Dhaka ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান 

নীলফামারীর সৈয়দপুরের কুমারগাড়ী দাখিল মাদ্রাসার চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে জুন মাসে। শেষ হওয়ার কথা পরের বছর ডিসেম্বরে। কিন্তু ৫ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। তিন দফা বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ। এরপরও ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ঠিকাদার ৮০ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন বলে জানা যায় ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে শিডিউল করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণাধীন ভবন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেখানে চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ।
মাদ্রাসা ও নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদ্রসাটিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২৮৫ জন। শিক্ষক ১৩ জন ও কর্মচারী ৩ জন। শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে শ্রেণিকক্ষ সংকট দেখা দেয়। এ সংকট দূর করতে পুরাতন একটি জরাজীর্ণ ভবনের ৬ টি শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে সেই জায়গায় ১২ কক্ষ বিশিষ্ট চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসা সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা ১৯ পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এন্ড জিন্নাত আলী জিন্নাহ (জেভি)। কাজ শুরু হয় একই বছরের ১৭ জুন । চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নির্মাণসগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২১ সাল থেকে ৩ বছর কাজ বন্ধ রাখে। পরর্তীতে ২০২৩ সালে পুনরায় কাজ শুরু করার মাত্র ৩ মাসের মাথায় আবারো কাজ বন্ধ করে দেন। ২৫ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চারতলা ওই বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন ওই ভবনজুড়ে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে শিডিউল করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পুরাতন টিনশেট যে ভবনটি রয়েছে তাও অত্যন্ত জরাজীর্ণ। চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার, নবম শ্রেণির ছাত্রী মনি আক্তার ও ৭ম শ্রেণির ছাত্র আমির হামজা জানায় তারা এই মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছে নির্মাণাধীন চারতলা ওই ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে চরম কষ্টে তাদের পড়াশোনা চলছে। বেশিরভাগ সময় তাদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। শীত, ঝড়-বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সময় তাদের নিয়মিত পড়াশোনা ব্যাহত হয়। তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এই মাদ্রাসার পড়া অবস্থায় মনে হয়না তাদের এ নতুন ভবনে ক্লাস করার সৌভাগ্য হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম ও রিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা যেভাবে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি, তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণিকক্ষের অভাবে জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের এক রুমে আলাদা দুটি শ্রেনির শিক্ষার্থী বসিয়ে গাদাগাদি করে ক্লাস নেয়া ছাড়াও খোলা আকাশের নিচে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তাছাড়াও জরাজীর্ণ পুরাতন টিনের চালার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে।
এ নিয়ে কথা হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজেরুল ইসলামের সাথে।তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভবনটির ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বিষয়ে এর আগে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললে তারা আমদের চলতি বছরের আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানান। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে চুক্তি বাতিল করে অবশিষ্ট কাজের জন্য আবার দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করা হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

সৈয়দপুরে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান 

Update Time : ০৬:২০:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
নীলফামারীর সৈয়দপুরের কুমারগাড়ী দাখিল মাদ্রাসার চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে জুন মাসে। শেষ হওয়ার কথা পরের বছর ডিসেম্বরে। কিন্তু ৫ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। তিন দফা বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ। এরপরও ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ঠিকাদার ৮০ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন বলে জানা যায় ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে শিডিউল করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণাধীন ভবন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেখানে চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ।
মাদ্রাসা ও নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদ্রসাটিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২৮৫ জন। শিক্ষক ১৩ জন ও কর্মচারী ৩ জন। শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে শ্রেণিকক্ষ সংকট দেখা দেয়। এ সংকট দূর করতে পুরাতন একটি জরাজীর্ণ ভবনের ৬ টি শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে সেই জায়গায় ১২ কক্ষ বিশিষ্ট চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসা সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা ১৯ পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এন্ড জিন্নাত আলী জিন্নাহ (জেভি)। কাজ শুরু হয় একই বছরের ১৭ জুন । চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নির্মাণসগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২১ সাল থেকে ৩ বছর কাজ বন্ধ রাখে। পরর্তীতে ২০২৩ সালে পুনরায় কাজ শুরু করার মাত্র ৩ মাসের মাথায় আবারো কাজ বন্ধ করে দেন। ২৫ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চারতলা ওই বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন ওই ভবনজুড়ে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে শিডিউল করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পুরাতন টিনশেট যে ভবনটি রয়েছে তাও অত্যন্ত জরাজীর্ণ। চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার, নবম শ্রেণির ছাত্রী মনি আক্তার ও ৭ম শ্রেণির ছাত্র আমির হামজা জানায় তারা এই মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছে নির্মাণাধীন চারতলা ওই ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে চরম কষ্টে তাদের পড়াশোনা চলছে। বেশিরভাগ সময় তাদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। শীত, ঝড়-বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সময় তাদের নিয়মিত পড়াশোনা ব্যাহত হয়। তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এই মাদ্রাসার পড়া অবস্থায় মনে হয়না তাদের এ নতুন ভবনে ক্লাস করার সৌভাগ্য হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম ও রিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা যেভাবে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি, তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণিকক্ষের অভাবে জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের এক রুমে আলাদা দুটি শ্রেনির শিক্ষার্থী বসিয়ে গাদাগাদি করে ক্লাস নেয়া ছাড়াও খোলা আকাশের নিচে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তাছাড়াও জরাজীর্ণ পুরাতন টিনের চালার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে।
এ নিয়ে কথা হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজেরুল ইসলামের সাথে।তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভবনটির ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বিষয়ে এর আগে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললে তারা আমদের চলতি বছরের আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানান। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে চুক্তি বাতিল করে অবশিষ্ট কাজের জন্য আবার দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করা হবে।