Dhaka ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পোরশায় কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল চাঁনবতী

ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন চাঁনবতী। তিনি নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউপির কামারধা গ্রামের সমাতিগ্যার স্ত্রী। ছোটবেলা থেকেই চাঁনবতীর স্বপ্নছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। কিছু একটা করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু কি করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে বিয়ে হয় সমাতিগ্যার সঙ্গে। স্বামী কখনো ভ্যান চালান কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এর মধ্যে তাদের সংসারে আগমন ঘটে ১ছেলে ও ১মেয়ের। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। ঠিক তখনই তিনি ভাবতে শুরু করেন উদ্যোক্তা হওয়ার।

গত ৩বছর পূর্বে এলাকায় কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি’র সার্বিক সহযোগীতায় তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ। প্রকল্পের সহযোগীতায় বাড়ির উঠানের একপাশে প্রথমে তিনি ২টি রিং পার্ট দিয়ে শুরু করেন। সফলতা পেয়ে বর্তমানে তার বাড়িতে ৮টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকরা কেঁচো বা ভার্মি কম্পোস্ট সার কিনতে আসেন তার বাড়িতে। ছোট খামার থেকেই তিনি এখন প্রতিমাসে ৪হাজার টাকার উপরে আয় করছেন।

কেঁচো সার উৎপাদনকারী চাঁনবতী জানান, প্রথমে ২টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। এই সার দিয়ে তিনি প্রথমে অন্যের জমি চেয়ে নিয়ে পিয়াজ, রসুন, সিম ও বিভিন্ন  শাক-সবজী চাষাবাদ করেন। নিজেরা খেয়ে বাড়তিটুকু বিক্রি করতেন তিনি।

পরবর্তীতে ভাল গুনাগুন পেয়ে বাড়াতে বাড়াতে বর্তমানে তিনি ৮টি রিং পার্টে সার তৈরি করছেন। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা তার নিকট থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। প্রতি মাসে সার বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪হাজার টাকা, সাথে কেচোঁ বিক্রি করেও আয় করেন বলে তিনি জানান। তবে আগামীতে তিনি সার উৎপাদন আরো বাড়াবেন বলে জানান।

বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি’র উপজেলা কো-অর্ডিনেটর স্টিভ রায় রুপন জানান, কেচোঁ সার উৎপাদনে আমাদের প্রকল্পের রোলমডেল চাঁনবতী ও সমাতিগ্যার পরিবার। তাদের এই কেচোঁ সার উৎপাদন দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রকল্পের কৃষিকাজের সাথে জড়িত রয়েছে এমন অন্যান্য সদস্যরাও সার উৎপাদনের জন্য পরামর্শ গ্রহন করছেন, আমরাও কৃষকদের উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগীতা প্রদান করছি। ভবিষ্যতে আরো অন্তত৭০-১০০ জন এমন উদ্যাক্তা তৈরী এবং “কেচোঁ সার উৎপাদন গ্রাম”করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যা ভবিষ্যতে উত্তমজৈব কৃষি চর্চায় সহায়ক হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনূর রশিদ বলেন, বাজারের রাসায়নিক সারের চেয়ে কেঁচো সারের দাম তুলানামূলক অনেক কম। এই সার ব্যবহারে ফসলের অনেক রোগবালাই কম হয়। তিনি সকল কৃষকদের কেঁচো সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

পোরশায় কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল চাঁনবতী

Update Time : ০২:৩৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন চাঁনবতী। তিনি নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউপির কামারধা গ্রামের সমাতিগ্যার স্ত্রী। ছোটবেলা থেকেই চাঁনবতীর স্বপ্নছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। কিছু একটা করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু কি করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে বিয়ে হয় সমাতিগ্যার সঙ্গে। স্বামী কখনো ভ্যান চালান কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এর মধ্যে তাদের সংসারে আগমন ঘটে ১ছেলে ও ১মেয়ের। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। ঠিক তখনই তিনি ভাবতে শুরু করেন উদ্যোক্তা হওয়ার।

গত ৩বছর পূর্বে এলাকায় কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি’র সার্বিক সহযোগীতায় তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ। প্রকল্পের সহযোগীতায় বাড়ির উঠানের একপাশে প্রথমে তিনি ২টি রিং পার্ট দিয়ে শুরু করেন। সফলতা পেয়ে বর্তমানে তার বাড়িতে ৮টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকরা কেঁচো বা ভার্মি কম্পোস্ট সার কিনতে আসেন তার বাড়িতে। ছোট খামার থেকেই তিনি এখন প্রতিমাসে ৪হাজার টাকার উপরে আয় করছেন।

কেঁচো সার উৎপাদনকারী চাঁনবতী জানান, প্রথমে ২টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। এই সার দিয়ে তিনি প্রথমে অন্যের জমি চেয়ে নিয়ে পিয়াজ, রসুন, সিম ও বিভিন্ন  শাক-সবজী চাষাবাদ করেন। নিজেরা খেয়ে বাড়তিটুকু বিক্রি করতেন তিনি।

পরবর্তীতে ভাল গুনাগুন পেয়ে বাড়াতে বাড়াতে বর্তমানে তিনি ৮টি রিং পার্টে সার তৈরি করছেন। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা তার নিকট থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। প্রতি মাসে সার বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪হাজার টাকা, সাথে কেচোঁ বিক্রি করেও আয় করেন বলে তিনি জানান। তবে আগামীতে তিনি সার উৎপাদন আরো বাড়াবেন বলে জানান।

বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি’র উপজেলা কো-অর্ডিনেটর স্টিভ রায় রুপন জানান, কেচোঁ সার উৎপাদনে আমাদের প্রকল্পের রোলমডেল চাঁনবতী ও সমাতিগ্যার পরিবার। তাদের এই কেচোঁ সার উৎপাদন দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রকল্পের কৃষিকাজের সাথে জড়িত রয়েছে এমন অন্যান্য সদস্যরাও সার উৎপাদনের জন্য পরামর্শ গ্রহন করছেন, আমরাও কৃষকদের উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগীতা প্রদান করছি। ভবিষ্যতে আরো অন্তত৭০-১০০ জন এমন উদ্যাক্তা তৈরী এবং “কেচোঁ সার উৎপাদন গ্রাম”করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যা ভবিষ্যতে উত্তমজৈব কৃষি চর্চায় সহায়ক হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনূর রশিদ বলেন, বাজারের রাসায়নিক সারের চেয়ে কেঁচো সারের দাম তুলানামূলক অনেক কম। এই সার ব্যবহারে ফসলের অনেক রোগবালাই কম হয়। তিনি সকল কৃষকদের কেঁচো সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন।