Dhaka ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ধর্ষণ মামলায় আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার অপহরণ মামলা

নওগাঁর মান্দায় ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আবারো জোরপূর্বক ছাত্রী দোলাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় সেই ভাইরাল শিক্ষক আকরাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে ওই ছাত্রীর বাবা। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল হক বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে সেই প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মুনসুর রহমান

অভিযুক্ত আকরাম মণ্ডল উপজেলার হাজীগোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলী মণ্ডলের ছেলে ও মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অপর অভিযুক্ত ফারুক হোসেন একই গ্রামের মোকলেছার রহমানের ছেলে।

জানা যায়, তার বিদ্যালয়ের সাড়ে ১৬ বছর বয়সী এসএসসি পরীক্ষার্থী দোলাকে বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করেন এবং তাকে ভূয়া বিয়ে করেন। এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। সেই অভিযোগের তদন্তের সময় বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। ওই ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে মান্দা থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা। মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম মণ্ডল ও তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়। মামলার পর সে পলাতক ছিলেন। পরে র‌্যাব ও মান্দা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গত (১মে) বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটোরের বনপাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। সে গতকাল জেল থেকে জামিনে বেড়িয়ে আসে। এ সময় আমার মেয়ে আমার বাড়িতে অবস্থান করিতেছিল। গতকাল দুপুর দেড় টার দিকে আমার মেয়ে আমার বসত বাড়ীর সামনে মাটির রাস্তায় বের হতেই পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আকরাম মণ্ডল, ফারুক হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের সহায়তায় আমার মেয়েকে জোর পূর্বক মোটর সাইকেলে করে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, গত ২৬ মার্চ (বুধবার) মুক্তিযোদ্ধা বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন ফুঁসে ওঠেন। এরপর প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের অপসারণসহ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। তার এসব কুকীর্তির ঘটনায় এলাকাবাসি মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন। এরপর গতকাল আবারও তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল হক বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলছিলো সেখানে আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি। এর মধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে। আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। সেজন্য আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে আমার বাড়ি থেকে আমার মেয়েকে জোড় পূর্বকভাবে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় আকরাম মাষ্টার ও তার ক্যাডার বাহিনীরা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। তাকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

নওগাঁয় ধর্ষণ মামলায় আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার অপহরণ মামলা

Update Time : ১০:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

নওগাঁর মান্দায় ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আবারো জোরপূর্বক ছাত্রী দোলাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় সেই ভাইরাল শিক্ষক আকরাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে ওই ছাত্রীর বাবা। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল হক বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে সেই প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মুনসুর রহমান

অভিযুক্ত আকরাম মণ্ডল উপজেলার হাজীগোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলী মণ্ডলের ছেলে ও মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অপর অভিযুক্ত ফারুক হোসেন একই গ্রামের মোকলেছার রহমানের ছেলে।

জানা যায়, তার বিদ্যালয়ের সাড়ে ১৬ বছর বয়সী এসএসসি পরীক্ষার্থী দোলাকে বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করেন এবং তাকে ভূয়া বিয়ে করেন। এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। সেই অভিযোগের তদন্তের সময় বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। ওই ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে মান্দা থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা। মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম মণ্ডল ও তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়। মামলার পর সে পলাতক ছিলেন। পরে র‌্যাব ও মান্দা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গত (১মে) বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটোরের বনপাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। সে গতকাল জেল থেকে জামিনে বেড়িয়ে আসে। এ সময় আমার মেয়ে আমার বাড়িতে অবস্থান করিতেছিল। গতকাল দুপুর দেড় টার দিকে আমার মেয়ে আমার বসত বাড়ীর সামনে মাটির রাস্তায় বের হতেই পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আকরাম মণ্ডল, ফারুক হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের সহায়তায় আমার মেয়েকে জোর পূর্বক মোটর সাইকেলে করে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, গত ২৬ মার্চ (বুধবার) মুক্তিযোদ্ধা বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন ফুঁসে ওঠেন। এরপর প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের অপসারণসহ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। তার এসব কুকীর্তির ঘটনায় এলাকাবাসি মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন। এরপর গতকাল আবারও তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল হক বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলছিলো সেখানে আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি। এর মধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে। আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। সেজন্য আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে আমার বাড়ি থেকে আমার মেয়েকে জোড় পূর্বকভাবে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় আকরাম মাষ্টার ও তার ক্যাডার বাহিনীরা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। তাকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।