Dhaka ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে ধর্ষণের মামলা করায় বিপাকে ভিকটিমের পরিবার

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করায় ভিকটিমের পরিবারকে প্রাণনাশসহ নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে ধর্ষকের পরিবার। এতে বিপাকে পড়েছে ওই ভিকটিমের পরিবার। এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৪ মে পুনরায় আবার আদালতে মামলা করেছে ভিকটিমের পরিবার। এ দিকে ধর্ষণের কথা অভিযুক্ত ধর্ষক হুমায়ন কবির গ্রাম্য শালিস ও আদালতে স্বীকার করলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় নরমাল রিপোর্ট আসায় তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
পরিবারিক ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই মাদ্রাসা ছাত্রী টয়লেট শেষে তাদের ঘরে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার প্রতিবেশি চাচা দেলদুয়ারের বর্ণী গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ব্যবসায়ী মো. হুমায়ন কবির ওই ছাত্রীকে তার মুরগির খামারে নিয়ে হাত, মুখ বেঁধে একাধিকবার জোড়পূর্বক ধর্ষন করেন। বিষয়টি হুমায়নের ভাই মনিরুজ্জামান বিষয়টি দেখে ফেলে। ওই রাতেই বিষয়টি সমাধানের জন্য শালিসী বৈঠক বসে। শালিসে হুমায়ন কবির ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে চড় থাপ্পর দিয়ে সমাধান করা হয়। পরে ওই ছাত্রীর বাবা বিষয়টি না মেনে ৫ এপ্রিল দেলদুয়ার থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পরে পুলিশ হুমায়ন কবিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এ দিকে মামলা তুলে নিতে ভিকটিমের পরিবারকে হুমায়নের পরিবারের সদস্যরা চাপ, হুমকি, ধামকি দিচ্ছে। বুধবার(১৪ মে) নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় হুমায়ন কবিরের ভাই সুলতান মিয়া, মো. আলী আজম, মো. মিঠু মিয়া, মো. আব্দুল্লাহ, হুমায়ন কবিরের ছেলে মো. আসাদ মিয়া, আলী আজমের ছেলে মো. ওয়াসির মিয়া, সুলতান মিয়ার ছেলে মো. সাখাওয়াতকে বিবাদী করা হয়েছে।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমার একমাত্র মেয়ের যে এত বড় ক্ষতি করলো তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁদি দাবি করছি। পরবর্তীতে যাতে কেউ আর এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করার সাহস না পায়।
জেলা নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সংগঠক ফাতেমা রহমান বীথি বলেন, ‘ধর্ষণ এখন আমাদের সমাজে একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকার প্রতিটি পাতায় প্রতিদিন এই ভয়াবহতার প্রতিফলন দেখি। কিন্তু আমরা যা দেখি, তা আসলে ঘটনার এক ক্ষুদ্র অংশমাত্র। অধিকাংশ ঘটনা চাপা পড়ে যায় সামাজিক ‘মীমাংসা’, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিচারহীনতাই ধর্ষকদের সাহস জোগায়। আর সমাজে নারীর প্রতি সম্মানহীন দৃষ্টিভঙ্গি, নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা এবং নৈতিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় আমাদের আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা চাই, প্রতিটি ধর্ষণের বিচার হোক দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক অপরিহার্য অঙ্গীকার হিসেবে। নারীর প্রতি সম্মান, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে—এটা কেবল নারীর অধিকার নয়, সমাজের ভবিষ্যৎ টিকে থাকার প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই লড়াই শুধু ভুক্তভোগীদের নয়, বরং আমাদের সবার। নীরব থাকা মানে অপরাধের পক্ষে সায় দেয়া। তাই, রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি নাগরিকের উচিত একসাথে দাঁড়িয়ে এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রাম গড়ে তোলা।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মামলার পর আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।গত ৩১ মে মামলার অভিযোগ পত্র জমা দেয়া হয়েছে। ’
মামলার আইনজীবী সম্রাট পাহেলী বলেন, ‘মামলাটি দেলদুয়ার আমলী আদালত থেকে বুধবার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

টাঙ্গাইলে ধর্ষণের মামলা করায় বিপাকে ভিকটিমের পরিবার

Update Time : ১০:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করায় ভিকটিমের পরিবারকে প্রাণনাশসহ নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে ধর্ষকের পরিবার। এতে বিপাকে পড়েছে ওই ভিকটিমের পরিবার। এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৪ মে পুনরায় আবার আদালতে মামলা করেছে ভিকটিমের পরিবার। এ দিকে ধর্ষণের কথা অভিযুক্ত ধর্ষক হুমায়ন কবির গ্রাম্য শালিস ও আদালতে স্বীকার করলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় নরমাল রিপোর্ট আসায় তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
পরিবারিক ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই মাদ্রাসা ছাত্রী টয়লেট শেষে তাদের ঘরে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার প্রতিবেশি চাচা দেলদুয়ারের বর্ণী গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ব্যবসায়ী মো. হুমায়ন কবির ওই ছাত্রীকে তার মুরগির খামারে নিয়ে হাত, মুখ বেঁধে একাধিকবার জোড়পূর্বক ধর্ষন করেন। বিষয়টি হুমায়নের ভাই মনিরুজ্জামান বিষয়টি দেখে ফেলে। ওই রাতেই বিষয়টি সমাধানের জন্য শালিসী বৈঠক বসে। শালিসে হুমায়ন কবির ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে চড় থাপ্পর দিয়ে সমাধান করা হয়। পরে ওই ছাত্রীর বাবা বিষয়টি না মেনে ৫ এপ্রিল দেলদুয়ার থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পরে পুলিশ হুমায়ন কবিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এ দিকে মামলা তুলে নিতে ভিকটিমের পরিবারকে হুমায়নের পরিবারের সদস্যরা চাপ, হুমকি, ধামকি দিচ্ছে। বুধবার(১৪ মে) নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় হুমায়ন কবিরের ভাই সুলতান মিয়া, মো. আলী আজম, মো. মিঠু মিয়া, মো. আব্দুল্লাহ, হুমায়ন কবিরের ছেলে মো. আসাদ মিয়া, আলী আজমের ছেলে মো. ওয়াসির মিয়া, সুলতান মিয়ার ছেলে মো. সাখাওয়াতকে বিবাদী করা হয়েছে।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমার একমাত্র মেয়ের যে এত বড় ক্ষতি করলো তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁদি দাবি করছি। পরবর্তীতে যাতে কেউ আর এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করার সাহস না পায়।
জেলা নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সংগঠক ফাতেমা রহমান বীথি বলেন, ‘ধর্ষণ এখন আমাদের সমাজে একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকার প্রতিটি পাতায় প্রতিদিন এই ভয়াবহতার প্রতিফলন দেখি। কিন্তু আমরা যা দেখি, তা আসলে ঘটনার এক ক্ষুদ্র অংশমাত্র। অধিকাংশ ঘটনা চাপা পড়ে যায় সামাজিক ‘মীমাংসা’, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিচারহীনতাই ধর্ষকদের সাহস জোগায়। আর সমাজে নারীর প্রতি সম্মানহীন দৃষ্টিভঙ্গি, নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা এবং নৈতিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় আমাদের আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা চাই, প্রতিটি ধর্ষণের বিচার হোক দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক অপরিহার্য অঙ্গীকার হিসেবে। নারীর প্রতি সম্মান, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে—এটা কেবল নারীর অধিকার নয়, সমাজের ভবিষ্যৎ টিকে থাকার প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই লড়াই শুধু ভুক্তভোগীদের নয়, বরং আমাদের সবার। নীরব থাকা মানে অপরাধের পক্ষে সায় দেয়া। তাই, রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি নাগরিকের উচিত একসাথে দাঁড়িয়ে এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রাম গড়ে তোলা।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মামলার পর আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।গত ৩১ মে মামলার অভিযোগ পত্র জমা দেয়া হয়েছে। ’
মামলার আইনজীবী সম্রাট পাহেলী বলেন, ‘মামলাটি দেলদুয়ার আমলী আদালত থেকে বুধবার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হবে।