Dhaka ১০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভরাটের বিশাল অংশ ভুমিদস্যুদের দখলে

পাইকগাছায় শিবসা নদীতো নয় এখন গোচারণ ভূমি

পাইকগাছার ভরাট হওয়া শিবসা নদী খননের কাজ। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের মধ্যে ১৫-২০ বছর যাবৎ সীমাবদ্ধ রয়েছে কর্তৃপক্ষের নিরাবতার কারণে নদী ভরাটের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভুমিদস্যুরা।

উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এক সময়ের খরস্রোত প্রমত্তা শিবসা নদী। যার একুল থেকে ওকুল দেখা যেত কুয়াশার মতো। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতে হলে নদী পারাপারের কোন বিকল্প ছিলনা। এজন্য ছিলো খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘাটে থাকতো সারি সারি নৌকা। থাকতো খেয়ার নৌকা, আবার থাকতো জলদি নৌকা। প্রচন্ড ভীড়ে ঠেলাঠেলি করে নৌকা চড়তে হতো সেসময়। এমনকি পালতোলা নৌকাও চলতো এ নদীতে। এছাড়াও দিনরাত চলতো লঞ্চ, কার্গো,গানবোট, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। কয়রা-পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন এ নদী পথেই খুলনা ও মোংলা বন্দরে যাতায়াত করতো। এখন সব কিছুই শুধু স্মৃতি মনে হয়। রুপ কথার গল্পের মত। বর্তমানে নদীতে সাধারণ জনগণ পায়ে হেটে চলাচল করছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। পরিনত হয়েছে গোচারণ ভুমিতে।

এদিকে পৌরসভায় শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরী করে অনেকেই শত শত বিঘা দখল করে নিয়ে চিংড়ী চাষ করছে। তৈরী করেছে বাড়ী ঘর ও স্থাপনা। শিববাটী ব্রীজ থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটারের সম্পুর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখা-লেখি, আন্দোলন সংগ্রাম ও হয়েছে। বিভিন্ন সময় তৎকালীন সংসদ সংসদ্যরা আশ্বাস দিয়েছেন,এইতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, খুব শীঘ্রই খনন শুরু হবে। এই শুনতে শুনতে ১৫ থেকে ২০ বছর চলে গেছে। সবকিছুই তাদের আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। নৌকার মাঝি হাজু দাশ জানান, বাবার হাত ধরে নৌকার মাঝি হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ পার করে সংসার চলতো। এখন নদী নেই সেকারনে আমাদের পেশা বদল করতে হয়েছে। আয়-রোজগার কমেছে। শামসুর মাঝি জানান, দেশ স্বাধিনের পর থেকে খুলনা থেকে পাইকগাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেয়া করছি। এখন নদী ভরাট হওয়ার কারনে অত্যন্ত ২০কিঃ মিটার বেশি ঘুরে মালামাল শিববাটী ব্রিজের নিচে নামাতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহনে খরচ বাড়ছে। নদী খনন হলে পাইকগাছার ব্যবসা-বানিজ্য বাড়বে। পাইকগাছার সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এফ এম এ রাজ্জাক জানান, শিবসা নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের এখন গলার কাটা হয়েছে। ভূমিদস্যুরা চর ভরাটী জমি দখল করে নিচ্ছে। অচিরেই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।

পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা শিবসা নদী খননের জন্য প্রায় ১৫বছর আন্দোলন করছি। বিগত সকল সংসদ সংসদরা আমাদের খননের জন্য আশ্বাস দিয়ে পাইকগাছাবাসীকে আশাহত করেছে। অচিরেই এনদী খনন করতে না পারলে শিবসা নদী মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। পৌরবাসী বন্যায় আক্রান্ত হবে।

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী  রাজু হাওলাদার জানান, নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমাস্যা সমাধানের কোন উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারকে বার বার অবহিত করা হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, আমি নিজেও দেখেছি শিবসা নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খনন করা জরুরী। শিবসা নদী খননের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেওয়া চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি

ভরাটের বিশাল অংশ ভুমিদস্যুদের দখলে

পাইকগাছায় শিবসা নদীতো নয় এখন গোচারণ ভূমি

Update Time : ০৪:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

পাইকগাছার ভরাট হওয়া শিবসা নদী খননের কাজ। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের মধ্যে ১৫-২০ বছর যাবৎ সীমাবদ্ধ রয়েছে কর্তৃপক্ষের নিরাবতার কারণে নদী ভরাটের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভুমিদস্যুরা।

উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এক সময়ের খরস্রোত প্রমত্তা শিবসা নদী। যার একুল থেকে ওকুল দেখা যেত কুয়াশার মতো। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতে হলে নদী পারাপারের কোন বিকল্প ছিলনা। এজন্য ছিলো খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘাটে থাকতো সারি সারি নৌকা। থাকতো খেয়ার নৌকা, আবার থাকতো জলদি নৌকা। প্রচন্ড ভীড়ে ঠেলাঠেলি করে নৌকা চড়তে হতো সেসময়। এমনকি পালতোলা নৌকাও চলতো এ নদীতে। এছাড়াও দিনরাত চলতো লঞ্চ, কার্গো,গানবোট, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। কয়রা-পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন এ নদী পথেই খুলনা ও মোংলা বন্দরে যাতায়াত করতো। এখন সব কিছুই শুধু স্মৃতি মনে হয়। রুপ কথার গল্পের মত। বর্তমানে নদীতে সাধারণ জনগণ পায়ে হেটে চলাচল করছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। পরিনত হয়েছে গোচারণ ভুমিতে।

এদিকে পৌরসভায় শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরী করে অনেকেই শত শত বিঘা দখল করে নিয়ে চিংড়ী চাষ করছে। তৈরী করেছে বাড়ী ঘর ও স্থাপনা। শিববাটী ব্রীজ থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটারের সম্পুর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখা-লেখি, আন্দোলন সংগ্রাম ও হয়েছে। বিভিন্ন সময় তৎকালীন সংসদ সংসদ্যরা আশ্বাস দিয়েছেন,এইতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, খুব শীঘ্রই খনন শুরু হবে। এই শুনতে শুনতে ১৫ থেকে ২০ বছর চলে গেছে। সবকিছুই তাদের আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। নৌকার মাঝি হাজু দাশ জানান, বাবার হাত ধরে নৌকার মাঝি হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ পার করে সংসার চলতো। এখন নদী নেই সেকারনে আমাদের পেশা বদল করতে হয়েছে। আয়-রোজগার কমেছে। শামসুর মাঝি জানান, দেশ স্বাধিনের পর থেকে খুলনা থেকে পাইকগাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেয়া করছি। এখন নদী ভরাট হওয়ার কারনে অত্যন্ত ২০কিঃ মিটার বেশি ঘুরে মালামাল শিববাটী ব্রিজের নিচে নামাতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহনে খরচ বাড়ছে। নদী খনন হলে পাইকগাছার ব্যবসা-বানিজ্য বাড়বে। পাইকগাছার সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এফ এম এ রাজ্জাক জানান, শিবসা নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের এখন গলার কাটা হয়েছে। ভূমিদস্যুরা চর ভরাটী জমি দখল করে নিচ্ছে। অচিরেই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।

পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা শিবসা নদী খননের জন্য প্রায় ১৫বছর আন্দোলন করছি। বিগত সকল সংসদ সংসদরা আমাদের খননের জন্য আশ্বাস দিয়ে পাইকগাছাবাসীকে আশাহত করেছে। অচিরেই এনদী খনন করতে না পারলে শিবসা নদী মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। পৌরবাসী বন্যায় আক্রান্ত হবে।

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী  রাজু হাওলাদার জানান, নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমাস্যা সমাধানের কোন উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারকে বার বার অবহিত করা হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, আমি নিজেও দেখেছি শিবসা নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খনন করা জরুরী। শিবসা নদী খননের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবো।