খুলনা নগরী ও জেলায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর দৌরাত্ম থামছেনা। খুলনাবাসী দীর্ঘ ৮ মাস ধরে রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। খুলনায় আট মাসে ২৫ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও গুরুতর আহত ও জখম হয়ে খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছে অনেকে। বিশেষ করে সন্ধা নামলেই আতংক বিরাজ করছে নগরী ও খুলনা জুড়ে। অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটছে মাদক,চাঁদাবাজি ও এলাকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে নিতে। বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা চিহ্নিত হলেও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারছেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বর্তমানে এই সকল অস্ত্রধারীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে খুলনার জনপদে সাধারণ মানুষ সব সময় রয়েছে চরম আতংকে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত হত্যাকারী ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছে না। বিশেষ করে সন্ধ্য্ নামলেই অধিকাংশ মানুষ খুলনায় এখন চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। আট মাসে ২৫ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পুলিশ অধিকাংশেরই কুলকিনারা উদঘাটনে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।
খুলনার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি সাবেক সরকার আমলের অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এখনো রয়েছে বহাল। ফলে খুলনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে তারা এখন অনেকে অপারগতা প্রকাশ করায় দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তাদের খুলনার আইনশৃঙ্খলা বিভাগ থেকে অপসারণ করতে না পারায় তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অধিকাংশ অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে সুত্রের দাবি। আর এই সকল অপরাধ মুলক ঘটনায় সাধারণ মানুষ এখন চরম আতংকিত রয়েছেন।
সর্বশেষ নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ময়লাপোতা এলাকায় ওয়াসার এক শ্রমিক সবুজকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা। এর আগে সদর থানার টুটপাড়া এলাকায় কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় একটি চা দোকান থাকে টেনে হিচড়ে এক যুবককে কুপিয়েও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে চলে যায় অস্ত্রেধারী দুর্বৃত্তরা।
নগরী ও জেলায় হত্যা,ডাকাতি,ছিনতাই, চাদাবাজী, মারামারি, চুরিসহ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত পাঁচ মাসেই হত্যা ও মারামারিতে ব্যবহৃত অসংখ্য অস্ত্রের ব্যবহার হলেও সেই অস্ত্র গুলো উদ্ধার করতে পারছেনা পুলিশ। তবে দুই একটি অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া বাকি সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও সংঘটিত দুর্ঘটনা গুলোর নামমাত্র তিন- চারটির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুত্রে জানাগেছে।
তবে একাধীক হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারন ও প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণও অনুসন্ধান করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় সাধারণ মানুষ বলেন, বর্তমানে নগরীতে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে টহল থাকলেও পুলিশের টহল তেমন থাকে না নগরজুড়ে। পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় এই সকল দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
সবমিলিয়ে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন চরম আতংক বিরাজ করছে। নগরী ও জেলায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন সাধারন মানুষ ও খুলনার নাগরিক নেতারা। সর্বশেষ গত ২ জুন সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় ওয়াসার এক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ সন্ধায় নগরীর টুটপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। তার আগে একই থানার নিরালা এলাকায় চাঁদা না পেয়ে এক তেল ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। তারই মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই সদর থানার শিশুপল্লী জব্বার স্মরনী রোডে হত্যাসহ কয়েকটি মামলার আসামী সাহিন নামের একজনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় গত ২৫ জানুয়ারি রাত আটটায় নগরীর তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় একটি চা দোকানের সামনে কয়েকজন অস্ত্রেধারী সন্ত্রাসীরা খুলনা বিশব্বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অর্নব সরকারকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ২০ জানুয়ারি নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়াড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
২০ জানুয়ারি বিকালে নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন সন্ধায় কমার্স কলেজের সামনে ছাত্রদলকর্মী নওফেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুর রহমান লিটুর পুত্র। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও নাগরিক নেতাদের অভিযোগ মাত্র খুলনা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেএমপি কমিশনারের বক্তৃতার কয়েকঘন্টা পরই নওফেলকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে নগরীর সদর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিস্ত্রীপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহিন শেখ নামের এক যুবদল নেতাকে গুলি করে জখম করে দুর্বৃত্তরা।
একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, হত্যাসহ কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মের কারণে নগরবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। আর নাগরিক নেতারা বলেন, খুলনায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে পারছেনা পুলিশ।
পুলিশের সহকারী কমিশনার খন্দকার হোসেন আহম্মদ (মিডিয়া) জানান, সর্বশেষ গত ২ জুন সোনাডাঙ্গা থানার হরিজন মহল্লার এক ওয়াসার শ্রমিক সবুজকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা ঘটনায় পুলিশ জড়িতদের সনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অপর হত্যাগুলোর বেশকয়েকটির রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নগরীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।