Dhaka ১০:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে কারাগার থেকে পালালো ২০০ বন্দি

২শ’-এর বেশি বন্দি পালিয়ে গেছে পাকিস্তানের করাচির একটি কারাগার থেকে। স্থানিয় সময় সোমবার (২ জুন) রাতে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও পুলিশ জানিয়েছেন, দেশটিতে একাধিক ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে বন্দিদের তাদের নিজ নিজ সেল থেকে বের হতে দেয়া হলে সুযোগ বুঝে তারা জেল গার্ডদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

দেশটির প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লঞ্জার মঙ্গলবার (৩ জুন) ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে জেল কর্তৃপক্ষ বন্দিদের মালির জেলা কারাগারের আঙিনায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১২টার আগেই পালানোর ঘটনা শুরু হয় এবং তা মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলতে থাকে।

পুলিশ জানায়, কয়েদিরা জেল কর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং গুলিবিনিময়ের পর মূল গেট ভেঙে প্যারামিলিটারি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। .

প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান গোলাম নবী মেমন বলেন, এতে অন্তত একজন কয়েদি নিহত ও তিনজন গার্ড আহত হয়েছেন।

কারাগারের বিপরীতের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা কর্মী বখ্শ বলেন, ‘আমি বেশ কিছুক্ষণ গুলির শব্দ শুনেছি, তারপর কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েদিরা সব দিকে ছুটে পালাচ্ছে।

তিনি এও বলেন, কিছু কয়েদি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেছিল।

মঙ্গলবার (৩ জুন) কারাগার পরিদর্শনকালে একজন রয়টার্স প্রতিবেদক ভাঙা কাচ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম দেখতে পান। কয়েদিদের পরিবারের সাথে দেখা করার একটি কক্ষ লুটপাটের শিকার হয়েছিল। উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনরা কারাগারের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন।

লঞ্জার বলেন, এটি পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জেল পালানোর ঘটনাগুলোর একটি। করাচির মালির জেলাটিতে ৬,০০০ কয়েদি রয়েছে।

স্থানীয় টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সারারাত ধরে কয়েদিরা এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছিল, কেউ কেউ খালি পায়ে, আর পুলিশ তাদের পিছু নিয়েছিল। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ বলেন, পালানো কয়েদিদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে।

জেল সুপারিনটেন্ডেন্ট আরশাদ শাহ সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ২৮ জন জেল গার্ড ডিউটিতে ছিলেন এবং এতো বিপুল সংখ্যক কয়েদির মধ্যে মাত্র কয়েকজন পালাতে পেরেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে ওই কারাগারে নিরাপত্তা ক্যামেরা নেই।

জেল কর্মকর্তারা জানান, অনেক বন্দি হেরোইন ব্যবহারকারী ছিল এবং ভূমিকম্পের কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। লঞ্জার বলেন, ‘ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে এখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েদিদের সেল থেকে বের হতে দেয়া জেল কর্তৃপক্ষের একটি ভুল ছিল। তিনি এখনও পালিয়ে থাকা কয়েদিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান, নতুবা জেল ভেঙে পালানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হবে। শাহ বলেন,ছোট অপরাধের অভিযোগও সন্ত্রাসবাদ মামলার মতো বড় হয়ে দাঁড়াবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে কারাগার থেকে পালালো ২০০ বন্দি

Update Time : ০৮:৩৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

২শ’-এর বেশি বন্দি পালিয়ে গেছে পাকিস্তানের করাচির একটি কারাগার থেকে। স্থানিয় সময় সোমবার (২ জুন) রাতে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও পুলিশ জানিয়েছেন, দেশটিতে একাধিক ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে বন্দিদের তাদের নিজ নিজ সেল থেকে বের হতে দেয়া হলে সুযোগ বুঝে তারা জেল গার্ডদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

দেশটির প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লঞ্জার মঙ্গলবার (৩ জুন) ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে জেল কর্তৃপক্ষ বন্দিদের মালির জেলা কারাগারের আঙিনায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১২টার আগেই পালানোর ঘটনা শুরু হয় এবং তা মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলতে থাকে।

পুলিশ জানায়, কয়েদিরা জেল কর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং গুলিবিনিময়ের পর মূল গেট ভেঙে প্যারামিলিটারি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। .

প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান গোলাম নবী মেমন বলেন, এতে অন্তত একজন কয়েদি নিহত ও তিনজন গার্ড আহত হয়েছেন।

কারাগারের বিপরীতের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা কর্মী বখ্শ বলেন, ‘আমি বেশ কিছুক্ষণ গুলির শব্দ শুনেছি, তারপর কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েদিরা সব দিকে ছুটে পালাচ্ছে।

তিনি এও বলেন, কিছু কয়েদি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেছিল।

মঙ্গলবার (৩ জুন) কারাগার পরিদর্শনকালে একজন রয়টার্স প্রতিবেদক ভাঙা কাচ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম দেখতে পান। কয়েদিদের পরিবারের সাথে দেখা করার একটি কক্ষ লুটপাটের শিকার হয়েছিল। উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনরা কারাগারের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন।

লঞ্জার বলেন, এটি পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জেল পালানোর ঘটনাগুলোর একটি। করাচির মালির জেলাটিতে ৬,০০০ কয়েদি রয়েছে।

স্থানীয় টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সারারাত ধরে কয়েদিরা এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছিল, কেউ কেউ খালি পায়ে, আর পুলিশ তাদের পিছু নিয়েছিল। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ বলেন, পালানো কয়েদিদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে।

জেল সুপারিনটেন্ডেন্ট আরশাদ শাহ সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ২৮ জন জেল গার্ড ডিউটিতে ছিলেন এবং এতো বিপুল সংখ্যক কয়েদির মধ্যে মাত্র কয়েকজন পালাতে পেরেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে ওই কারাগারে নিরাপত্তা ক্যামেরা নেই।

জেল কর্মকর্তারা জানান, অনেক বন্দি হেরোইন ব্যবহারকারী ছিল এবং ভূমিকম্পের কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। লঞ্জার বলেন, ‘ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে এখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েদিদের সেল থেকে বের হতে দেয়া জেল কর্তৃপক্ষের একটি ভুল ছিল। তিনি এখনও পালিয়ে থাকা কয়েদিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান, নতুবা জেল ভেঙে পালানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হবে। শাহ বলেন,ছোট অপরাধের অভিযোগও সন্ত্রাসবাদ মামলার মতো বড় হয়ে দাঁড়াবে।