নীলফামারীর সৈয়দপুরে দিন দিন জুয়ার আসর বেড়েই চলছে। রেললাইনের ধার, খেলার মাঠ পাড়া-মহল্লা, অলিগলি, ঝুপড়ি ঘরে ও রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় প্রকাশ্যে বসছে জুয়ার আসর। এসব আসর দেখলে মনে হয় যেন বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় , সৈয়দপুর শহরে শতাধিক স্পটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসছে জুয়ার আসর। এসব আসরে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে উঠতি বয়সীদের সংখ্যাই বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, এসব আসরের কথা পুলিশ জানলেও উৎকোচ নিয়ে তারা নিশ্চুপ। তবে পুলিশের দাবি, জুয়া বন্ধে তারা সোচ্চার।
সৈয়দপুর শহরের ১ নং রেলগেট সংলগ্ন বানিয়াপাড়া থেকে গোলাহাট পর্যন্ত রেললাইনের ধারে প্রায় প্রতিদিনই ২০ থেকে ৩০ টি স্পটে জুয়ার আসর বসছে । এছাড়া রেলওয়ে মাঠ, রেলওয়ে ষ্টেশনের জিআরপি থানার ৫০ গজ পুর্ব পার্শে একটি টিনসীডের ঘরে, ফিদা-আলী মাঠ, কয়ানিজাপাড়া, কাজিপাড়া, বাঙ্গালীপুর নীজ পাড়ায়, সাহেবপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা আরও প্রায় ২০/২৫ টি স্পটে বসছে জুয়াড় আসর । এসব জুয়ার আসর থেকে প্রতি মাসে জুয়াড়িদের কাছে হাতবদল হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা।
রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় জুয়ার আসরে অভিযান চালান না কেন জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদ উন নাবী বলেন ব্যস্ততার কারনে অভিযান চালানোই হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়াড়ি বলেন,সৈয়দপুর শহরে সব মিলিয়ে শতাধিক জুয়ার স্পট রয়েছে। আর এসব জুয়ার আসর পরিচালনা করে ইমরুল কায়েস, বাদশা ও রাজু আহম্মেদ নামের ৩ ব্যাক্তি । স্পটগুলোতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি খেলা চলে। আর অনলাইনের মাধ্যমে একমাত্র বাদশা নামের ব্যাক্তিটিই জুয়ার বাদশা বলে পরিচিত সারা নীলফামারী জেলা এবং সে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এই বাদশা, সাওন নামের এক যুবকের কাছ থেকে অনলাইন জুয়ার ফাদে ফেলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশের সাথে মাসিক মোটা অংকের চুক্তি থাকায় সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে জানান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেক পরিবার এখন জুয়ার কারণে সর্বস্বান্ত হয়েছে। জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে এলাকায় বাড়ছে চুরির ঘটনা। এছাড়া জুয়াকে কেন্দ্র করে সামাজিক অশান্তি বাড়ছে।
শহরের ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার মতিউর রহমান নামে এক ব্যাক্তি বলেন, জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ও জুয়ার টাকা নিয়ে জুয়াড়িদের মধ্য প্রায় মারামারির ঘটনা ঘটছে। এতে করে এলাকার পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠছে।
কয়ানিজপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন , জুয়া একটা নেশা। এ নেশা মাদকের মতোই ভয়ংকর। এ নেশায় পড়ে সৈয়দপুরের একাধিক বড় ব্যবসায়ী এখন নি:স্ব। এ ব্যাপারে প্রশাসন শক্ত অবস্থান না নিলে আরও অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন বলেন, আমার এ কর্মস্থলে আসার বেশিদিন হয়নি তাই জুয়ার আসর সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ মাদক ও জুয়া বন্ধে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। সমাজকে বাঁচাতে জুয়া বন্ধে পুলিশকে সবার সহায়তা করা দরকার বলে জানান তিনি।