Dhaka ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছরের সড়ক সংস্কারের কাজ সারে ৩ বছরেও, শেষ হয়নি, টাকা নিয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা

নীলফামারীর সৈয়দপুরের পোড়াহাট হতে রংপুরের তারাগঞ্জ পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার  ও পাকাকরণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল পরের বছর। কিন্তু যথাসময়ে সময়ে শেষ  হয়নি কাজ।  দুই দফা বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ। এরপরও  ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ৬২ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার । সর্বশেষ ২০২৪ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় সংস্কার বন্ধ রয়েছে। এদিকে সড়ক সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন ১০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর  (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় উল্লেখিত জিসি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কটিতে যান চলাচলের সুবিধা বাড়াতে সংস্কারের জন্য ২০২২ জানুয়ারিতে  দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী  সৈয়দপুরের পোড়াহাট থেকে রংপুরের তারাগঞ্জ পর্যন্ত সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ হাজী মিজানুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান  মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স। কাজ শুরু হয় একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি।  চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে কাজ হয়েছে ১০ কিলোমিটার।এখনো ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি। তবে এরই মধ্যে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়,  সড়কটির  ১০ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো  ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ পড়ে রয়েছে। আবার অনেক স্থানে খোয়া বিছানো হলেও  কার্পেটিং করা হয়নি। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ধসে ও ভেঙে গেছে।  অনেক জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে তাতে পানি জমে এবং শুকনা মৌসুমে ওড়ে ধুলা। অনেক জায়গায় বালু ও খোয়া ফেলে ভরাট করা হলেও  রোলার করা হয়নি। ফলে খোয়ার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলার হাজারিহাট গ্রামের বাসিন্দা সুলতান হোসেন বলেন, সাড়ে ৩ বছর থাকি ধুলো-কাদা খায়া হামার দিন যায়ছে। রাস্তার কাম আর শেষ হয়ছে না। রাস্তা খারাপ আছিল, কিন্তু এত খারাপ তো আছিলনা।

একই উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়িনের ডাঙাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী  বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই রাস্তার এ অবস্থা। কিন্তু এ সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ রাস্তায়  শিশুদের স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এম এম আলী রেজা রাজু বলেন, ‘ এ পর্যন্ত সড়কটির ৬৫ শতাংশ কাজ  হয়েছে।  চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে এই রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। মুঠোফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

এক বছরের সড়ক সংস্কারের কাজ সারে ৩ বছরেও, শেষ হয়নি, টাকা নিয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা

Update Time : ০৮:২৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুরের পোড়াহাট হতে রংপুরের তারাগঞ্জ পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার  ও পাকাকরণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল পরের বছর। কিন্তু যথাসময়ে সময়ে শেষ  হয়নি কাজ।  দুই দফা বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ। এরপরও  ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ৬২ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার । সর্বশেষ ২০২৪ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় সংস্কার বন্ধ রয়েছে। এদিকে সড়ক সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন ১০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর  (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় উল্লেখিত জিসি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কটিতে যান চলাচলের সুবিধা বাড়াতে সংস্কারের জন্য ২০২২ জানুয়ারিতে  দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী  সৈয়দপুরের পোড়াহাট থেকে রংপুরের তারাগঞ্জ পর্যন্ত সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ হাজী মিজানুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান  মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স। কাজ শুরু হয় একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি।  চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে কাজ হয়েছে ১০ কিলোমিটার।এখনো ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি। তবে এরই মধ্যে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়,  সড়কটির  ১০ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো  ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ পড়ে রয়েছে। আবার অনেক স্থানে খোয়া বিছানো হলেও  কার্পেটিং করা হয়নি। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ধসে ও ভেঙে গেছে।  অনেক জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে তাতে পানি জমে এবং শুকনা মৌসুমে ওড়ে ধুলা। অনেক জায়গায় বালু ও খোয়া ফেলে ভরাট করা হলেও  রোলার করা হয়নি। ফলে খোয়ার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলার হাজারিহাট গ্রামের বাসিন্দা সুলতান হোসেন বলেন, সাড়ে ৩ বছর থাকি ধুলো-কাদা খায়া হামার দিন যায়ছে। রাস্তার কাম আর শেষ হয়ছে না। রাস্তা খারাপ আছিল, কিন্তু এত খারাপ তো আছিলনা।

একই উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়িনের ডাঙাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী  বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই রাস্তার এ অবস্থা। কিন্তু এ সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ রাস্তায়  শিশুদের স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এম এম আলী রেজা রাজু বলেন, ‘ এ পর্যন্ত সড়কটির ৬৫ শতাংশ কাজ  হয়েছে।  চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে এই রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। মুঠোফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’