Dhaka ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় ওজোনস্তর রক্ষায় মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে

ওজোনস্তর রক্ষায় বাংলাদেশে মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা আজ রবিবার ০১ জুন দুপুরে খুলনা সিএসএস আভা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন রিনিউয়াল অব ইন্সটিটিউশন্যাল স্ট্রেনদেনিং ফর দি ফেজ-আউট অব ওডিএস (ফেজ-১০) প্রকল্পের আওতায় কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মন্ট্রিল প্রটোকলে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসগুলোর ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যে সকল রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ক্ষতিকর নয় সেগুলো ব্যবহারে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসগুলো কেবল ওজোনস্তরেরই ক্ষতি করেনা, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এসকল ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে ফ্রিজ ও এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মিত সার্ভিসিং করা ও এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে। একই সাথে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হতে হবে। সরকারের উদ্যোগ ও নাগরিকদের সচেতনতার মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জীবজগতের অস্তিত্বরক্ষায় ওজোনস্তরের অবদান অপরিসীম। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের কারণে ওজোনস্তর দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষয়িষ্ণু ওজোনস্তরের মধ্যে দিয়ে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি অতিসহজেই পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রবেশ করে মানবস্বাস্থ্য, জীবজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও অণুজীবের তথা জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মাত্রাতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকে ক্যান্সার, চোখে ছানি পড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস-সহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ওজোনস্তর ক্ষয়ের পরোক্ষ প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ও মরুময়তা-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করে। প্রটোকল বাস্তবায়নে ২০০৪ সালে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪ জারি করা হয়। ১ জানুয়ারি ২০১০ হতে দেশে ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতিকর সিএফসি, কার্বনটেট্রাক্লোরাইড ও মিথাইলক্লোরোফরম ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়। এছাড়া ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঔষধ শিল্প হতে সিএফসি এবং রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ফোম তৈরিতে ব্লোয়িং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত এইচসিএফসি-১৪১ বি-এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। এইচসিএফসি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ এইচসিএফসি ব্যবহার বন্ধ করেছে।
বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে এইচসিএফসি-এর ব্যবহার ৬৭.৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাটি ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিনিউয়াল অব ইন্সটিটিউশন্যাল স্ট্রেনদেনিং প্রকল্পের পরিচালক মোঃ মহিউদ্দিন মানিক। কর্মশালায় সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

খুলনায় ওজোনস্তর রক্ষায় মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে

Update Time : ০৪:৩২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
ওজোনস্তর রক্ষায় বাংলাদেশে মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা আজ রবিবার ০১ জুন দুপুরে খুলনা সিএসএস আভা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন রিনিউয়াল অব ইন্সটিটিউশন্যাল স্ট্রেনদেনিং ফর দি ফেজ-আউট অব ওডিএস (ফেজ-১০) প্রকল্পের আওতায় কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মন্ট্রিল প্রটোকলে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসগুলোর ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যে সকল রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ক্ষতিকর নয় সেগুলো ব্যবহারে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসগুলো কেবল ওজোনস্তরেরই ক্ষতি করেনা, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এসকল ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে ফ্রিজ ও এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মিত সার্ভিসিং করা ও এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে। একই সাথে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হতে হবে। সরকারের উদ্যোগ ও নাগরিকদের সচেতনতার মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জীবজগতের অস্তিত্বরক্ষায় ওজোনস্তরের অবদান অপরিসীম। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের কারণে ওজোনস্তর দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষয়িষ্ণু ওজোনস্তরের মধ্যে দিয়ে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি অতিসহজেই পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রবেশ করে মানবস্বাস্থ্য, জীবজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও অণুজীবের তথা জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মাত্রাতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকে ক্যান্সার, চোখে ছানি পড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস-সহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ওজোনস্তর ক্ষয়ের পরোক্ষ প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ও মরুময়তা-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করে। প্রটোকল বাস্তবায়নে ২০০৪ সালে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪ জারি করা হয়। ১ জানুয়ারি ২০১০ হতে দেশে ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতিকর সিএফসি, কার্বনটেট্রাক্লোরাইড ও মিথাইলক্লোরোফরম ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়। এছাড়া ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঔষধ শিল্প হতে সিএফসি এবং রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ফোম তৈরিতে ব্লোয়িং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত এইচসিএফসি-১৪১ বি-এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। এইচসিএফসি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ এইচসিএফসি ব্যবহার বন্ধ করেছে।
বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে এইচসিএফসি-এর ব্যবহার ৬৭.৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাটি ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিনিউয়াল অব ইন্সটিটিউশন্যাল স্ট্রেনদেনিং প্রকল্পের পরিচালক মোঃ মহিউদ্দিন মানিক। কর্মশালায় সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।