Dhaka ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবজিকে ঘিরে জেগে উঠছে বাংলাদেশের গেমিং কমিউনিটি

রাজধানীর মিরপুরের গলি থেকে সিলেটের ছাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এক অভিন্ন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা। মোবাইল গেমিং, বিশেষ করে ‘পাবজি মোবাইল’, দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সংযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একসময় নিছক একটি বিনোদন হিসেবে দেখা এই গেমটি আজ গভীর এক আবেগ, শেয়ার করা আগ্রহ, নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম ও তরুণদের সম্মিলিত অনুভূতির জায়গা করে নিয়েছে।

দেশজুড়ে ফোর-জি নেটওয়ার্কের বিস্তার ও সাশ্রয়ী দামে স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় মোবাইল গেমিং এখন প্রায় সবার কাছে পৌঁছেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের মাঝে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ‘পাবজি মোবাইল’। গেমটির গেমপ্লের চেয়ে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে এর উত্তেজনা, কৌশল ও দলগত সংযোগের অনুভূতি। প্রতিটি ম্যাচ কেবল খেলা নয়, এটি একটি কৌশলের লড়াই, উত্তেজনার মুহূর্ত ও নিঃশব্দে গড়ে ওঠা এক ধরনের সম্পর্কের ভাষা।

একটি গোটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ‘পাবজি’র সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে গভীর রাতে ছাদে বসে চলা গেমিং সেশনে গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব, স্মৃতি ও শক্তিশালী গেমিং কমিউনিটি। যদিও বিভিন্ন সময়ে এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তবে এখন সেই সুযোগ আবার ফিরে এসেছে।

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় গেমিং প্রতিযোগিতা ‘পাবজি মোবাইল সুপার লিগ’-এর বাংলাদেশ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের গেমিং অঙ্গনের জন্য এক মাইলফলক। তরুণদের অংশগ্রহণ, দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও আয়োজন ঘিরে তৈরি হওয়া উদ্দীপনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে ‘পাবজি’ শুধু খেলা নয়, এটি এখন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

সেই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম লেখায় বাংলাদেশের গেমিং দল ‘এ ওয়ান ই-স্পোর্টস’। তারা এশিয়ার সেরা গেমারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয় ‘সিএসএ স্প্রিং ২০২৫’-এর চূড়ান্ত পর্বে। শুধু জয়-পরাজয়ের গল্প ছাপিয়ে এটি ছিল এক সাহসী বার্তা যে বাংলাদেশের তরুণ গেমাররা প্রস্তুত, তারা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে এবং প্রমাণ করছে দেশের গেমিং সম্প্রদায় প্রাণবন্ত, প্রতিযোগিতামূলক ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।

এই গেমিং পুনর্জাগরণে প্রাণ সঞ্চার করেছে সেইসব ব্র্যান্ড যারা তরুণ প্রজন্মের গেমিং সংস্কৃতির স্পন্দন বুঝতে পারে। ইনফিনিক্স, উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের পিএমসিসি বাংলাদেশ নামের একটি টুর্নামেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আগ্রহ ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব আয়োজন শুধু দলগত খেলার রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেনি, বরং দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা গেমিং কমিউনিটিকেও নতুন করে গড়ে তুলেছে।

তরুণদের চাহিদা মেটাতে ইনফিনিক্স গেমারদের জন্য বিশেষ পারফরম্যান্স ও ব্যাটারি লাইফের নতুন স্মার্টফোন নিয়ে আসছে। এটি ইনফিনিক্সের জনপ্রিয় জিটি সিরিজের অংশ হবে বলেও জানা গেছে; যা তরুণ গেমারদের জন্য প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে থাকার শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

দেশজুড়ে গেমিং ক্যাফে পুনরায় খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো পুনর্গঠিত হচ্ছে এবং লাইভস্ট্রিমে ভক্তরা মিলিত হচ্ছে। এখন আর শুধু র‍্যাংক বাড়ানো বা ‘চিকেন ডিনার’ জেতার বিষয় নয়, এটি এক প্রজন্মকে আবার একত্রিত করার এবং গেমারদের নিজেদের ঘর ফিরে পাওয়ার আয়োজন।

বাংলাদেশের মোবাইল গেমিং যাত্রা যতই এগিয়ে যাচ্ছে, তার প্রাণকেন্দ্রে থেকে যাচ্ছে ‘পাবজি’। এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও সংযোগের এক বিশেষ মাধ্যম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

পাবজিকে ঘিরে জেগে উঠছে বাংলাদেশের গেমিং কমিউনিটি

Update Time : ১১:৪৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর মিরপুরের গলি থেকে সিলেটের ছাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এক অভিন্ন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা। মোবাইল গেমিং, বিশেষ করে ‘পাবজি মোবাইল’, দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সংযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একসময় নিছক একটি বিনোদন হিসেবে দেখা এই গেমটি আজ গভীর এক আবেগ, শেয়ার করা আগ্রহ, নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম ও তরুণদের সম্মিলিত অনুভূতির জায়গা করে নিয়েছে।

দেশজুড়ে ফোর-জি নেটওয়ার্কের বিস্তার ও সাশ্রয়ী দামে স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় মোবাইল গেমিং এখন প্রায় সবার কাছে পৌঁছেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের মাঝে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ‘পাবজি মোবাইল’। গেমটির গেমপ্লের চেয়ে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে এর উত্তেজনা, কৌশল ও দলগত সংযোগের অনুভূতি। প্রতিটি ম্যাচ কেবল খেলা নয়, এটি একটি কৌশলের লড়াই, উত্তেজনার মুহূর্ত ও নিঃশব্দে গড়ে ওঠা এক ধরনের সম্পর্কের ভাষা।

একটি গোটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ‘পাবজি’র সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে গভীর রাতে ছাদে বসে চলা গেমিং সেশনে গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব, স্মৃতি ও শক্তিশালী গেমিং কমিউনিটি। যদিও বিভিন্ন সময়ে এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তবে এখন সেই সুযোগ আবার ফিরে এসেছে।

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় গেমিং প্রতিযোগিতা ‘পাবজি মোবাইল সুপার লিগ’-এর বাংলাদেশ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের গেমিং অঙ্গনের জন্য এক মাইলফলক। তরুণদের অংশগ্রহণ, দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও আয়োজন ঘিরে তৈরি হওয়া উদ্দীপনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে ‘পাবজি’ শুধু খেলা নয়, এটি এখন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

সেই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম লেখায় বাংলাদেশের গেমিং দল ‘এ ওয়ান ই-স্পোর্টস’। তারা এশিয়ার সেরা গেমারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয় ‘সিএসএ স্প্রিং ২০২৫’-এর চূড়ান্ত পর্বে। শুধু জয়-পরাজয়ের গল্প ছাপিয়ে এটি ছিল এক সাহসী বার্তা যে বাংলাদেশের তরুণ গেমাররা প্রস্তুত, তারা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে এবং প্রমাণ করছে দেশের গেমিং সম্প্রদায় প্রাণবন্ত, প্রতিযোগিতামূলক ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।

এই গেমিং পুনর্জাগরণে প্রাণ সঞ্চার করেছে সেইসব ব্র্যান্ড যারা তরুণ প্রজন্মের গেমিং সংস্কৃতির স্পন্দন বুঝতে পারে। ইনফিনিক্স, উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের পিএমসিসি বাংলাদেশ নামের একটি টুর্নামেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আগ্রহ ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব আয়োজন শুধু দলগত খেলার রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেনি, বরং দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা গেমিং কমিউনিটিকেও নতুন করে গড়ে তুলেছে।

তরুণদের চাহিদা মেটাতে ইনফিনিক্স গেমারদের জন্য বিশেষ পারফরম্যান্স ও ব্যাটারি লাইফের নতুন স্মার্টফোন নিয়ে আসছে। এটি ইনফিনিক্সের জনপ্রিয় জিটি সিরিজের অংশ হবে বলেও জানা গেছে; যা তরুণ গেমারদের জন্য প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে থাকার শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

দেশজুড়ে গেমিং ক্যাফে পুনরায় খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো পুনর্গঠিত হচ্ছে এবং লাইভস্ট্রিমে ভক্তরা মিলিত হচ্ছে। এখন আর শুধু র‍্যাংক বাড়ানো বা ‘চিকেন ডিনার’ জেতার বিষয় নয়, এটি এক প্রজন্মকে আবার একত্রিত করার এবং গেমারদের নিজেদের ঘর ফিরে পাওয়ার আয়োজন।

বাংলাদেশের মোবাইল গেমিং যাত্রা যতই এগিয়ে যাচ্ছে, তার প্রাণকেন্দ্রে থেকে যাচ্ছে ‘পাবজি’। এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও সংযোগের এক বিশেষ মাধ্যম।