Dhaka ০৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আত্রাইয়ে প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল

উত্তর জনপদের শষ্যভান্ডার খ্যাত সবুজ অরণ্যে ঘেরা নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পথে-প্রান্তরে গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল। কালের বিবর্তনে এ উপজেলার পথ-ঘাটে আগের মত তেমন একটা দেখা যায় না সোনাঝড়া সোনালু ফুলের গাছ।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি সোনালু ফুলের এ সৌন্দর্য। এ গাছটিকে বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছও বলা হয়। সোনালি রঙের ফুল হওয়ার কারণেই মূলত এ গাছটির নামকরণ হয়েছে ‘সোনালু’। কবিগুরু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও গাছটিকে অমলতাস বলা হয়। ইংরেজিতে সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে।

গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে অলংকারের ন্যায় প্রকৃতিতে শোভা বৃদ্ধি করছে সোনালু ফুল। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝরা সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলের মতো দুলছে।

বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলি সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযতœ আর অবহেলায়। সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ বেশি জন্মে। গাছটি সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু নিচু ভূমিতে সোনালু গাছের জন্য আদর্শ স্থান।

জানা গেছে, গাছটির আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমার জুড়ে রয়েছে এর বিস্তার।

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধিতে সোনালু ফলের জুড়ি নেই। গ্রাম-বাংলার শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুলকে কানের দুল হিসেবে লাগিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। সোনালু ফুলে শোভিত জেলার আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা।

উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দেখা মেলে হলুদ রঙে রাঙানো সোনালু গাছের। আর সেখানে অটোরিকশা থামিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মোস্তাফিজুর ও সৌরভ নামের দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়।

এমরান মাহমুদ প্রত্যয় বলেন, ‘কোনো একদিন চলন্ত রাস্তায় দূর থেকে গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে কাজ শেষ করে সহকর্মী সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এ যেন প্রকৃতির অপার কারুকাজ।’

সোনালু গাছ নিয়ে কথা হয় উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৃতিপ্রেমী নাসির উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি বলেন, ‘আমরা শৈশবে সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছ বাড়ির আশপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে সোনালু গাছের দেখা মেলে। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো সোনালু ফুল আমাদের জন্য উপহার।’

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন বলেন, ‘একসময় সোনালু গাছ প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় এ গাছ রোপণে অনেকের আগ্রহ নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, আমাদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য সোনালু ফুল। সোনালু গাছটি অযতœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে বিধায় কৃষক পর্যায়ে এর গুরুত্ব কম। বর্তমানে আত্রাই উপজেলায় তেমন একটা চোখে পড়েনা। ভেষজ গুণসম্পন্ন নয়নাভিরাম দৃশ্য সমৃদ্ধ সোনালু গাছ নতুন প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনেকরেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কোস্টগার্ড অস্ত্র ও গোলাবারুদ ও সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর এক সহযোগীকে আটক

আত্রাইয়ে প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল

Update Time : ০৭:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

উত্তর জনপদের শষ্যভান্ডার খ্যাত সবুজ অরণ্যে ঘেরা নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পথে-প্রান্তরে গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল। কালের বিবর্তনে এ উপজেলার পথ-ঘাটে আগের মত তেমন একটা দেখা যায় না সোনাঝড়া সোনালু ফুলের গাছ।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি সোনালু ফুলের এ সৌন্দর্য। এ গাছটিকে বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছও বলা হয়। সোনালি রঙের ফুল হওয়ার কারণেই মূলত এ গাছটির নামকরণ হয়েছে ‘সোনালু’। কবিগুরু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও গাছটিকে অমলতাস বলা হয়। ইংরেজিতে সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে।

গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে অলংকারের ন্যায় প্রকৃতিতে শোভা বৃদ্ধি করছে সোনালু ফুল। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝরা সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলের মতো দুলছে।

বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলি সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযতœ আর অবহেলায়। সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ বেশি জন্মে। গাছটি সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু নিচু ভূমিতে সোনালু গাছের জন্য আদর্শ স্থান।

জানা গেছে, গাছটির আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমার জুড়ে রয়েছে এর বিস্তার।

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধিতে সোনালু ফলের জুড়ি নেই। গ্রাম-বাংলার শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুলকে কানের দুল হিসেবে লাগিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। সোনালু ফুলে শোভিত জেলার আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা।

উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দেখা মেলে হলুদ রঙে রাঙানো সোনালু গাছের। আর সেখানে অটোরিকশা থামিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মোস্তাফিজুর ও সৌরভ নামের দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়।

এমরান মাহমুদ প্রত্যয় বলেন, ‘কোনো একদিন চলন্ত রাস্তায় দূর থেকে গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে কাজ শেষ করে সহকর্মী সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এ যেন প্রকৃতির অপার কারুকাজ।’

সোনালু গাছ নিয়ে কথা হয় উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৃতিপ্রেমী নাসির উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি বলেন, ‘আমরা শৈশবে সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছ বাড়ির আশপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে সোনালু গাছের দেখা মেলে। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো সোনালু ফুল আমাদের জন্য উপহার।’

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন বলেন, ‘একসময় সোনালু গাছ প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় এ গাছ রোপণে অনেকের আগ্রহ নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, আমাদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য সোনালু ফুল। সোনালু গাছটি অযতœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে বিধায় কৃষক পর্যায়ে এর গুরুত্ব কম। বর্তমানে আত্রাই উপজেলায় তেমন একটা চোখে পড়েনা। ভেষজ গুণসম্পন্ন নয়নাভিরাম দৃশ্য সমৃদ্ধ সোনালু গাছ নতুন প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনেকরেন তিনি।