Dhaka ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোল্যান্ডে পাঠানোর নামে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি

সোনার হরিণ বিদেশ (পোল্যান্ড) পাঠানোর নামে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাল্টা মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী মাসুম সরদার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

মাসুম সরদার বলেন, তিনি ময়মনসিংহ নগরীর গোলপুকুর পাড়ে পুরাতন লোহার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। নগরীর দূর্গাবাড়ি, আমলাপাড়াস্থ এডভোকেট আব্দুল বারীর ছেলে ইয়াসির বারী ওরফে হৃদয় বাবু ওরফে ইয়াসির বারী আল আহাদ তার পূর্ব পরিচিত। ২০২০ ইং সালে সে তার (মাসুম) এর দোকানে আসা যাওয়ার এক পর্যায়ে তার সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে থাকে।

আলাপ চারিতায় সে নিজেকে ৩২ তম বিসিএস ক্যাডার এবং সিনিয়র সহকারী কমিশনার (কাস্টম) পরিচয় দেয় এবং তার আইডি কার্ড ও ইউনিফর পরা ছবি দেখায়। সে প্রায়ই ছুটিতে ময়মসসিংহ আসেন।ডিজিএফআই ও এনএসআই এর সাথে তার জরুরী মিটিং আছে বলেও তিনি দাবি করেন। তার স্ত্রী হাবিবা খাতুন (লিডা) ঢাকার বনানীতে এশিয়ান ট্রাভেল গুরু নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলে জানায়।

কৌশলে উচ্চ বিলাসিতার গল্প শুনিয়ে তিনি বৈধভাবে তাকে বিদেশ তথা পোল্যান্ড পাঠানোর প্রস্তাব দেয় এবং বলে অন্যদের থেকে ১৫/২০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এলাকার মানুষ বিধায় তার থেকে ১১ লাখ টাকা নিবে। প্রস্তাবে রাজি হলে পাসপোর্টে ভিসা লাগানোর কথা বলে তিনি মাসুমকে তার নিজের (মাসুমের) খরচে ইন্ডিয়া ভ্রমনে যায়। কিছুদিন পর পোল্যান্ডে ওর্য়াক পারমিট হয়েছে এবং উজবেকিস্তান যাওয়ার পর সেখান থেকে পোল্যান্ডের ভিসা হবে।

তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাবু প্রথমে পাসপোর্ট ও নগদ এক লাখ টাকা নেয়। এরপর ইন্ডিয়া, উজবেকিস্তান ও পোল্যান্ডের ভিসার আবেদনের জন্য এবং বিমানের টিকেট বাবদ পর্যায়ক্রমে হাতে হাতে ২ লাখ টাকা এবং ডকুমেন্ট সহ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এভাবে ইয়াসির বারী ওরফে হৃদয় বাবু পোল্যান্ড পাঠানোর নামে মাসুমের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং বাকি টাকা পোল্যান্ড পৌছার পর দিতে বলে।

বিসিএস ক্যাডার ও কাস্টমস কর্মকর্তা এবং স্ত্রীর নামে ট্রাভেল এজেন্সি থাকার কথায় মাসুম আশস্থ হয়ে কয়েক দফায় ৮ লাখ টাকা দেয়। পরে মাসুম সরদারকে ৩১/১২/২০২০ ইং তারিখ ইন্ডিয়া পাঠায় এবং ০৮/০১/২০২১ ইং তারিখ ইন্ডিয়া থেকে উজবেকিস্তানে পাঠায়। উজবেকিস্তানে এক মাস থাকার পর পোল্যান্ডে পৌঁছাবে বলে তাকে আশ্বস্থ করে ইয়াসির বারী। কান্নাজড়িত কন্ঠে মাসুম সরদার বলেন, উজবেকিস্তানে দুই মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করে পোল্যান্ডের ভিসা করতে না পেরে সব হারিয়ে তিনি সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করেন।

নিরুপায় হয়ে তিনি বাবুর কাছে টাকা ফেরত চাইলে টাকা দিবে না বলে হুমকী দিতে থাকে। তুই কিভাবে দেশে আসবি দেখে নেব। মাসুম আরো বলেন, এভাবে ৬ মাস উজবেকিস্তানে মানবেতর জীবন যাপনশেষে পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি দেশে আসেন। দেশে এসে তার সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করে সারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মাসুম ভাটারা (ডিএমপি) থানায় ইয়াসির বারী উরফে হৃদয় বাবু উরফে আল আহাদ ও তার স্ত্রী হাবিবা খাতুন এবং দালাল চক্রের সদস্য সহ ৬ জনের নামে মামলা করেন। ভাটারা (ডিএমপি) থানার মামলা নং- ৪৮, তারিখ ২৪/০৬/২১ ইং, ধারা- মানব পচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬(২), ৭/৮(১)/১০(১)। মামলাটি ঢাকা সিআইডি পুলিশ তদন্তকালে ইয়াসির বারী উরফে হৃদয় বাবু ও তার স্ত্রী সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। চক্রটি দীর্ঘদিন জেল হাজতশেষে জামিনে মুক্তি পায়।

সিআইডি পুলিশ ১৭/১৩/২০২৩ তারিখে মামলার চার্জশীট জমা দিলে হৃদয় বাবুর আত্মীয় স্বজন তার বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ পিতার দোহাই দিয়ে তার খালাতো ভাই সোহেল রুপালী ব্যাংকে চাকুরীরত এর বাসায় অপর একজন আইনজীবীর সমন্বয়ে শালিস দরবারে প্রাপ্য ৮ লাখ টাকা হতে ৪ লাখ টাকা ফেরতের শর্তে মানব পাচার মামলা তোলে নিতে অনুরোধ করে। হৃদয় বাবু ঐ সময় ৪০ হাজার টাকা ফেরত এবং বাকি টাকা মামলা তুলে নেয়ার পর দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

মামলা তুলে নিয়ে আপোষের শর্ত অনুযায়ী ২১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ হৃদয় বাবুর আমলাপাড়ার বাসায় প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে বাকবিতন্ডতা এবং উল্টো তার কাছে টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে মাসুম ও তাদের ৪ ভাই সহ ৬ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ সৃষ্টি করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানায়, মামলা নং- ৪৪, তারিখ ২৪/০৬/২৪ইং দায়র করে। মামলায় জামিনে গেলে হৃদয় বাবু আবারো মিথ্যা অজুহাতে তাদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি নং- ৩৪০৫, তারিখ ৩১/১০/২৪ ইং। এভাবেই প্রতারিত হওয়া মাসুম সরদার ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে হৃদয় বাবু। তিনি প্রতারক হৃদয় বাবুর বিচার দাবি, টাকা ফেরত এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

পোল্যান্ডে পাঠানোর নামে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি

Update Time : ০৮:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সোনার হরিণ বিদেশ (পোল্যান্ড) পাঠানোর নামে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাল্টা মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী মাসুম সরদার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

মাসুম সরদার বলেন, তিনি ময়মনসিংহ নগরীর গোলপুকুর পাড়ে পুরাতন লোহার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। নগরীর দূর্গাবাড়ি, আমলাপাড়াস্থ এডভোকেট আব্দুল বারীর ছেলে ইয়াসির বারী ওরফে হৃদয় বাবু ওরফে ইয়াসির বারী আল আহাদ তার পূর্ব পরিচিত। ২০২০ ইং সালে সে তার (মাসুম) এর দোকানে আসা যাওয়ার এক পর্যায়ে তার সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে থাকে।

আলাপ চারিতায় সে নিজেকে ৩২ তম বিসিএস ক্যাডার এবং সিনিয়র সহকারী কমিশনার (কাস্টম) পরিচয় দেয় এবং তার আইডি কার্ড ও ইউনিফর পরা ছবি দেখায়। সে প্রায়ই ছুটিতে ময়মসসিংহ আসেন।ডিজিএফআই ও এনএসআই এর সাথে তার জরুরী মিটিং আছে বলেও তিনি দাবি করেন। তার স্ত্রী হাবিবা খাতুন (লিডা) ঢাকার বনানীতে এশিয়ান ট্রাভেল গুরু নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলে জানায়।

কৌশলে উচ্চ বিলাসিতার গল্প শুনিয়ে তিনি বৈধভাবে তাকে বিদেশ তথা পোল্যান্ড পাঠানোর প্রস্তাব দেয় এবং বলে অন্যদের থেকে ১৫/২০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এলাকার মানুষ বিধায় তার থেকে ১১ লাখ টাকা নিবে। প্রস্তাবে রাজি হলে পাসপোর্টে ভিসা লাগানোর কথা বলে তিনি মাসুমকে তার নিজের (মাসুমের) খরচে ইন্ডিয়া ভ্রমনে যায়। কিছুদিন পর পোল্যান্ডে ওর্য়াক পারমিট হয়েছে এবং উজবেকিস্তান যাওয়ার পর সেখান থেকে পোল্যান্ডের ভিসা হবে।

তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাবু প্রথমে পাসপোর্ট ও নগদ এক লাখ টাকা নেয়। এরপর ইন্ডিয়া, উজবেকিস্তান ও পোল্যান্ডের ভিসার আবেদনের জন্য এবং বিমানের টিকেট বাবদ পর্যায়ক্রমে হাতে হাতে ২ লাখ টাকা এবং ডকুমেন্ট সহ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এভাবে ইয়াসির বারী ওরফে হৃদয় বাবু পোল্যান্ড পাঠানোর নামে মাসুমের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং বাকি টাকা পোল্যান্ড পৌছার পর দিতে বলে।

বিসিএস ক্যাডার ও কাস্টমস কর্মকর্তা এবং স্ত্রীর নামে ট্রাভেল এজেন্সি থাকার কথায় মাসুম আশস্থ হয়ে কয়েক দফায় ৮ লাখ টাকা দেয়। পরে মাসুম সরদারকে ৩১/১২/২০২০ ইং তারিখ ইন্ডিয়া পাঠায় এবং ০৮/০১/২০২১ ইং তারিখ ইন্ডিয়া থেকে উজবেকিস্তানে পাঠায়। উজবেকিস্তানে এক মাস থাকার পর পোল্যান্ডে পৌঁছাবে বলে তাকে আশ্বস্থ করে ইয়াসির বারী। কান্নাজড়িত কন্ঠে মাসুম সরদার বলেন, উজবেকিস্তানে দুই মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করে পোল্যান্ডের ভিসা করতে না পেরে সব হারিয়ে তিনি সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করেন।

নিরুপায় হয়ে তিনি বাবুর কাছে টাকা ফেরত চাইলে টাকা দিবে না বলে হুমকী দিতে থাকে। তুই কিভাবে দেশে আসবি দেখে নেব। মাসুম আরো বলেন, এভাবে ৬ মাস উজবেকিস্তানে মানবেতর জীবন যাপনশেষে পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি দেশে আসেন। দেশে এসে তার সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করে সারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মাসুম ভাটারা (ডিএমপি) থানায় ইয়াসির বারী উরফে হৃদয় বাবু উরফে আল আহাদ ও তার স্ত্রী হাবিবা খাতুন এবং দালাল চক্রের সদস্য সহ ৬ জনের নামে মামলা করেন। ভাটারা (ডিএমপি) থানার মামলা নং- ৪৮, তারিখ ২৪/০৬/২১ ইং, ধারা- মানব পচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬(২), ৭/৮(১)/১০(১)। মামলাটি ঢাকা সিআইডি পুলিশ তদন্তকালে ইয়াসির বারী উরফে হৃদয় বাবু ও তার স্ত্রী সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। চক্রটি দীর্ঘদিন জেল হাজতশেষে জামিনে মুক্তি পায়।

সিআইডি পুলিশ ১৭/১৩/২০২৩ তারিখে মামলার চার্জশীট জমা দিলে হৃদয় বাবুর আত্মীয় স্বজন তার বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ পিতার দোহাই দিয়ে তার খালাতো ভাই সোহেল রুপালী ব্যাংকে চাকুরীরত এর বাসায় অপর একজন আইনজীবীর সমন্বয়ে শালিস দরবারে প্রাপ্য ৮ লাখ টাকা হতে ৪ লাখ টাকা ফেরতের শর্তে মানব পাচার মামলা তোলে নিতে অনুরোধ করে। হৃদয় বাবু ঐ সময় ৪০ হাজার টাকা ফেরত এবং বাকি টাকা মামলা তুলে নেয়ার পর দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

মামলা তুলে নিয়ে আপোষের শর্ত অনুযায়ী ২১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ হৃদয় বাবুর আমলাপাড়ার বাসায় প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে বাকবিতন্ডতা এবং উল্টো তার কাছে টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে মাসুম ও তাদের ৪ ভাই সহ ৬ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ সৃষ্টি করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানায়, মামলা নং- ৪৪, তারিখ ২৪/০৬/২৪ইং দায়র করে। মামলায় জামিনে গেলে হৃদয় বাবু আবারো মিথ্যা অজুহাতে তাদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি নং- ৩৪০৫, তারিখ ৩১/১০/২৪ ইং। এভাবেই প্রতারিত হওয়া মাসুম সরদার ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে হৃদয় বাবু। তিনি প্রতারক হৃদয় বাবুর বিচার দাবি, টাকা ফেরত এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।