রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হঠাৎ করেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ জন। তবে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার হতে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হঠাৎ করে উপজেলার সদর গোল্লাপাড়া হাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাজারের বড় বড় দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন সরবরাহ না থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক লিটার বোতলজাত তেলের মূল্য ২০০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৯০/১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থান ভেদে ২০০ করেও নেয়া হচ্ছে। তাই অনেকেই ধারণা করছেন, বোতলজাত সয়াবিন তেল খুলে খোলা ভাবে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
গত সোমবার রাজা নামের এক ব্যক্তি জানান, কয়েক দোকানে খোঁজ করার পরও মিলেনি বোতলজাত তেল। রাতে ক্ষুদ্র এক দোকানির কাছে পেয়েছি। দু লিটার তেল ৪০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
মঙ্গলবার গোল্লাপাড়া হাটে বাজার সহ নানা জাতীয় সবজি কিনতে আসেন ইমরান। তিনি জানান শীত কালে সবজির সরবরাহ থাকলেও চড়া দাম। কিন্তু বাজারের কোন দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পায়নি। অনেক খোজাখুজির পর আধস কেজির একটি বোতল পেয়েছি। বাজার মনিটরিং না থাকার কারনে ইচ্ছে মত চলছে সিন্ডিকেট।
মফিজ নামের আরেক ব্যক্তি জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেল পায়নি। বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনেছি। ২০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে তেল।,
রাব্বি নামের এক মুদি দোকানি জানান, আমি প্রায় ১৫ দিন ধরে ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইকারি কিনেছি ৩৫০/৩৬০ টাকা করে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে পাচ্ছিনা। মঙ্গলবার বারে থানা মোড়ের এক দোকানির কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনেছি ৯৫ টাকা দিয়ে।
তিনি জানান হঠাৎ করেই বাজার হতে বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হয় কিভাবে? বাজার ঠিকভাবে মনিটরিং করলে এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না।
অপর এক ক্রেতা আলমগীর হোসাইন বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে গেলে বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনতে হচ্ছে।দোকানের এক কর্মচারী জানান, প্রায় ৭ দিন হতে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ না থাকায় এখন খোলা তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বোতল জাত তেল সরবরাহ না থাকায় খোলা তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্য তেলের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে ১৬ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপনীয় ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে কেবল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট চালু রয়েছে।
টিসিবির ডিলার উজ্জ্বল জানান, আগামীকাল থেকে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে। কিন্তু তেল বাদে। কারন হিসেবে তিনি জানান, কোনভাবেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। শুধু আমি না কোন ডিলার তেল পায়নি। একারনে দেয়া যাচ্ছে না।
সুত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে বিভিন্ন ভাবে বেকায়দায় ফেলতে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বোতলজাত সয়াবিন তেল গায়েব করা হয়েছে। কিন্তু যারা বাজার মনিটরিং করে তারাও গা ছাড়া হয়ে আছেন। কেউ কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে রাজি না। অবস্থা দেখে মনে হয় তাদের কোন দায়িত্ব নেই। আসলে প্রতিটি জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরেরা বহাল তবিয়তে আছে। সুতরাং সরকার কে প্রশ্ন বিদ্ধ এবং সাধারণ মানুষ কে ফুঁসিয়ে তুলতে নানা রকম চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এসব শক্ত হাতে দমন করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম জানান, আমি শুনছি বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা নিয়ে তেমন কিছু করার নেই। তবে কোন দোকানি মজুদ করে রাখলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।