রাজশাহীর তানোরে পানির দরে গীর্জার বরাদ্দ কৃত চাল কিনছেন সিন্ডিকেট চক্র বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় আ”লীগ নেতা সুনিল যে ভাবে সিন্ডিকেট করতেন ঠিক একই ভাবে বিএনপির নেতাদের ম্যানেজ করে গীর্জার চাল কিনছেন। শুধু সুনিল না কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি আ”লীগের সম্পাদক সুফি কামাল মিন্টু ওই ইউপিসহ পাশ্ববর্তী গীর্জার চাল সিন্ডিকেট করে কিনেছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। প্রতি টন চাল কিনছেন ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বা ৩৮/৪০ টাকা কেজি দরে। অথচ বাজারে নিম্ন মানের চাল ৫০ টাকা কেজির উপরে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে বর্তমান সরকার নানা পরিকল্পনা নিলেও খাদ্য দপ্তরে স্বৈরাচারী ভূত উত পেতে বসে আছেন। আর এসব সিন্ডিকেট চক্রকে সহায়তা করে আসছে খোদ খাদ্য অফিসারসহ অসাধু কর্মচারীরা। কারন খাদ্য অফিসের সামনেই ডিও কেনা বেচা হলেও কোন প্রতিকার নেই। ফলে দ্রুত খাদ্য দপ্তর থেকে স্বৈরাচার ভূত সরাতে না পারলে কোনভাবেই সিন্ডিকেট দূর হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর খৃস্টীয় ধর্মের বড় দিন উদযাপনের জন্য প্রতি গীর্জায় ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় বর্তমান সরকার। সেই চালের ডিও গত বৃহস্পতিবার থেকে দেয়া শুরু করে খাদ্য অফিস। এসব চালের ডিও গীর্জার সভাপতি ও সম্পাদক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দেয়া হয়। ডিও কিনতে সকাল থেকে খাদ্য অফিসের সামনে টাকার ব্যাগ নিয়ে বসেন আ”লীগ নেতা দীর্ঘ দিনের খাদ্য গুদাম সিন্ডিকেটের মুল হোতা সুনিল ও সাবেক লেবার সরদার নাজিমুদ্দিন। ডিও নিয়ে অফিস থেকে বের হতেই ধরে বসছেন ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মিজান। ডিওতে ৫০০ কেজি চাল উল্লেখ করা হয়। এসব ডিও গুলো ১৯ হাজার টাকায় কিনছেন সুনিল গং। যার প্রতি কেজি ৩৮ টাকা করে পড়ছে। শুধু সুনিল না কামারগাঁ ইউপির বিনা ভোটের চেয়ারম্যান আ”লীগ নেতা সুফি কামাল মিন্টু ১৮/২০ টির মত ডিও কিনেছেন কামারগাঁ বসেই। তিনিও খাদ্য দপ্তর ও কামারগাঁ গুদামের কর্তাদের ম্যানেজ করে কিনেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সে ৪০ টাকা কেজি দরে বা ৪০ হাজার টাকা টন করে কিনেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, উপজেলায় ১২৭ টি গীর্জা রয়েছে। গীর্জা প্রতি ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই হিসেবে ৬৩ হাজার ৫০০ কেজি বা ৬৩.৫ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। খাদ্য গুদামে সরকারি ভাবে চাল সংগ্রহ হয় ৪৫ টাকা কেজি দরে। হিসেব করলে প্রতি কেজিতে ৫/৭ টাকা করে লাভ করবেন সিন্ডিকেট চক্র। কেজি প্রতি ৬ টাকা করে লাভ ধরলে ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা সিন্ডিকেট চক্রের পকেটে। কারন এসব চাল গুদাম থেকে বের হবে না। রোপা আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহ হিসেবে দেখানো হবে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।
বেশকিছু ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে ৩৮ বা ৪০ টাকা কেজিতে গরুকে খাওয়ানো খুদও পাওয়া যায় না। বাজারে কোথাও ৫০ টাকা কেজি দরে চাল পাওয়া যাবে না। বর্তমানে চালের বাজার ঊর্ধ্বমূখী। আর খাদ্য দপ্তরের সহায়তায় সিন্ডিকেট করে ৩৮ কেজি দরে কিনা হয়েছে। বরাদ্দের চাল কোনভাবেই গুদাম থেকে বের হবে না। শুধু এখানেই না সারা দেশে বরাদ্দ কৃত চাল নিয়ে সিন্ডিকেট করেন গুদাম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। শুধু কাগজ কিনা বেচা হয়। বিগত সময়ের মতই খাদ্য দপ্তরে স্বৈরাচারী ভূত বসে আছে। খোলস পাল্টিয়ে সবাই একাকার করে সিন্ডিকেট শুরু করেছেন।
গীর্জা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সরকারি ভাবে চাল বড় দিনের আগে বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু কখনোই গুদাম থেকে চাল তুলতে পারিনা। রাজনৈতিক সরকার নেই। কিন্তু সিন্ডিকেট চক্র সচল। এবার মনে করেছিলাম গুদাম থেকে চাল বের করে বাজার দরে বিক্রি করত পারব। কিন্তু অফিস থেকেই বলে দেয়া হচ্ছে ডিও কার কাছে বিক্রি করতে হবে। আমরা চাল কিনে খায়। বাজারে ৫০ টাকায় এক কেজি চাল পাওয়া যায় না। অথচ ৩৮ টাকা কেজিতে গীর্জার চাল বিক্রি করতে বাধ্য করেছে কর্তা বাবুরা। কিছুই করার নেই আগেও যারা সিন্ডিকেট করে কিনেছেন এখনো তারাই কিনছেন। কিছুই বলার নাই।
উপজেলা খাদ্য অফিসার শেখ মনিরুজ্জামান সজিবের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান এসব বিষয়ে পিআইও ভালো বলতে পারবেন। আপনার অফিসের সামনেই ডিও কেনা বেচা হচ্ছে জানতে চাইলে কোন সদ উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে একই কথা বলে দায় সারেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি মিটিংয়ে আছি। এবিষয়ে পিআইওর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
পিআইও আল মামুনের মোবাইলে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। যার কারনে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।