Dhaka ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নকল হাইব্রিড ধানে ভোলায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ

ভোলার লালমোহনে নকল হাইব্রিড ধানের ফাঁদে পড়ে কৃষকের ৩২ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। উচ্চ ফলনশীল মনে করে তারা নকল ধানের ফাঁদে পরে বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চলতি মৌসূমে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামে ২০ জন কৃষক হাইব্রিড ধান রোপণ করেন। কিন্তু চারা থেকে ধান বের হওয়ার পর শীষ শুকিয়ে সব ধান সাদা হয়ে ক্ষেতে নেতিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, দেবীর চর বাজারের বীজ ব্যবসায়ী কামালের কাছ থেকে কৃষকরা এ ধান কিনেছেন। ধান নষ্ট হওয়ার পর কৃষকরা বুঝতে পারেন এগুলো নকল হাইব্রিড ধান। মাদার এগ্রোসিভ কোম্পানির হাইব্রিড ধান ২ (উইন ৩০৫) জাতের প্যাকেট নকল করে একটি চক্র সারাদেশে এ ধানের বীজ বিক্রি করে। বীজ ব্যবসায়ী কামালও জানান, তিনি উপজেলার ডাওরী বাজারের জসিম ডিলারের দোকান থেকে এ ধান পাইকারি কিনে নিয়ে বিক্রি করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি এগুলো নকল ছিলো।

বদরপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কাজিরাবাদ গ্রামের মাহবুব মাতাব্বর জানান, তিনি প্রায় ১ একর জমিতে এই ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে প্রতি গ-ায় স্বাভাবিকভাবে ধান হওয়ার কথা ৭ থেকে ৮ মন করে। সেখানে এই ধান চাষ করে ধান পেয়েছেন প্রতি গন্ডায় দেড় মনের মতো। একই অভিযোগ করেন আমির হোসেন আব্বাস নামে আরেকজন কৃষক। তিনি ৬ গন্ডা জমিতে এই ধান রোপণ করেন। ধান বের হওয়ার পর এ অবস্থা দেখে তিনি ক্ষেত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ধান কাটেননি।

অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সর্বনাশ করেছে এ নকল ধান বিক্রি করে। প্রতি কেজি ধান ৪৭০ টাকা করে কিনেছিলেন। এই ধান হাইব্রিড জাতের বলা হয়েছিলো। ১ কেজি ধান ২ গন্ডা জমিতে রোপণ করা যায়। প্রতি গন্ডায় ৭ থেকে ৮ মন ধান হওয়ার কথা। এখন ধান সর্বোচ্চ দেড় মন থেকে ২ মন করে হতে পারে।

আরেক কৃষক নয়ন মিয়া জানান, এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত যা খরচ হয়েছে সবই লোকশান হলো এই ধানের বীজের কারণে। ধানগুলো অধিকাংশই শীষ কাত হয়ে ক্ষেতে পরে আছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু হাসনাইন জানান, কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। প্যাকেট নকল করে হাইব্রিড জাতের ধান বলে বিক্রি করা হলেও আসলে ছিলো উপসী জাতের ধান। ওই ধান এ অঞ্চলে এখন ফলন হয় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

নকল হাইব্রিড ধানে ভোলায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ

Update Time : ০৮:২০:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ভোলার লালমোহনে নকল হাইব্রিড ধানের ফাঁদে পড়ে কৃষকের ৩২ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। উচ্চ ফলনশীল মনে করে তারা নকল ধানের ফাঁদে পরে বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চলতি মৌসূমে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামে ২০ জন কৃষক হাইব্রিড ধান রোপণ করেন। কিন্তু চারা থেকে ধান বের হওয়ার পর শীষ শুকিয়ে সব ধান সাদা হয়ে ক্ষেতে নেতিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, দেবীর চর বাজারের বীজ ব্যবসায়ী কামালের কাছ থেকে কৃষকরা এ ধান কিনেছেন। ধান নষ্ট হওয়ার পর কৃষকরা বুঝতে পারেন এগুলো নকল হাইব্রিড ধান। মাদার এগ্রোসিভ কোম্পানির হাইব্রিড ধান ২ (উইন ৩০৫) জাতের প্যাকেট নকল করে একটি চক্র সারাদেশে এ ধানের বীজ বিক্রি করে। বীজ ব্যবসায়ী কামালও জানান, তিনি উপজেলার ডাওরী বাজারের জসিম ডিলারের দোকান থেকে এ ধান পাইকারি কিনে নিয়ে বিক্রি করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি এগুলো নকল ছিলো।

বদরপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কাজিরাবাদ গ্রামের মাহবুব মাতাব্বর জানান, তিনি প্রায় ১ একর জমিতে এই ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে প্রতি গ-ায় স্বাভাবিকভাবে ধান হওয়ার কথা ৭ থেকে ৮ মন করে। সেখানে এই ধান চাষ করে ধান পেয়েছেন প্রতি গন্ডায় দেড় মনের মতো। একই অভিযোগ করেন আমির হোসেন আব্বাস নামে আরেকজন কৃষক। তিনি ৬ গন্ডা জমিতে এই ধান রোপণ করেন। ধান বের হওয়ার পর এ অবস্থা দেখে তিনি ক্ষেত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ধান কাটেননি।

অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সর্বনাশ করেছে এ নকল ধান বিক্রি করে। প্রতি কেজি ধান ৪৭০ টাকা করে কিনেছিলেন। এই ধান হাইব্রিড জাতের বলা হয়েছিলো। ১ কেজি ধান ২ গন্ডা জমিতে রোপণ করা যায়। প্রতি গন্ডায় ৭ থেকে ৮ মন ধান হওয়ার কথা। এখন ধান সর্বোচ্চ দেড় মন থেকে ২ মন করে হতে পারে।

আরেক কৃষক নয়ন মিয়া জানান, এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত যা খরচ হয়েছে সবই লোকশান হলো এই ধানের বীজের কারণে। ধানগুলো অধিকাংশই শীষ কাত হয়ে ক্ষেতে পরে আছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু হাসনাইন জানান, কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। প্যাকেট নকল করে হাইব্রিড জাতের ধান বলে বিক্রি করা হলেও আসলে ছিলো উপসী জাতের ধান। ওই ধান এ অঞ্চলে এখন ফলন হয় না।