মাদ্রাসা ছাত্রী মোছা. তাছলিমা খাতুন (১১)। বয়সে ছোট হলেও মা-বাবা শখ করে রেখে দিয়েছিলেন বাহারী চুল। চুলের খোপা বাঁধলে প্রতিবেশীরা বলতেন,তাছলিমার মাথার চেয়ে খোপা বড়। তাছলিমার সেই শোভাময় চুল জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা শিক্ষকদ্বয়ের বিরুদ্ধে।
এদিকে মাদ্রাসার ভেতর চুল কেটে দেওয়ার সময় তাছলিমার মাথা কেটে যায়। মাথার রক্ত ক্ষরণ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শিশু তাছলিমা। পরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাছলিমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. সমাজ আলী সরকার। মায়ের নাম মোছা. আবেদান বেগম। সে তাড়াশের কৃষœাদিঘী গ্রামের তালিমুল নিসা মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার কেতাব বিভাগের ছাত্রী।
তাছলিমা জানায়, গত মঙ্গলবার বেলা ১ টার দিকে মাদ্রাসার একজন নারী শিক্ষক তাছলিমাকে বলেন, তোমার মাথায় উকুন। বড় চুলের জন্য উকুন হয়েছে। এসো মাথা ন্যাড়া করে দেই। কিছু দিনের মধ্যে আবার চুল বড় হয়ে যাবে। প্রথমে কেচি দিয়ে চুল ছোট করে নেন। পরে বাজার থেকে শ্যাম্পু কিনে আনেন মাদ্রাসার বড় হুজুর হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল মারুফ। তারপর জোর করে ধরে দুই শিক্ষক ন্যাড়া করে দেন।
অপরদিকে ন্যাড়া করার সময় মাথা কেটে যায়। রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর কি হয়েছে বলতে পারে না তাছলিমা।
তাছলিমার মা আবেদান বেগম বলেন, প্রতিদিন তিন বেলার খাবার পৌঁছে দিতাম আমি। ঐ দিন মাদ্রাসায় খাবার দিতে গিয়ে দেখি মেয়ে ন্যাড়া। মাথায় তখনো রক্ত ঝড়ছে। পরে আমিও চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
বোয়ালিয়া গ্রামের মো. উজ্জল সরকারের স্ত্রী মোছা. রুনা পারভিন বলেন, তাছলিমার মাথার চুল ছিলো কোমড় পর্যন্ত। যখন খোপা বাঁধত মাথার চেয়ে চুলের খোপা বড় দেখতে লাগতো।
তাছলিমার বাবা সমাজ আলী বলেন, ভ্যান চালানোর টাকার সংসার চলে আমাদের। বয়োবৃদ্ধ মা, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার। অভাব-অনটন লেগেই থাকে সংসারে। তারপরও মেয়ের চুলের যতেœ কখনো অবহেলা করিনি। দুই ধরনের তেল কিনে দিতাম মেয়ের চুলে দেওয়ার জন্য। আমারদের না জানিয়ে কেন মেয়েকে ন্যাড়া করা হল? আমার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করেয়েছি। মাদ্রাসা থেকে একবার খবরও নিলো না। উল্টো মাদ্রাসা থেকে আমার মেয়েকে বেড় করে দেওয়ার পায়তারা চলছে। আমি বিচার চাই।
তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সোলেমান আলী বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রী তাছলিমার মাথা ন্যাড়া করা নিয়ে শনিবার গ্রামে সালিশ বৈঠকের কথা রয়েছে।
বোয়ালিয়া গ্রামের বেশ কিছু লোকজন ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেন।
তালিমুল নিসা মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল মারুফ বলেন, তাছলিমার মাথা আমরা ন্যাড়া করে দেই নি। সে ও তার সহপাঠিরা মিলে এ কাজ করেছে।
তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা যাচাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, লোকে মুখে বিষয়টি শুনেছি তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি তাই কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। আমি ব্যবস্থা নেব।