Dhaka ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রবীন্দ্রকাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ ১০ জনের নামে মামলা 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে শাহনেওয়াজ নামে এক দর্শনার্থীর ওপর হামলা ও তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে কাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে শাহজাদপুর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন শাহজাদপুর উপজেলার রুপপুর নতুনপাড়া গ্রামের শাহনেওয়াজের স্ত্রী ছাবরিনা আক্তার সুইটি।
আদালতের পেশকার আনোয়ার হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির কস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান,  গ্রন্থাগার পরিচালক শরীফুজ্জামান সরকার, বিদ্যুৎ ও বাগান পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, বাগান মালি শফিকুল ইসলাম, বাগান ও কাউন্টার পরিচালক মজিবুর রহমান, বাগান সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল মোমিন, শাহজাদপুর উপজেলার কাংলাকান্দা গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে নুহ শেখ, ফরিদপুর জেলার হাদল গ্রামের বাবলু সরকার, পাবনা জেলার আমিনপুর গ্রামের আনিসুর রহমান ও নাটোর জেলার গুরুদাসপুর গ্রামের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের রেজাউল। আসামিরা সবাই রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে কর্মরত আছেন।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ জুন মামলার বাদী ছাবরিনা আক্তার সুইটি তার স্বামী শাহনেওয়াজ ও ভাতিজা বোরহান সরকারকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে বেড়াতে যান। মোটরসাইকেল প্রবেশের সময় নিয়ম অনুযায়ী কাউন্টার পরিচালক টিকিটের টাকা গ্রহণ করলেও কোনো টোকেন প্রদান করেননি। আমরা (মামলার বাদী) সরল বিশ্বাসে ভেতরে প্রবেশ করে বেড়ানো শেষে বিকেল ৬টার দিকে বের হওয়ার সময় আসামিরা মামলার বাদীর কাছে টোকেন দেখতে চান। মামলার বাদী কোনো টোকেন দেওয়া হয়নি বললে, আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মামলার বাদী ও তার স্বামী গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় আসামিরা কাছারিবাড়ির মেইন গেট বন্ধ করে কাস্টোডিয়ানের হুকুমে আসামিরা মামলার বাদীর স্বামী শাহনেওয়াজকে লোহার পাইপ ও রড দিয়ে মারপিট করে আহত করে। এ সময় মামলার বাদীর পড়নের কাপড় টানা হিঁচড়া করে শ্লীলতাহানী করে ও গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়।
পরে আসামিরা শাহনেওয়াজকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে কাস্টোডিয়ানের কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং তার ব্যবহৃত অ্যান্ড্রোয়েড আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে শাহনেওয়াজের আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে পোতাজিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে আদালতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।
অপরদিকে দর্শনার্থীদের আটকিয়ে নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ানের বিচার দাবি করে  ১০ তারিখে স্থানীয়রা একটি মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে। ওই মিছিল থেকে কিছু ব্যক্তি কাছারীবাড়ির প্রবেশ করে অডিটোরিয়াম ও কাস্টোডিয়ানের কক্ষে কক্ষ ভাঙচুর করে। পরে এ ঘটনায় কাস্টোডিয়ান ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০/৫০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন । অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কাচারী বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারের হলে দুই দিন বন্ধ থাকার পর আবারো খুলে দেয় প্রশাসন। একই সাথে যত ভাই মীর অভিযানের মামলার ৯ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে দর্শনার্থীর পরিবার বৃহস্পতিবার বিকালে বলি আদালতে কাউন্টার মামলা দায়ের করেন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলবে

রবীন্দ্রকাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ ১০ জনের নামে মামলা 

জন দেখেছেন : ০৫:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে শাহনেওয়াজ নামে এক দর্শনার্থীর ওপর হামলা ও তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে কাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে শাহজাদপুর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন শাহজাদপুর উপজেলার রুপপুর নতুনপাড়া গ্রামের শাহনেওয়াজের স্ত্রী ছাবরিনা আক্তার সুইটি।
আদালতের পেশকার আনোয়ার হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির কস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান,  গ্রন্থাগার পরিচালক শরীফুজ্জামান সরকার, বিদ্যুৎ ও বাগান পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, বাগান মালি শফিকুল ইসলাম, বাগান ও কাউন্টার পরিচালক মজিবুর রহমান, বাগান সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল মোমিন, শাহজাদপুর উপজেলার কাংলাকান্দা গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে নুহ শেখ, ফরিদপুর জেলার হাদল গ্রামের বাবলু সরকার, পাবনা জেলার আমিনপুর গ্রামের আনিসুর রহমান ও নাটোর জেলার গুরুদাসপুর গ্রামের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের রেজাউল। আসামিরা সবাই রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে কর্মরত আছেন।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ জুন মামলার বাদী ছাবরিনা আক্তার সুইটি তার স্বামী শাহনেওয়াজ ও ভাতিজা বোরহান সরকারকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে বেড়াতে যান। মোটরসাইকেল প্রবেশের সময় নিয়ম অনুযায়ী কাউন্টার পরিচালক টিকিটের টাকা গ্রহণ করলেও কোনো টোকেন প্রদান করেননি। আমরা (মামলার বাদী) সরল বিশ্বাসে ভেতরে প্রবেশ করে বেড়ানো শেষে বিকেল ৬টার দিকে বের হওয়ার সময় আসামিরা মামলার বাদীর কাছে টোকেন দেখতে চান। মামলার বাদী কোনো টোকেন দেওয়া হয়নি বললে, আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মামলার বাদী ও তার স্বামী গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় আসামিরা কাছারিবাড়ির মেইন গেট বন্ধ করে কাস্টোডিয়ানের হুকুমে আসামিরা মামলার বাদীর স্বামী শাহনেওয়াজকে লোহার পাইপ ও রড দিয়ে মারপিট করে আহত করে। এ সময় মামলার বাদীর পড়নের কাপড় টানা হিঁচড়া করে শ্লীলতাহানী করে ও গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়।
পরে আসামিরা শাহনেওয়াজকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে কাস্টোডিয়ানের কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং তার ব্যবহৃত অ্যান্ড্রোয়েড আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে শাহনেওয়াজের আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে পোতাজিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে আদালতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।
অপরদিকে দর্শনার্থীদের আটকিয়ে নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ানের বিচার দাবি করে  ১০ তারিখে স্থানীয়রা একটি মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে। ওই মিছিল থেকে কিছু ব্যক্তি কাছারীবাড়ির প্রবেশ করে অডিটোরিয়াম ও কাস্টোডিয়ানের কক্ষে কক্ষ ভাঙচুর করে। পরে এ ঘটনায় কাস্টোডিয়ান ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০/৫০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন । অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কাচারী বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারের হলে দুই দিন বন্ধ থাকার পর আবারো খুলে দেয় প্রশাসন। একই সাথে যত ভাই মীর অভিযানের মামলার ৯ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে দর্শনার্থীর পরিবার বৃহস্পতিবার বিকালে বলি আদালতে কাউন্টার মামলা দায়ের করেন।