Dhaka ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি. উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে সাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে উপকূলের দুর্বল ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় শক্তির আঘাতের শঙ্কায় তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদী ভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আহবাওবা অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে গতকাল রোববার ভোর রাত থেকে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঘন ঘন এই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। সাধারণতঃ এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর হলো ঘূর্ণিঝড় প্রবন মাস। সে হিসাবে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস, আম্পান, রোমেল এর মতো প্রলয়ঙ্করী সব ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে মোখা আঘাত হানে। এসব ঘূর্নিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ। তাই উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শক্তির চোখ রাঙানীতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষের মনে। সবচেয়ে শঙ্কায় রয়েছে দুর্বল বাঁধ নিয়ে। কেননা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল ভেড়িবাঁধ। সেই ভেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে।
উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ খুই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছু দূরে ভেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজী বাড়ি, সরদার বাড়ি ও মোড়ল বাড়ির সামনের ভেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।
তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সাথে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টের ৩৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ও বিভাগ-২ এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় যদি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে ভেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, আমার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। যে কোন আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। অমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে গুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এ ছাড়া আমরা জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, আমার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ২৯৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪,৬, ৭/১, ৭/২ ও ৮ এই ৫টি পোল্ডারের ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই ১৫টি পয়েন্টে ঠিকাদার নিয়োগ করা রয়েছে। এসব স্থানে ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান আছে। জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের বিভাগে ২০ হাজার জিও ব্যাগের পাশপাশি ১৫টি জিও রোল মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া আগাম প্রস্তুতি হসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। কোন স্থানে সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হবে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলো প্রতিবছরই প্রকৃতির এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই ঘূর্ণিঝড় এখন আগের তুলনায় আরও অপ্রত্যাশিত, তীব্র ও ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি নিম্নচাপ যেন একটি সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ঝড়, নিম্নচাপ, লঘুচাপের মতো দুর্যোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কাজেই ঘূর্ণিঝড় নামের এক ভয়াল বাস্তবতা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি. উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

Update Time : ১২:২০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে সাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে উপকূলের দুর্বল ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় শক্তির আঘাতের শঙ্কায় তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদী ভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আহবাওবা অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে গতকাল রোববার ভোর রাত থেকে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঘন ঘন এই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। সাধারণতঃ এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর হলো ঘূর্ণিঝড় প্রবন মাস। সে হিসাবে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস, আম্পান, রোমেল এর মতো প্রলয়ঙ্করী সব ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে মোখা আঘাত হানে। এসব ঘূর্নিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ। তাই উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শক্তির চোখ রাঙানীতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষের মনে। সবচেয়ে শঙ্কায় রয়েছে দুর্বল বাঁধ নিয়ে। কেননা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল ভেড়িবাঁধ। সেই ভেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে।
উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ খুই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছু দূরে ভেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজী বাড়ি, সরদার বাড়ি ও মোড়ল বাড়ির সামনের ভেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।
তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সাথে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টের ৩৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ও বিভাগ-২ এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় যদি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে ভেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, আমার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। যে কোন আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। অমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে গুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এ ছাড়া আমরা জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, আমার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ২৯৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪,৬, ৭/১, ৭/২ ও ৮ এই ৫টি পোল্ডারের ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই ১৫টি পয়েন্টে ঠিকাদার নিয়োগ করা রয়েছে। এসব স্থানে ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান আছে। জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের বিভাগে ২০ হাজার জিও ব্যাগের পাশপাশি ১৫টি জিও রোল মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া আগাম প্রস্তুতি হসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। কোন স্থানে সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হবে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলো প্রতিবছরই প্রকৃতির এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই ঘূর্ণিঝড় এখন আগের তুলনায় আরও অপ্রত্যাশিত, তীব্র ও ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি নিম্নচাপ যেন একটি সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ঝড়, নিম্নচাপ, লঘুচাপের মতো দুর্যোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কাজেই ঘূর্ণিঝড় নামের এক ভয়াল বাস্তবতা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়।