Dhaka ০৪:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশেষ ট্রেন থেকে বঞ্চিত সৈয়দপুরের জনগোষ্ঠী 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে  ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন রুটে ৪৩টি অতিরিক্ত কোচ ও ১০টি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অথচ রেলওয়ের শহর সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার মানুষের জন্য একটি ও বরাদ্দ দেয়নি রেলকর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জেলার ঘরমুখী যাত্রীরা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদে ৫ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা, কক্সবাজার, শোলাকিয়া, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ, জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবারও বরাদ্দ না হওয়ায় স্থানীয়দের  মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। তারা চিলাহাটি রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন অথবা যে ট্রেনটি জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে সেটি চিলাহাটি পর্যন্ত পরিচালনা করার দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকা , খুলনা ও রাজশাহী রুটে প্রতিদিন পাঁচটি আন্তঃনগর একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকা রুটে নীলসাগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন চলাচল করে।
ভৌগলিক দিক থেকে সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখান থেকে নীলফামারী,  দিনাজপুর, ঠাকুরগা, রংপুর ও  পঞ্চগড়ে সহজেই যাতায়াত করা যায়। তাই সৈয়দপুর ছাড়াও ওইসব এলাকার লোকজন এই স্টেশন থেকে টিকেট কেটে ট্রেনে ঢাকা যাতায়াত করে। তাই এই রুটে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। সব মিলে নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করে। ঈদে তা প্রায় চারগুন হয়ে যায়।
সূত্রটি আরও জানায়,  দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখনার অবস্থান সৈয়দপুরে। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের যে ১০ টি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হবে সেই ট্রেনগুলোর জন্য ১৪০ টি কোচ এ কারখনা থেকেই মেরামত ও সরবারহ করা হয়েছে। অথচ এখান থেকেই নেই কোনো স্পেশাল ট্রেন।
এ ঈদে স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ না হওয়ায়  ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার রোখসানা পারভীন নামের এক নারী যাত্রী জানান, আমি এ পথেই নিয়মত ঢাকায় যাতায়াত করি। বরাবরই এ অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত, বঞ্চিত। সেই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর থেকে ঈদের সময় ট্রেনের যাতায়াত থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ঈদে সড়কপথে প্রচুর চাপ থাকায় অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে মানুষ ট্রেনে চলাচল করতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রেনের বিষয়ে এ অঞ্চলকে বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে যা সত্যিই দুঃখজনক।

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতকৃত কোচে সারা দেশে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু দু:খ জনক বিষয় প্রতিবারই এখান থেকে ঈদে কোনো স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়না।

সৈয়দপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, ঈদ এলে দেশের অন্যান্য রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা হয়; কিন্তু এ ক্ষেত্রে সৈয়দপুর তথা নীলফামারী সবসময় উপেক্ষিত। যার ফলে এ জেলার যাত্রী সাধারণ ট্রেনের ছাদে, বাসের ছাদে, ট্রাকে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। তিনি এ বিষয়ে রেলওয়ে উপদেষ্টা ও রেলসংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার  ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, নীলফামারীর জন্য কোনো ঈদ স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ হয়নি। এর  আগে একাধিকবার জয়দেবপুর থেকে পার্বাতীপুর পর্যন্ত যে স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়েছিল সেটি চিলাহাটি পর্যন্ত দেওয়ার জন্য   উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। ট্রেনটি চিলাহাটি পর্যন্ত দেওয়া হলে একদিকে যাত্রীদের সুবিধা অন্যদিকে রেলওয়ের আয় হবে বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কোস্টগার্ড অস্ত্র ও গোলাবারুদ ও সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর এক সহযোগীকে আটক

বিশেষ ট্রেন থেকে বঞ্চিত সৈয়দপুরের জনগোষ্ঠী 

Update Time : ০৯:১৩:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
ঈদুল আজহা উপলক্ষে  ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন রুটে ৪৩টি অতিরিক্ত কোচ ও ১০টি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অথচ রেলওয়ের শহর সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার মানুষের জন্য একটি ও বরাদ্দ দেয়নি রেলকর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জেলার ঘরমুখী যাত্রীরা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদে ৫ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা, কক্সবাজার, শোলাকিয়া, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ, জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবারও বরাদ্দ না হওয়ায় স্থানীয়দের  মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। তারা চিলাহাটি রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন অথবা যে ট্রেনটি জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে সেটি চিলাহাটি পর্যন্ত পরিচালনা করার দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকা , খুলনা ও রাজশাহী রুটে প্রতিদিন পাঁচটি আন্তঃনগর একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকা রুটে নীলসাগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন চলাচল করে।
ভৌগলিক দিক থেকে সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখান থেকে নীলফামারী,  দিনাজপুর, ঠাকুরগা, রংপুর ও  পঞ্চগড়ে সহজেই যাতায়াত করা যায়। তাই সৈয়দপুর ছাড়াও ওইসব এলাকার লোকজন এই স্টেশন থেকে টিকেট কেটে ট্রেনে ঢাকা যাতায়াত করে। তাই এই রুটে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। সব মিলে নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করে। ঈদে তা প্রায় চারগুন হয়ে যায়।
সূত্রটি আরও জানায়,  দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখনার অবস্থান সৈয়দপুরে। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের যে ১০ টি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হবে সেই ট্রেনগুলোর জন্য ১৪০ টি কোচ এ কারখনা থেকেই মেরামত ও সরবারহ করা হয়েছে। অথচ এখান থেকেই নেই কোনো স্পেশাল ট্রেন।
এ ঈদে স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ না হওয়ায়  ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার রোখসানা পারভীন নামের এক নারী যাত্রী জানান, আমি এ পথেই নিয়মত ঢাকায় যাতায়াত করি। বরাবরই এ অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত, বঞ্চিত। সেই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর থেকে ঈদের সময় ট্রেনের যাতায়াত থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ঈদে সড়কপথে প্রচুর চাপ থাকায় অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে মানুষ ট্রেনে চলাচল করতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রেনের বিষয়ে এ অঞ্চলকে বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে যা সত্যিই দুঃখজনক।

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতকৃত কোচে সারা দেশে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু দু:খ জনক বিষয় প্রতিবারই এখান থেকে ঈদে কোনো স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়না।

সৈয়দপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, ঈদ এলে দেশের অন্যান্য রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা হয়; কিন্তু এ ক্ষেত্রে সৈয়দপুর তথা নীলফামারী সবসময় উপেক্ষিত। যার ফলে এ জেলার যাত্রী সাধারণ ট্রেনের ছাদে, বাসের ছাদে, ট্রাকে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। তিনি এ বিষয়ে রেলওয়ে উপদেষ্টা ও রেলসংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার  ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, নীলফামারীর জন্য কোনো ঈদ স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ হয়নি। এর  আগে একাধিকবার জয়দেবপুর থেকে পার্বাতীপুর পর্যন্ত যে স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়েছিল সেটি চিলাহাটি পর্যন্ত দেওয়ার জন্য   উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। ট্রেনটি চিলাহাটি পর্যন্ত দেওয়া হলে একদিকে যাত্রীদের সুবিধা অন্যদিকে রেলওয়ের আয় হবে বলে জানান তিনি।