Dhaka ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে অভ্যন্তরে নদী-খালে মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছেন

সরকার ও বন বিভাগের নির্দেশনায় রোববার থেকে সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে সকল প্রকারের মাছ আহরণ। রোববার থেকে মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় বনের নদী-খাল নিরাপদ ও বন্যপ্রানীদের বিচরণ নির্বিঘ এবং প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা এ তিন মাসের জন্য মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ সময় পর্যটক জোঝাই লঞ্চ, জালী বোট, ট্রলার বা অন্যান্য নৌযানসহ পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদী-খালে মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানায় মৎস্য ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলেদের দাবি ৩ মাস নয় ইলিশ সংরক্ষণসহ ৫ মাসই বন্ধ থাকে সাগর ও সুন্দরবন।

বন বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ ও বন্যপ্রাণী প্রজনন সুরক্ষা সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকত। কিন্তু ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই থেকেই অদ্যাবদি পর্যন্ত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও বনে বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ও চলাচল নির্বিঘ্নে করতে পর্যটক প্রবেশও বন্ধ ঘোষণা করে দেয় সরকার।

বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন সুন্দরবনে ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ এই সময়টায় সাগর থেকে মাছ উপরের দিকে উঠে আসে নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য। সেখানে নিরাপদ হিসেবে সুন্দরবনের বিভিন্ন অভয়ারণ্যসহ বনের খাল-নদীকে বেছে নেয়া হয়। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানায় মৎস্য বিভাগ। এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে উলে­খ যোগ্য রয়েছে বাঘ, মায়াবি হরিণ, শুকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে বংশ বৃদ্ধির জন্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেট্রোপলিটন শ্যূটিং ক্লাব,খুলনার বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

সুন্দরবনে অভ্যন্তরে নদী-খালে মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছেন

Update Time : ১০:০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

সরকার ও বন বিভাগের নির্দেশনায় রোববার থেকে সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে সকল প্রকারের মাছ আহরণ। রোববার থেকে মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় বনের নদী-খাল নিরাপদ ও বন্যপ্রানীদের বিচরণ নির্বিঘ এবং প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা এ তিন মাসের জন্য মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ সময় পর্যটক জোঝাই লঞ্চ, জালী বোট, ট্রলার বা অন্যান্য নৌযানসহ পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদী-খালে মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানায় মৎস্য ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলেদের দাবি ৩ মাস নয় ইলিশ সংরক্ষণসহ ৫ মাসই বন্ধ থাকে সাগর ও সুন্দরবন।

বন বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ ও বন্যপ্রাণী প্রজনন সুরক্ষা সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকত। কিন্তু ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই থেকেই অদ্যাবদি পর্যন্ত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও বনে বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ও চলাচল নির্বিঘ্নে করতে পর্যটক প্রবেশও বন্ধ ঘোষণা করে দেয় সরকার।

বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন সুন্দরবনে ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ এই সময়টায় সাগর থেকে মাছ উপরের দিকে উঠে আসে নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য। সেখানে নিরাপদ হিসেবে সুন্দরবনের বিভিন্ন অভয়ারণ্যসহ বনের খাল-নদীকে বেছে নেয়া হয়। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানায় মৎস্য বিভাগ। এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে উলে­খ যোগ্য রয়েছে বাঘ, মায়াবি হরিণ, শুকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে বংশ বৃদ্ধির জন্য।