Dhaka ১১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি: ৬ জেলের কারাদন্ড, গ্রেফতার ২

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় সীমান্ত চোরাচালান, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, অবৈধ ভাবে মৎস্য শিকার, নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর বিক্রি করাসহ নানান অপরাধ প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে থেকে ২জনকে গ্রেফতার করাসহ হাওর থেকে আটককৃত ৬জন জেলেকে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার (১লা ডিসেম্ভর) ভোর থেকে উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা, টেকেরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছনসহ নিলাদ্রী লেড়পাড় দিয়ে কয়লা পাঁচার করে নিলাদ্রী লেকপাড়ে অবস্থিত সোর্সদের ১৫টি ডিপুতে মজুত করাসহ এই সীমান্তের বুরুঙ্গা ছড়া এলাকা দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে পাচাঁর করে জয় বাংলা বাজারের বাঁশের ব্রিজের পাশে ও সোর্সদের বাড়িতে মজুত করা হচ্ছে। অন্যদিকে সকাল ৬টা থেকে পাশের লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪শতাধিক লোক দিয়ে পাথর পাচাঁর শুরু হয়। পাচাঁরকৃত পাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে বিজিবি ক্যাম্প ও লাউড়গড় বাজারের চারপাশে ওপেন মজুত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

এরআগে গতকাল শনিবার (৩০শে ডিসেম্ভর) রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লাউড়গড় বডার বাজারের ৩শ গজ পূর্ব দিকে ৭০-৮০জন লোক দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ২০লাখ টাকা মূল্যের ফুছকা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে শাহ আরেফিন মাজার এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে মজুত করেছে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারীরা। তারআগে রাত ১১টা থেকে জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতের ভিতর থেকে ৩শতাধিক বারকি নৌকা দিয়ে কয়লা, পাথর, চিনি ও মদ পাচাঁর করাসহ পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর এলাকা দিয়ে ফুছকা ও চিনি পাচাঁর করে মোটর সাইকেল দিয়ে বাদাঘাট বাজারে নিয়ে যায় সোসরা।

অপরদিকে সন্ধ্যা ৭টায় টাংগুয়ার হাওরে অবৈধ ভাবে মাছ শিকারের অপরাধে আটককৃত জেলে বাদশা মিয়া (২৭), হাবিবুর রহমান (২৯), বদিউজ্জামাল (৪৭), মিরাজ আলী (৩৫), ফরহার মিয়া (২৮) ও কামরুজ্জামান (৩৮) কে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৫দিন করে কারাদন্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম। পরে কারাদন্ড প্রাপ্ত জেলেদের রাতেই থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরআগে বিকেলে টাংগুয়ার হাওরে বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করার সময় অভিযান চালিয়ে ৬জন জেলেকে গ্রেফতার করাসহ তাদের ৫লাখ টাকা মূল্যের ৩হাজার মিটার জাল উদ্ধার করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবার (২৯শে ডিসেম্ভর) সন্ধ্যার পর থেকে লাউড়গড় সীমান্তের লাউড়গড় বাজার, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, মোদেরগাঁও, মানিগাঁও, আদর্শগ্রাম, বড়টেক, গাগটিয়া, ঘাগড়া এলাকায় শতশত ড্রোজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে জাদুকাটা নদীর দুই তীর কেটে বালি ও পাথর বিক্রি শুরু হয়। এখবর পেয়ে রাত ৩টায় সুনামগঞ্জের টুকের বাজার নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামে অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ী সাব্বির মিয়া (৩৫) ও ছয়ফুল মিয়া (৩৮) কে গ্রেফতার করে। এঘটনার পর শনিবার (৩০শে ডিসেম্ভর) দুপুরে গ্রেফতারকৃত ২জনকে থানায় হস্থান্তর করে নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি জাদুকাটা নদীতে বালি ও পাথর খেকোদের তান্ডব। তবে লাউড়গড় ও টেকেরঘাট সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করলে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারীদের কোটিকোটি টাকা মূল্যের অবৈধ পাথর ও কয়লাসহ তাদের অবৈধ অর্থ-সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জের টুকের বাজার নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন ও তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হোসেন পৃথক অভিযান চালিয়ে ৮জন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবেনা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহিরপুরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি: ৬ জেলের কারাদন্ড, গ্রেফতার ২

Update Time : ০৫:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় সীমান্ত চোরাচালান, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, অবৈধ ভাবে মৎস্য শিকার, নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর বিক্রি করাসহ নানান অপরাধ প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে থেকে ২জনকে গ্রেফতার করাসহ হাওর থেকে আটককৃত ৬জন জেলেকে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার (১লা ডিসেম্ভর) ভোর থেকে উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা, টেকেরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছনসহ নিলাদ্রী লেড়পাড় দিয়ে কয়লা পাঁচার করে নিলাদ্রী লেকপাড়ে অবস্থিত সোর্সদের ১৫টি ডিপুতে মজুত করাসহ এই সীমান্তের বুরুঙ্গা ছড়া এলাকা দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে পাচাঁর করে জয় বাংলা বাজারের বাঁশের ব্রিজের পাশে ও সোর্সদের বাড়িতে মজুত করা হচ্ছে। অন্যদিকে সকাল ৬টা থেকে পাশের লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪শতাধিক লোক দিয়ে পাথর পাচাঁর শুরু হয়। পাচাঁরকৃত পাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে বিজিবি ক্যাম্প ও লাউড়গড় বাজারের চারপাশে ওপেন মজুত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

এরআগে গতকাল শনিবার (৩০শে ডিসেম্ভর) রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লাউড়গড় বডার বাজারের ৩শ গজ পূর্ব দিকে ৭০-৮০জন লোক দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ২০লাখ টাকা মূল্যের ফুছকা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে শাহ আরেফিন মাজার এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে মজুত করেছে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারীরা। তারআগে রাত ১১টা থেকে জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতের ভিতর থেকে ৩শতাধিক বারকি নৌকা দিয়ে কয়লা, পাথর, চিনি ও মদ পাচাঁর করাসহ পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর এলাকা দিয়ে ফুছকা ও চিনি পাচাঁর করে মোটর সাইকেল দিয়ে বাদাঘাট বাজারে নিয়ে যায় সোসরা।

অপরদিকে সন্ধ্যা ৭টায় টাংগুয়ার হাওরে অবৈধ ভাবে মাছ শিকারের অপরাধে আটককৃত জেলে বাদশা মিয়া (২৭), হাবিবুর রহমান (২৯), বদিউজ্জামাল (৪৭), মিরাজ আলী (৩৫), ফরহার মিয়া (২৮) ও কামরুজ্জামান (৩৮) কে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৫দিন করে কারাদন্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম। পরে কারাদন্ড প্রাপ্ত জেলেদের রাতেই থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরআগে বিকেলে টাংগুয়ার হাওরে বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করার সময় অভিযান চালিয়ে ৬জন জেলেকে গ্রেফতার করাসহ তাদের ৫লাখ টাকা মূল্যের ৩হাজার মিটার জাল উদ্ধার করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবার (২৯শে ডিসেম্ভর) সন্ধ্যার পর থেকে লাউড়গড় সীমান্তের লাউড়গড় বাজার, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, মোদেরগাঁও, মানিগাঁও, আদর্শগ্রাম, বড়টেক, গাগটিয়া, ঘাগড়া এলাকায় শতশত ড্রোজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে জাদুকাটা নদীর দুই তীর কেটে বালি ও পাথর বিক্রি শুরু হয়। এখবর পেয়ে রাত ৩টায় সুনামগঞ্জের টুকের বাজার নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামে অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ী সাব্বির মিয়া (৩৫) ও ছয়ফুল মিয়া (৩৮) কে গ্রেফতার করে। এঘটনার পর শনিবার (৩০শে ডিসেম্ভর) দুপুরে গ্রেফতারকৃত ২জনকে থানায় হস্থান্তর করে নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি জাদুকাটা নদীতে বালি ও পাথর খেকোদের তান্ডব। তবে লাউড়গড় ও টেকেরঘাট সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করলে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারীদের কোটিকোটি টাকা মূল্যের অবৈধ পাথর ও কয়লাসহ তাদের অবৈধ অর্থ-সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জের টুকের বাজার নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন ও তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হোসেন পৃথক অভিযান চালিয়ে ৮জন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবেনা।