Dhaka ০৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

oppo_2

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এখনো সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী স্বজনরাই ঠিকাদার রয়েছে। গত ১৬ টা বছর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করলেও বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ও ওইসব ঠিকাদারই নামকা ওয়াস্তে উন্নয়ন কাজ করে চলেছেন। কারখানার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে উন্নয়নের নামে সৈয়দপুরে তৈরি যন্ত্রণাংশ ব্যবহার করলেও কেউই তা দেখছেন না।  নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে ৭৩টি। কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে বেশির ভাগ কাজ গুটিকয়েক ঠিকাদার পাচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে ৫৫০ কোটি টাকার কাজ করেছে। এছাড়া তাদের দেড়শ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামীলীগের সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাগনা ও ভাতিজা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগ কমিটির এক নেতা ও রেলওয়ের এক কর্মকর্তার আত্মীয়ই মূলত এখানকার রেলের কাজগুলো পেয়ে থাকে। ৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক ঠিকাদার গা ঢাকা দিলেও এখনো তাদের নিয়ন্ত্রনেই রেলের সব কাজ চলমান।
রেলওয়ে সূত্রে জানায়, স্থানীয় রেলওয়ের কাজ সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্র ও লোকাল টেন্ডার মেথড (এলটিএম) এ দুই পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নকাজের একটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ৩৫ কোটি টাকার বেশি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে ১৫ কোটি টাকার বেশি হলে উন্মুক্ত দরপত্রে করা হয়। আর ১৫ কোটি টাকার কম হলে এলটিএম পদ্ধতিতে করা হয়। সরকারি অর্থে পণ্য, কার্য ও সেবা ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকার ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপি) আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে। সেই আইনে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র প্রতিযোগিতায় একাধিক মূল্যায়িত সর্বনিম্ন দরপত্রদাতার উদ্ধৃত দরে সমতার ভিত্তিতে সফল দরদাতা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সৈয়দপুরে রেলওয়ের ছোট-বড় প্রায় সব কাজই চলে যাচ্ছে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।
রেলওয়ে তথ্যানুসারে, এখানে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে ৭৩টি। এর মধ্যে সৈয়দপুরের রয়েছে অন্তত ১২টি।  গত কয়েক বছরে এখানে অন্তত ৫৫০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। এসব কাজের মধ্যে রেলওয়ে কারখানার আধুনিকায়ন, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন উঁচু করা ও প্ল্যাটফর্মের শেড পরিবর্তন, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথ সংস্কার এবং চিলাহাটি ও ডোমার রেলস্টেশন আধুনিকায়ন। এ ছাড়া রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের ভেতর ১০০ কোটি টাকার ব্রডগেজ রেলকোচ মেরামত, রেল কারখানার ভেতরে যন্ত্রাংশ (কাঁচামাল) সরবরাহের কয়েক কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, কাজগুলো পায় আওয়ামীলীগের রাজশাহী মহানগর কমিটির নেতা আফসার বিশ্বাসের মালিকানাধীন এরিয়ান বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্বাস কন্সট্রাকশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামীলীগের সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সূজনের ভাগনা এপোলো ও ভাতিজা সাজু এবং রেলওয়ের এক বড় কর্মকর্তার এক আত্মীয়। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে তাদের অন্তত ৮০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে বিনা দরপত্রে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার ও রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানায়, কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে উল্লেখিত ঠিকাদারদের মালিকানাধীন  প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় রেলওয়ের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। কাজ নিয়ে তাদের কেউ কেউ ৫ শতাংশ কমিশনে তৃতীয় পক্ষের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পেশাদার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর যখন আর কাজের চাহিদা কিংবা তাদের নিলাম সক্ষমতা থাকে না, কেবল তখনই ১০ শতাংশের মতো কাজ পাচ্ছে প্রকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে স্থানীয় রেলওয়ের সিংহভাগ কাজই পাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটটি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার চেষ্টা করেও খোঁজ পাওয়া যায়নি ওই ঠিকাদারদের। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, অর্থের বিনিময়ে ও স্থানীয় কয়েকজনের সুপারিশে ঘুরেফিরে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের কাছ থেকে স্ক্র্যাপ মালামাল (অচল যন্ত্রাংশ) হিসেবে স্বল্প মূল্যে কিনে স্থানীয়ভাবে মেরামত করে রং করে বেশি দামে আবারও রেলের কাছেই বিক্রি করছে। তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরের আগে ডিসেন্ট নামের এক ঠিকাদারকে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ দেয়া হয় নতুন যন্ত্রণাংশের জন্য কিন্তু তিনি কোন দেশের যন্ত্রণাং আমদানি করে কারখানায় দিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখছেন না। ওই ঠিকাদার কারখানার উর্ধতন কর্মকর্তাদের মোটা অংকে ম্যানেজ করায় তার বিরুদ্ধে কেউই খতিয়ে দেখছেন না, অথচ ডিসেন্ট নামের ওই ঠিকাদার ২/৩ বছর কাজ করেই আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি সহ অনেকে।
রোবায়েতুর আরও বলেন, ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যায়ে রেলওয়ে কারখানা আধুনিকায়নের কাজ করা হয়। আধুনিকায়ন কাজের আওতায় কারখানার ২৭ টি উপসপের শেডের পুরাতন টিন পরিবর্তন করে নতুন টিন লাগানো হয়। কিন্তু শেডে নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় মাত্র কয়েক বছর না যেতেই বৃষ্টিতে সেই টিন চুইয়ে পানি পড়ছে সপগুলোতে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে নতুন স্থাপিত অনেক মেশিন। অথচ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওই টিন ও মেশিন থাকলেও আরও ২০-২৫ বছর অনায়াসে যেত। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন তিনি।
এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদের সাথে। তিনি বলেন, আমার এ কর্মস্থলে আসা খুব বেশিদিন হয়নি। তাই এর আগের কাজগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে এখানে রেলওয়ের যেসব কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হয়, সেগুলো স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহ্বানের সুযোগ নেই। কাজগুলোর দরপত্র সাধারণত ঢাকা ও রাজশাহী থেকে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। তবে ঠিকাদাররা সৈয়দপুরের তৈরি যন্ত্রণাংশ নাকি বিদেশী যন্ত্রণাং আমদানি করে কারখানায় দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

খুলনায় জলবায়ু ঝুঁকিকে মাথায় রেখে নগর ব্যবস্থাপনা সাজানো হবে:পরিকল্পনায় বুয়েট

সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

Update Time : ০৪:১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এখনো সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী স্বজনরাই ঠিকাদার রয়েছে। গত ১৬ টা বছর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করলেও বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ও ওইসব ঠিকাদারই নামকা ওয়াস্তে উন্নয়ন কাজ করে চলেছেন। কারখানার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে উন্নয়নের নামে সৈয়দপুরে তৈরি যন্ত্রণাংশ ব্যবহার করলেও কেউই তা দেখছেন না।  নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে ৭৩টি। কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে বেশির ভাগ কাজ গুটিকয়েক ঠিকাদার পাচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে ৫৫০ কোটি টাকার কাজ করেছে। এছাড়া তাদের দেড়শ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামীলীগের সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাগনা ও ভাতিজা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগ কমিটির এক নেতা ও রেলওয়ের এক কর্মকর্তার আত্মীয়ই মূলত এখানকার রেলের কাজগুলো পেয়ে থাকে। ৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক ঠিকাদার গা ঢাকা দিলেও এখনো তাদের নিয়ন্ত্রনেই রেলের সব কাজ চলমান।
রেলওয়ে সূত্রে জানায়, স্থানীয় রেলওয়ের কাজ সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্র ও লোকাল টেন্ডার মেথড (এলটিএম) এ দুই পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নকাজের একটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ৩৫ কোটি টাকার বেশি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে ১৫ কোটি টাকার বেশি হলে উন্মুক্ত দরপত্রে করা হয়। আর ১৫ কোটি টাকার কম হলে এলটিএম পদ্ধতিতে করা হয়। সরকারি অর্থে পণ্য, কার্য ও সেবা ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকার ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপি) আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে। সেই আইনে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র প্রতিযোগিতায় একাধিক মূল্যায়িত সর্বনিম্ন দরপত্রদাতার উদ্ধৃত দরে সমতার ভিত্তিতে সফল দরদাতা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সৈয়দপুরে রেলওয়ের ছোট-বড় প্রায় সব কাজই চলে যাচ্ছে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।
রেলওয়ে তথ্যানুসারে, এখানে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে ৭৩টি। এর মধ্যে সৈয়দপুরের রয়েছে অন্তত ১২টি।  গত কয়েক বছরে এখানে অন্তত ৫৫০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। এসব কাজের মধ্যে রেলওয়ে কারখানার আধুনিকায়ন, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন উঁচু করা ও প্ল্যাটফর্মের শেড পরিবর্তন, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথ সংস্কার এবং চিলাহাটি ও ডোমার রেলস্টেশন আধুনিকায়ন। এ ছাড়া রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের ভেতর ১০০ কোটি টাকার ব্রডগেজ রেলকোচ মেরামত, রেল কারখানার ভেতরে যন্ত্রাংশ (কাঁচামাল) সরবরাহের কয়েক কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, কাজগুলো পায় আওয়ামীলীগের রাজশাহী মহানগর কমিটির নেতা আফসার বিশ্বাসের মালিকানাধীন এরিয়ান বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্বাস কন্সট্রাকশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামীলীগের সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সূজনের ভাগনা এপোলো ও ভাতিজা সাজু এবং রেলওয়ের এক বড় কর্মকর্তার এক আত্মীয়। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে তাদের অন্তত ৮০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে বিনা দরপত্রে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার ও রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানায়, কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে উল্লেখিত ঠিকাদারদের মালিকানাধীন  প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় রেলওয়ের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। কাজ নিয়ে তাদের কেউ কেউ ৫ শতাংশ কমিশনে তৃতীয় পক্ষের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পেশাদার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর যখন আর কাজের চাহিদা কিংবা তাদের নিলাম সক্ষমতা থাকে না, কেবল তখনই ১০ শতাংশের মতো কাজ পাচ্ছে প্রকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে স্থানীয় রেলওয়ের সিংহভাগ কাজই পাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটটি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার চেষ্টা করেও খোঁজ পাওয়া যায়নি ওই ঠিকাদারদের। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, অর্থের বিনিময়ে ও স্থানীয় কয়েকজনের সুপারিশে ঘুরেফিরে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের কাছ থেকে স্ক্র্যাপ মালামাল (অচল যন্ত্রাংশ) হিসেবে স্বল্প মূল্যে কিনে স্থানীয়ভাবে মেরামত করে রং করে বেশি দামে আবারও রেলের কাছেই বিক্রি করছে। তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরের আগে ডিসেন্ট নামের এক ঠিকাদারকে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ দেয়া হয় নতুন যন্ত্রণাংশের জন্য কিন্তু তিনি কোন দেশের যন্ত্রণাং আমদানি করে কারখানায় দিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখছেন না। ওই ঠিকাদার কারখানার উর্ধতন কর্মকর্তাদের মোটা অংকে ম্যানেজ করায় তার বিরুদ্ধে কেউই খতিয়ে দেখছেন না, অথচ ডিসেন্ট নামের ওই ঠিকাদার ২/৩ বছর কাজ করেই আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি সহ অনেকে।
রোবায়েতুর আরও বলেন, ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যায়ে রেলওয়ে কারখানা আধুনিকায়নের কাজ করা হয়। আধুনিকায়ন কাজের আওতায় কারখানার ২৭ টি উপসপের শেডের পুরাতন টিন পরিবর্তন করে নতুন টিন লাগানো হয়। কিন্তু শেডে নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় মাত্র কয়েক বছর না যেতেই বৃষ্টিতে সেই টিন চুইয়ে পানি পড়ছে সপগুলোতে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে নতুন স্থাপিত অনেক মেশিন। অথচ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওই টিন ও মেশিন থাকলেও আরও ২০-২৫ বছর অনায়াসে যেত। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন তিনি।
এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদের সাথে। তিনি বলেন, আমার এ কর্মস্থলে আসা খুব বেশিদিন হয়নি। তাই এর আগের কাজগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে এখানে রেলওয়ের যেসব কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হয়, সেগুলো স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহ্বানের সুযোগ নেই। কাজগুলোর দরপত্র সাধারণত ঢাকা ও রাজশাহী থেকে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। তবে ঠিকাদাররা সৈয়দপুরের তৈরি যন্ত্রণাংশ নাকি বিদেশী যন্ত্রণাং আমদানি করে কারখানায় দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।