাই আমাদের কিনতে হয়। এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, আমার এক ছেলে হাই স্কুলে পড়ে। তাকে স্কুল থেকে লেকচার গাইড বই কিনতে বলেছে। মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। তাকে আল-ফাতাহ গাইড বই কিনতে বলেছে। এই দুই সেট গাইড বইয়ের দাম প্রায় দশ হাজার টাকা। আমার আয় কম; আমি কিভাবে কিনব বুঝতে পারতেছি না।
মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিমের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি চুক্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের শিক্ষক সমিতির প্রতিবছর শিক্ষা সফরের খরচ গাইড বই কোম্পানি দিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল
ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে আগে কিছুই জানতাম না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এভাবে চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির গাইড বই বিপণনে সহযোগিতা করায়, গাইড বই কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করে। অন্যদিকে অভিভাবকরা বাধ্য হন উচ্চ মূল্যে বই কিনতে। তাছাড়া গাইড বই শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, যা মেধাবিকাশের অন্তরায়।
সচেতন মহলের দাবি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি।