মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে এখন দেদারছে মাদক পাচার হচ্ছে। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাঝেমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় চালান র্যাব ও যৌথবাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও এটি বৃহৎ চালানের ক্ষুদ্র একটা অংশ বলে দাবী করছেন সচেতন মহল। গেল দেড় মাসে যৌথবাহিনী, বিজিবি র্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয় ১৮জন পাচারকারী। এসময় উদ্ধার হয় ১৯২ বোতল ফেনসিডিল, ৯৩ কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রির ২লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সীমান্ত গলিয়ে কিভাবে মাদক পাচার হয়ে আসছে সেটি এখন বেশ আলোচনায়। তবে প্রশাসন বলছে- মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেহেরপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার হচ্ছে। তবে গাংনী এলাকায় পাচার হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে গাঁজা ও ফেনসিডিল পাচার হচ্ছে দেদারছে। নারী পুরুষ যেন কোমর বেঁধে নেমেছে পাচার কাজে। ৭ নভেম্বর যৌথবাহিনী গাংনীর ভোমরদহ ও ভাটপাড়া কলোনীতে পৃথক অভিযানে দুই নারীসহ চার মাদক পাচারকারীকে আটক যৌথবাহিনী। উদ্ধার করা হয় ২২ কেজি গাঁজা, ১৭ বোতল ফেনসিডিল। জব্দ করা হয় মাদক বিক্রির ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আটককৃতরা হচ্ছে- কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত গ্রামের তিলকজান ও মুন্সিগঞ্জ গ্রামের কহিনুর বেগম এবং ভ্যান চালক ইন্তাদুল ও জয়নাল আবেদীন।
একই দিন সন্ধ্যারাতে গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার থেকে মিলন সাহা নামের একজনকে ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক করেছে বামন্দী ক্যাম্প পুলিশ। ০৫ নভেম্বর গাংনীর তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তৌফিক মোল্লা (২৭) নামের এক মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে র্যাব। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা। ১ নভেম্বর গাড়াবাড়িয়া থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ শামীম ওরফে রাজু ও মোমিনুলকে আটক করেছে গাংনী থানা পুলিশ। ৩১ অক্টৈাবর কুয়াকাটাগামী যাত্রিবাহি বাসে অীভযান চালিয়ে ৪০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।
২৬ অক্টোবর সকালে গাংনী র্যাব ক্যাম্পের একটি টিম বালিয়াঘাট থেকে এখলাচ মিয়াকে ৩৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। ১৯ অক্টোবর মুজিবনগরে বল্লভপুরে ১১ কেজি গাঁজাসহ দিপককে আটক করেছে বিজিবি। ১৮ অক্টোবর কাথুলি থেকে ২ কেজি গাজাসহ লিখন নামের এক পাচারকারীকে আটক করেছে পুলিশ। ১৩ অক্টৈাবর গাংনী শহর থেকে ২ কেজি গাজাসহ ইন্তাজুল ও আনোয়ার আটক করেছে র্যাব। ৮ অক্টোবর সাহারবাটি বাজার থেকে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাজাসহ শরিফুল নামের এক পাচারকারীকে আটক করে।
৩ অক্টোবর সদর উপজেলার কলোনীপাড়া থেকে ৪ কেজি গাজাসহ র্যাবের হাতে আটক হয় লালচাদ । ২৭ সেপ্টেম্বর ৩৬ কেজি গাজাসহ রাকিব নামের এক পাচারকারী তার নিজবাড়ি ধলা থেকে আটক করে র্যাব। সীমান্তের ওপার থেকে পাচার করে আনা এ গাঁজার চালানটি পাচারের জন্য রেখেছিল রাকিব। ২০ সেপ্টেম্বর তেরাইল থেকে ১০০ বোতল ফেন্সিডিলসহ এরশাদ আলী ও আবুল কালাম আজাদকে আটক করে যৌথ বাহিনী। আবুল কালাম আজাদ এলাকার চিহ্নিত মাদক পাচারকারী।
একাধিক মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে মাদক কিনে আনতেন। বর্তমানে স্বর্ণের বার ওপারে পাচারের বদলে এপারে আসে মাদক। মাদকের ব্যবসা হচ্ছে তিনটি ধাপে। একটি দল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাদক নিয়ে আসে। তারা পৌঁছে দেয় এজেন্টদের কাছে। এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করায়। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক বিক্রি, পরিবহন ও খুচরা বিক্রির কাজে ব্যবহার করছেন নেপথ্যে নায়করা। তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
মাদক পাচারের ব্যাপারেও পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। পাচারকারীরা জানায়, সীমান্তের এপার থেকে কাঁটাতারের ওপারে স্বর্ণের বার কিংবা অন্যান্য মালামাল নিক্ষেপ করা হয়। বিনিময়ে টেপ দিয়ে মোড়ানো মাদক এপারে ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো সুযোগ বুঝে সংগ্রহ করে সীমান্তের কাছাকাছি কোন বাড়িতে মজুদ করা হয়। পরে পরিস্থিতি অনুযায়ি বিভিন্ন মাধ্যমে ছোট ছোট করে মাদক বড় শহরগুলোতে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজর এড়াতে বোরকা পরিহিত নারী ও শিশুদেরকে ব্যবহার করা হয় অনেকাংশে।
এদিকে মাদকদ্রব্য সজহলভ্যতার কারণে বেড়েছে মাদক সেবীর সংখ্যা। এদের একটা অংশ উঠতি বয়সী নারী পুরুষ। মাদক বিরোধি অভিযানে এরাই মূলতঃ আটক হয় বলে দাবী করা হয়েছে সচেতন মহল ও প্রশাসনের কয়েকজন। পরোকীয়া প্রেম বিরহ বিচ্ছেদ, উচ্চাভিলাসী জিবন যাপনের প্রত্যয়, দেখা দেখি ও পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে অনেকেই মাদকাসক্ত হচ্ছেন। নারীদের মাদকাসক্তের বিষয়টি সামনে আসেনা কেননা, তারা অতি গোপনে বিভিন্ন চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন। অনেকে লোক লজ্জ্বার ভয়ে মুখ খোলেনা।
জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিরীন আকতার জানান, মাদক নির্মূলে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়; মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট নেপথ্য নায়কদের আটক করা সম্ভব হয় না। এসব ঘটনায় শুধু মাদক বহনকারী ইজিবাইক চালক, কিশোর-তরুণ, বেকার যুবকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ ধরা পড়ে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় মাদকসেবীদের আটক করা হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মামলা দিলে সেটি তদন্ত করে পুলিশ। তবে মাদক পাচারের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে পারে না তারা।
৪৭ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মাহাবুব মুর্শেদ রহমান জানান, মাদক নিমূর্লে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। সীমান্তে টহল রয়েছে। মাদক নির্মূলে বিএসএফের সাথেও বৈঠক করা হয়। পাচারকারীদের আটকের পাশাপাশি যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদেরকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। অভিযানের বিষয় পুলিশের সাথে অসহযোগিতার ব্যাপারে তিনি আরো জানান, সীমান্ত এলাকায় অভিযানে যে কোন বাহিনী যাক না কেন বিজিবিকে অবহিত করা জরুরী। যেহেতু সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। তার পরও কোন বাহিনীর সাথে ভূণ বোঝাবুঝি হোক সেটা বিজিবি চায় না। সব বাহিনী মিলে মাদক নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।