নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় সোগরা (২৮) বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনদের দাবি ভুল চিকিৎসায় ওই প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩ টার দিকে শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে অবস্থিত গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সোগরা বেগম সৈয়দপুর পৌরসভার বাঁশবাড়ী আমিন মোড় এলাকার মো. আরিফ হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃত সোগরা বেগম ৪৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। মূত্রনালীর রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্বজনরা চিকিৎসা জন্য তাকে বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে হাসপাতাটিতে নিয়ে যান। পরে ওই হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্তা রোগীকে দেখে জানান তার মূত্রনালীতে ইনফেকশন হয়েছে। এজন্য দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। সে অনুযায়ী ওই প্রসুতিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওইদিনই দিবাগত রাত পৌনে ৩ টার দিকে ডা. ওয়াজেরা নিজেই অস্ত্রোপচার শুরু করেন।
এর ঘন্টা খানিক পর সোগরা বেগমকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে নিজেদের এম্বুলেন্সে করে রংপুরে নেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোগীর পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে ওই প্রসুতিকে পাশেই সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানার জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান যে রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন। এতে রোগীর লোকজন মারমুখী হলে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। পরে ওই এলাকার কিছু রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ের মানুষের দ্বারা শুক্রবার রাতে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।
এ নিয়ে কথা হয় মৃত্য সোগরার ভাবী মোছাঃ তামান্নার সাথে। তিনি জানান , অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সোগরা ভালোই ছিল। নিজে হেটে হাসপাতালে গিয়েছে। চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে মৃত সোগরার স্বামী আরিফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। তাকে তো আর ফিরে পাবোনা। এখন ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধরে কি হবে। তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তা দিয়ে সোগরার রেখে যাওয়া দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগাবো। এবিষয়ে জানতে হাসপাতাল গেলে ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্তার চেম্বার বন্ধ থাকায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালের ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবনা। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েল নওগাঁয় আছেন। তিনি আসলে তার কাছ থেকে সব জানতে পারবেন বলে জানান।
গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালের পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েলের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি তাঁকে বাঁচানোর জন্য । কিন্তু মারা গেলে করার কিছু নাই। এরপরেও মৃত্যুের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।