গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাটি খেঁকোদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাকের চাপায় এক নারী পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনার পর ঘাতক ড্রাম ট্রাকে আগুন জ¦ালিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে অচীরেই অবৈধ মাটি ব্যবসা ও তাদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নিহত হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার পূর্ব চাঁনপুর এলাকার নাহিদ দেওয়ানের স্ত্রী শেফালী খাতুন (৩৫)। তিনি স্থানীয় এসেনসিয়াল ক্লোথিং লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেঁকোরা। তাদের ব্যবহৃত ড্রাম ট্রাক ওভারলোড ভর্তি নিয়ে চলাচল করা ভেঙ্গে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সড়ক ও ছোট-বড় কালভার্ট। এছাড়াও মাটি খেঁকোদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত ও নিহত হয়েছেন অনেক মানুষ। অবৈধভাবে মাটি খনন বন্ধের জন্য গত ১১ ডিসেম্বর nএলাকাবাসীর পক্ষে শাহাবুল সিকদার নামে এক ব্যক্তি উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে ফরহাদ হোসেন, আলাল উদ্দিন, রুবেল বাদশা, সুজন খান, ওয়াসিম খান, ইউসুফ মিয়া, জহির মুন্সি, আলহাজ সরকারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মাটি খেঁকোরা সন্ধ্যা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত তাদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাক চালায়। কিন্তু গত বুধবার রাত ৯টার দিকে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৌচাক- ফুলবাড়িয়া সড়কের আকুলিচালা এলাকায় পৌছলে নারী শ্রমিক শেফালী মাটি খেঁকোদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাকের চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ দুর্ঘটনার পর ওই ঘাতক ট্রাকের চালক ও সহযোগী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতা ঘাতক ড্রাম ট্রাকে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়।
পরে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ট্রাকের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের কাছে নিহতের লাশ হস্তাস্তর করে ফায়ার সার্ভিস। এ দুর্ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের স্বামী নাহিদ দেওয়ান বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি খেঁকোদের ড্রাম ট্রাক যেন এড়োপ্লেনের গতি চলে, রাত হলেই ওদের রাজত্ব। তাদের কাছে সবাই যেন বন্ধী। তবে অচীরেই অবৈধ মাটি ব্যবসা ও তাদের বেপরোয়া ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযুক্তদের মধ্যে সুজন খান জানান, আমরা মাটি কাটি না, আমাদের ট্রাক চাপায় কেউ মারা যায়নি। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখকুক। যদি প্রশাসন আমাদের সম্পৃক্ততা পায়, তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কোনো আপত্তি থাকবে না।
কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মহিদুল ইসলাম জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও ঘাতক চালক ও সহযোগি পালিয়ে গেলেও পুড়ে ফেলা ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি শুনেছি। তবে মাটি কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।