শনিবার দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে পাইকগাছা থানায় করা মামলায় এজাহার ভুক্ত আসামি, চরমপন্থী দলের সদস্য ও আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের সংঘটিত করে বিএনপি নেতা ও চরমপন্থী দলের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু নেতৃত্বে নাছিরপুর সরকারী খাল দখল ও মাছ লুটের ঘটনার পর শতাধিক সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভুঁড়িভোজের আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুপুরে বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা ডাবলুর ভাই কথিত যুবদল কর্মী আজাদের নেতৃত্বে নাছিরপুর খালের মাছ লুট হচ্ছে এমন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এঘটনা এলাকায় প্রচার হলে ঐদিন সন্ধ্যায় কপিলমুনি ফাঁড়ি পুলিশ স্থানীয় লোক ও কয়েকজন যুবদল কর্মী ঘটনার সত্যতা যাচায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ডাবলুর সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশের সামনেই তাদের উপর আক্রমণ করে। এসময় যুবদল কর্মী হোসেন মল্লিকের মাথা ও পিঠে মারাত্মক জখম সহ রডের আঘাতে ডান হাত ভেঙে যায় এবং বাক্কার আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে আহত হোসেন মল্লিককের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
উপজেলার কপিলমুনি নাছিরপুর এলাকার মৃত আফসার মল্লিকের ছেলে হোসেন মল্লিক প্রতিবেদককে বলেন, তিনি নাছিরপুর এলাকার ভাই ভাই কৃষিবিপনীর মালিক। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রদলে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যবসায় মনযোগ দেন। তিনি আরো জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা নাজমুল ও কামরুল ছাত্রদের ওপর হামলা করেন। ওই হামলার ঘটনায় তাদের নামে থানায় মামলা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় ওই হামলার অন্যতম আসামি কামরুল ও নাজমুলকে গ্রেফতারে পুলিশ উপজেলার তালতলা এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে যাওয়ার আগে কপিলমুনি ফাঁড়ির ৪জন পুলিশ সদস্য আসামিকে চিনিয়ে দিতে হোসেন মল্লিকসহ শফিয়ার মোড়ল ও বাক্কার মোড়লকে সঙ্গে নেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ও নাজমুলের সঙ্গে লোকজন বেশি দেখে ২জন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। বাকী ২জন ঘটনাস্থলে থেকে যান। কিন্ত হোসেন মল্লিকের মোটরসাইকেল স্টাট না নেওয়ায় তিনিসহ আরও ১জন ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ও নাজমুল তাদের দল পরিবর্তন করে। তারা বর্তমানে কপিলমুনি ইউনিয়নের বিএনপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য শাহাদাৎ হোসেন ডাবলুর আর্শীবাদ পুষ্ট। চেয়ারম্যান ডাবলু ও তার ছোট ভাই আজাদ ছাত্রলীগের ওই ২ জনকে দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘের লুটপাট করিয়েছে। আরো জানান, শনিবার সন্ধ্যায় নাজমুল ও কামরুল বাহিনীর হাতে দেশী ও বিদেশী অস্ত্র ছিল। তারা রড, লোহার পাইপ ও বিভলবর দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। আঘাতে তার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে ও বামপাশে কান ও মাথায় ৫ সেলাই লেগেছে। বাক্কার মোড়লের অবস্থা তেমন খারাপ না হওয়ায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পাইকগাছা থানা যুবদলের সভাপতি তহিদুজ্জামান মুকুল বলেন, নাজমুল ও কামরুল ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। কোন ঘটনার প্রতিবাদ করলেই নেমেই আসত নির্মম নির্যাতন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে তারা আগের রুপ পরিবর্তন করে সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলুর অনুসারি হয়েছেন। তাদের দিয়ে তিনি এলাকার বিভিন্ন ঘের দখল ও বাজার লুট করছেন। শনিবার নাছিরপুর এলাকার সরকারি একটি খাল দখল করেছেন। সেখানে তিনি ৪টি ভেড়া ও এলাকার লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান। সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু এপ্রতিবেদককে বলেন, নাছিরপুর এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। নাজমুল ও কামরুলকে তিনি তাদের চেনেন না বলে দাবী করেন। তাছাড়া তিনি কোন ঘের বা খাল দখলের সাথে কোন সময়ে জাড়িত নন।
এদিকে পাইকগাছা থানার ওসি তদন্ত তুষার কান্তি দাস পুলিশের সামনে হামলার এ ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ছাত্রদের করা মামলার আসামি নাজমুল ও কামরুলের অবস্থান জানতে পেরে পুলিশ তালতলা এলকায় অভিযান চালায়। ফিরে যাওয়ার পথে নাছিরপুর এলাকার একটি সরকারি খাল দখল নিয়ে দু’পক্ষের হামলার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে যায়। তাদের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা করে। ওই সময়ে হোসেন মল্লিকসহ আর ১জন গুরুতর আহত হয়। পুলিশ তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়। আহতদের মধ্যে হোসেন মল্লিকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে থানায় এখনও পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।