গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় কোরবানী পশু প্রস্তুত করছেন বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী খামারীরা। এসব অনৈতিক পন্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে শিল্পকারখানার পরিত্যক্ত জুটের তুলা। এ ধরণের পশুর মাংস খেয়ে মানুষের নানা ধরণের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তারপরেও চাহিদার তুলনায় এবার কোরবানীর পশু ঘাটতি রয়েছে। তবে এ ঘাটতি পূরণে অন্য জেলা-উপজেলার ওপরই ভরসার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী, স্থায়ী-অস্থায়ী খামারী ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের পর বিদেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে সরকার। দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানীর চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে। সে সুবাদে কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৪৪২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর খামার রয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকার ১/২টি করে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন পালন করেন কৃষকরা। এসব পশুকে ঘাস জাতীয় স্বাভাবিক খাবার ও স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম। কিন্তু বেশি লাভের আশায় অনৈতিক পন্থায় গরুকে দ্রুত মোটাতাজা করণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার বেশিরভাগ অসৎ অর্থলোভী খামারীসহ কৃষকরা। তারা স্বাভাবিক খাদ্যের সাথে বিশেষ করে গরুকে অধিকমাত্রায় কৃত্রিম খাবার খাওয়াচ্ছেন। এমন কি গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির ফিড ও শিল্পকারখানার পরিত্যক্ত জুটের তুলাও। এক্ষেত্রে ভিটামিন, স্টেরয়েড, আয়রনজাতীয় ওষুধ, সার মিশ্রিত খড় খাওয়ানো ছাড়াও প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষতিকর ট্র্যাবলেট ও ইনজেকশনও। এসব কৃত্রিম খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাটবাজারের বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এটা যেন দেখার কেউ নেই। অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একাধিক পশু চিকিৎসক জানিয়েছেন, গবাদিপশুর ওষুধ উৎপাদানে ভেটেরিনারী বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
দ্রুত সময়ে অধিক লাভের আশায় মানবদেহের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ খাতে ঝুঁকছে। আর বেশি দামের আশায় কম সময় ও স্বল্প বিনিয়োগে গরু-মহিষ মোটাতাজাকরণে এ অনৈতিক পন্থা বেছে নিচ্ছেন অনেক খামারী। এদিকে এ উপজেলায় এবার ২০ হাজার ৫৩১টি কোরবানী পশুর চাহিদা থাকলে প্রস্তুত আছে ১৯ হাজার ১৬৭টি। এগুলো হচ্ছে, গরু ৮ হাজার ১৩৩টি, মহিষ ১৩১টি, ছাগল ১০ হাজার ৬৪৬টি, ভেড়া ২৫৭টি। অনৈতিক পন্থায় কোরবানী পশু প্রস্তুত হলেও এবার চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি। প্রতি বছর কোরবানি দাতা ও পালনকারী কমে যাওয়ার কারণেই ঘাটতি থাকে পশু। এবছর পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত করা হলেও পশু ঘাটতিতে বিরম্ভনার শিকার হতে পারেন ক্রেতারা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ব্যবসায়ীরা পশু এনে এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। পাশাপাশি পাশর্^বর্তী জেলা-উপজেলাগুলো থেকে পশু এনে এখানকার ঘাটতি পূরণ করা হবে।
খামারী জুলহাস উদ্দিন বলেন, পশু চিকিৎসকরা যদি আরো বেশি আমাদের সহযোগিতা করতেন, তাহলে আরো বেশি পশু উৎপাদন হতো। এতে করে খামার মালিকরাও বেশি লাভবান হতে পারতেন। আশরাফ আলী নামে অপর খামারী বলেন, পশু পালনে খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। ফলে দিন দিন গবাদিপশু পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন খামারীরা। স্থানীয় ইউনুছ সরকার, আমজাদ হোসেন, মফিজুর রহমান, হালিম সরকারসহ অনেকই জানান, আগে দিনে সবুজ ঘাস, খড়, কুড়া, ভুসিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াইয়া পশু পালন করা হতো। সে পশুর মাংস স্বাস্থ্যসম্মত ছিল। কিন্তু এখন এসব খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকর উপাদান খাওয়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগির ফিড ও শিল্পকারখানার পরিত্যক্ত জুটের তুলাসহ ক্ষতিকর ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে। ওই মাংস খেয়ে মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ।
অনৈতিক পন্থায় পশু প্রস্তুত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানান, অনৈতিক পন্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা জুটের তুলা খাওয়ানো। বিষয়টি নজরে আছে, ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও এখানে এ বছর কোরবানীর পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে পাশর্^বর্তী জেলা-উপজেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। সেখান থেকে এনে পশুর চাহিদা পূরণ করা হবে। সব মিলিয়ে আমরা মনে করছি, পশু ঘাটতি খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে আমরা ঠিকমতো পশুর চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।